Birthplace of Chaitanya Mahaprabhu

শ্রীচৈতন্যের জন্মস্থান মায়াপুর নয়! কী জানাচ্ছে ইতিহাস? কোথায় জন্মেছিলেন মহাপ্রভু?

দোলপূর্ণিমার তিথিতেই জন্মেছিলেন চৈতন্যদেব। তাঁর অন্তর্ধানের মতো তাঁর জন্মস্থান নিয়েও নানা মুনির নানা মত। কী জানাচ্ছে সাড়ে ৫০০ বছরের ইতিহাস?

Advertisement

রাজা পোদ্দার

শেষ আপডেট: ১৪ মার্চ ২০২৫ ১২:১৬
Share:

ছবি: সংগৃহীত।

‘নবদ্বীপ হেন গ্রাম ত্রিভুবনে নাঞি।

Advertisement

যহিঁ অবতীর্ণ হৈলা চৈতন্য-গোসাঞি।।’

‘চৈতন্য ভাগবত’/ বৃন্দাবনদাস-প্রণীত

Advertisement

কলকাতা বিমানবন্দর চত্বরে ইসকনের একটি বিজ্ঞাপনে লেখা আছে, “মায়াপুর দ্য বার্থপ্লেস অফ শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু”। এই কথাটি কেবল কলকাতা বিমানবন্দরে নয়, মায়াপুর এবং তৎসংলগ্ন বিভিন্ন এলাকাতেই লেখা আছে। বেশ কিছু বছর যাবৎ এই মায়াপুরকে শ্রীচৈতন্যের জন্মস্থান বলে বিরাট ধুমধাম করে প্রচার করা হচ্ছে।

কিন্তু মায়াপুর কি সত্যিই চৈতন্যদেবের জন্মস্থান? ‘চৈতন্য ভাগবত’-সহ বিভিন্ন চৈতন্য জীবনীগ্রন্থগুলিতে যেখানে মহাপ্রভুর জন্মস্থান নবদ্বীপ বলে উল্লেখিত আছে, সেখানে হঠাৎ কী ভাবে মায়াপুরের নাম তাঁর জন্মের সঙ্গে জুড়ে গেল? কেনই বা গেল? ইতিহাস কী বলে?

১৮৯০-৯৪ ক্রিস্টাব্দ পর্যন্ত নবদ্বীপ যে চৈতন্য মহাপ্রভুর জন্মস্থান, তা নিয়ে কোনও বিরোধ ছিল না। এই বিরোধ তৈরি হল কেদারনাথ দত্তের হাত ধরে।

ছবি: সংগৃহীত।

কে এই কেদারনাথ দত্ত?

কেদারনাথ দত্ত ছিলেন ইংরেজ আমলের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট এবং ডেপুটি কালেক্টর। বৈষ্ণব শাস্ত্রের অগাধ পণ্ডিত মানুষটি বৈষ্ণব ধর্মে দীক্ষাগ্রহণের জন্য নবদ্বীপের গোসাঁইদের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। কিন্তু নবদ্বীপের গোসাঁইরা তাঁকে দীক্ষা দিতে রাজি হননি। সম্ভবত কায়স্থ হওয়ার কারণেই নবদ্বীপের গোস্বামীরা তাঁকে দীক্ষা দিতে রাজী ছিলেন না। নবদ্বীপের গোস্বামীদের থেকে প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর ১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ তিনি বাঘনাপাড়ার বিপিনবিহারী গোস্বামীর কাছে দীক্ষা গ্রহণ করেন। সেখানকার বলদেব-কৃষ্ণ মন্দিরের গোস্বামীদের কাছ থেকে তিনি ‘ভক্তিবিনোদ’ উপাধি পান। ভক্তিবিনোদ উপাধি লাভ করার পর তিনি নবদ্বীপের অদূরে ভাগীরথীর অপর পারে জমি কিনে সেই স্থানকে ‘মায়াপুর’ বলে ঘোষণা করে নিজের স্বার্থসিদ্ধির কাজে লেগে পড়েন।

এর আগে ‘মায়াপুর’ বলে কোনও জায়গার অস্তিত্ব ছিল না। গঙ্গার পূর্ব পারের অংশের নাম ছিল মিঞাপুর। মুসলিম অধ্যুষিত এই এলাকাটি ছিল চাঁদ কাজির সমাধিস্থল। মূলত দরিদ্র মুসলিম মৎস্যজীবীদের বাস ছিল এই এলাকায়। তৎকালীন বিভিন্ন সরকারি নথি, জরিপের নকশায় এই এলাকার নাম মিঞাপুরই ছিল। ১৮৫৪ খ্রিস্টাব্দের রেভিনিউ সার্ভে মানচিত্রে বা ১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দের ‘ভিলেজ ডাইরেক্টরি অফ নদিয়া’-তে এই স্থানের নাম মিঞাপুর বলেই উল্লেখিত আছে।

ছবি: সংগৃহীত।

কেদারনাথ মিঞাপুর এলাকাকে মায়াপুর নাম দিয়ে চৈতন্যের জন্মস্থান বদলে দিতে চাইলেন কেন?

বিশিষ্ট রাঢ়বঙ্গ তথা নবদ্বীপ গবেষক যজ্ঞেশ্বর চৌধুরীর মতে, “নবদ্বীপের গোস্বামীগণের দ্বারা প্রত্যাখ্যাত হওয়ার অপমানে প্রতিশোধস্পৃহা চরিতার্থ করতে কেদারনাথ এই কর্মটি করেছিলেন। ইংরেজ সরকারের কাছের মানুষ হওয়ার কারণে তিনি ছিলেন প্রবল প্রভাবশালী। ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট এবং ডেপুটি কালেক্টর হওয়ায় এই কাজটি তাঁর পক্ষে সহজ হয়েছিল।”

পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করার জন্য উঠেপড়ে লাগলেন কেদারনাথ। ১৮৯৪ সালের ২ মাঘ, রবিবার কৃষ্ণনগর এভি স্কুলে একটি সভা ডাকলেন তিনি। সেখানে উপস্থিত ছিলেন শহরের বিশিষ্ট মান্যগণ্য ব্যক্তিরা। সেই সভায় এক বিচিত্র স্বপ্নাদেশের কথা শোনালেন তিনি। জানালেন, তিনি ভেবেছিলেন যমুনাতীরে বৃন্দাবনে একটু স্থান করে তিনি সাধন-ভজন করবেন। এক সময়ে তারকেশ্বরে থাকাকালীন রাত্রে শয়নকালে প্রভু তাঁকে স্বপ্নে বলেছেন, “তুমি বৃন্দাবনে যাইবে, তোমার গৃহের নিকটবর্তী নবদ্বীপধামে যে কার্য আছে তাহা কী করিলে?” সে যাত্রায় তিনি ফিরে এসে নবদ্বীপ পরিক্রমা করেন এবং প্রভুর লীলাস্থান পরিক্রমা করে কিছু না পেয়ে ব্যথিত হন। এক রাত্রে তিনি, তাঁর পুত্র কমল এবং এক কেরানি ছাদের উপর উঠে চারিদিকে দৃষ্টিপাত করলে গঙ্গার উত্তর পারে এক আলোকময় অট্টালিকা দেখতে পান। দেখেন, সেখানে একটি তালগাছ আছে। পরে সেই স্থান ভ্রমণ করে জানতে পারেন, সেখানে বল্লাল দিঘি নামে এক জলাশয় ছিল। তিনি আবার প্রভুর স্বপ্নাদেশ পেয়ে নরহরি দাস লিখিত ‘ভক্তিরত্নাকর’ গ্রন্থের নির্দেশ অনুসারে নবদ্বীপের ন’টি দ্বীপ পরিক্রমা করেলেন। পদব্রজে বিভিন্ন স্থান পরিক্রমা করে লোকমুখে তিনি জানতে পারেন, সেটিই মহাপ্রভুর জন্মস্থান।

সভায় সকলে তাঁর কথা স্বীকার করে নিলেন। এবং ওই স্থানকে মহাপ্রভুর জন্মস্থান বলে চিহ্নিত করে মহাপ্রভুর সেবা ও ভজন-সাধন করার অনুমতি দিলেন। নবদ্বীপ পুরাতত্ত্ব পরিষদের সভাপতি শান্তিরঞ্জন দেবের বক্তব্য, এই একমত হওয়ার কারণ হল— ১. কেদারনাথ দত্ত তাঁদেরকেই ডেকেছিলেন যাঁরা তাঁর অনুগত। ২. ইংরেজ সরকারের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট হওয়ায় ও ডেপুটি কালেক্টরের মুখের উপর কথা বলার মতো বুকের পাটা উপস্থিত কারও ছিল না। ৩. চৈতন্যদেবের জন্মস্থান নিয়ে যে আচমকা এমন একটা প্রস্তাব আসতে পারে, সে ব্যাপারে উপস্থিত ব্যক্তিরা মানসিক ভাবে প্রস্তুত ছিলেন না। তাই হয়তো সকলে একমত হয়ে অনুমতি প্রদান করেন।

ছবি: সংগৃহীত।

প্রসঙ্গত, নবদ্বীপ মানে নয়টি দ্বীপ— এই তত্ত্বের কোনও ভিত্তি নেই। নরহরি চক্রবর্তীর ‘ভক্তিরত্নাকর’-এ যে নয়টি দ্বীপের পরিক্রমার কথা বলা আছে সেগুলি হল— গঙ্গার পূর্ব পাড়ে সীমান্ত দ্বীপ, অন্ত দ্বীপ, গোদ্রুম দ্বীপ, মধ্য দ্বীপ। গঙ্গার পুরনো খাতের পশ্চিমপাড়ে কোল দ্বীপ, ঋতু দ্বীপ, জহ্ণু দ্বীপ, মোদ্রুম দ্বীপ, রুদ্র দ্বীপ। ন’টি দ্বীপের প্রবক্তা নরহরি এগুলির কথা বললেও কখনও বলেলনি যে, নবদ্বীপ ন’টি দ্বীপের সমষ্টি। তিনি লিখেছেন, নবদ্বীপ শহর ন’টি দ্বীপের দ্বারা বেষ্টিত। “জয় জয় নদীয়া নগর। নব দ্বীপে বেষ্টিত পরম মনোহর।।”

নরহরির কথা মেনে নিলে নবদ্বীপ মানে ন’টি দ্বীপ নয়। নবদ্বীপ শহর এবং তাকে বেষ্টিত আরও ন’টি দ্বীপ ধরে মোট ১০টি দ্বীপ হয়। সে ক্ষেত্রে ন’টি দ্বীপের এই পরিক্রমার কোনও ভিত্তি নেই।

নবদ্বীপ গঙ্গার পারে অবস্থিত হওয়ায় বিভিন্ন সময় তা বন্যা এবং ভাঙনের কবলে পড়েছে। মূল নবদ্বীপের অনেক অংশ এখন গঙ্গার তলায়। বর্তমান যে নবদ্বীপ, তা আসলে নতুন। ‘নতুন’ অর্থাৎ ‘নব’। নতুন দ্বীপ থেকে নবদ্বীপ।

অনেক বিশিষ্ট গবেষকের মতে চৈতন্য জন্মস্থান এখন গঙ্গার গর্ভে। বর্তমানে নবদ্বীপের প্রাচীন মায়াপুর এলাকার কোনও একটি স্থানে চৈতন্যের জন্মস্থান, যা এখন গঙ্গার গর্ভে।

কেদারনাথ দত্ত মিঞাপুরকে মায়াপুরে পরিবর্তিত করে সেই স্থানকে চৈত্যনের জন্মস্থান বলে প্রতিষ্ঠিত করতে সচেষ্ট হওয়ায় তাঁর দীক্ষাগুরু বিপিনবিহারীর সঙ্গে মতান্তর এবং মনান্তর হয়েছিল। বিপিনবিহারী ক্ষুব্ধ হয়ে তাঁকে পরিত্যাগও করেন। গুরুদেব কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত হলেও কেদারনাথ তাঁর পরিকল্পনা থেকে বিচ্যুত হননি। গুরুদেবের দেওয়া ‘ভক্তিবিনোদ’ উপাধিকে মাথায় রেখে তিনি আরও জোরদার প্রচারে নেমে পড়েন। ১৩০০ বঙ্গাব্দে ‘শ্রী শ্রী নবদ্বীপধাম প্রচারণী সভা’ তৈরি করে কেদারনাথ মিঞাপুরকে মায়াপুর নাম দিয়ে প্রচারের উদ্দেশ্যে বিরাট ‘মায়াপুর উৎসব’-এর আয়োজন করেন। এর প্রতিবাদে নবদ্বীপের বিশিষ্ট পণ্ডিত কান্তিচন্দ্র রাঢ়ী প্রকৃত তথ্য জানিয়ে ‘নবদ্বীপতত্ত্ব’ নামে ‘মায়াপুর উৎসব’-এ একটি পুস্তিকা বিলি করেন। কিন্তু কেদারনাথের অর্থ এবং ক্ষমতাবলের কাছে কান্তিচন্দ্র কার্যত পিছিয়ে পড়েন। ধীরে ধীরে তিনি বিস্মৃত হয়ে যান। কেদারনাথ দত্ত তাঁর ক্ষমতা এবং অর্থবলে মায়াপুরকে চৈতন্য জন্মস্থান বানিয়ে ব্যাপক প্রচার শুরু করেন।

১৯১৪ সালে ‘ভক্তিবিনোদ’ কেদারনাথ দত্ত পরলোক গমন করলে তাঁর যোগ্য উত্তরসূরি তাঁর পঞ্চম পুত্র বিমলাপ্রসাদ দত্ত, যাঁর পরবর্তী নাম ছিল শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী, তিনি পিতার পরিকল্পনাকে এগিয়ে নিয়ে যান। ১৯১৮ সালে তিনি মিঞাপুর বা মায়াপুরে শ্রীচৈতন্য মঠ প্রতিষ্ঠা করেন।

১৯৩২ সালে কলকাতার এক সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান অভয়চরণ দে শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতীর কাছ থেকে দীক্ষা গ্রহণ করেন। দীক্ষাগ্রহণের পরে তাঁর নাম হয় প্রভুপাদ শ্রীল অভয় চরণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী। সংক্ষেপে এসি ভক্তিবেদান্ত স্বামী। এই ভক্তিবেদান্ত স্বামী আধুনিক মায়াপুরের রূপকার।

১৯৬৫ সালে ভক্তিবেদান্ত স্বামী আমেরিকা যান। সেখানে ১৯৬৬ সালে তৈরি করেন ‘কৃষ্ণভাবনামৃত সঙ্ঘ’ বা আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সঙ্ঘ বা ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর কৃষ্ণ কনশাসনেস, সংক্ষেপে ইসকন। অচিরেই তার সদর দফতর হয়ে ওঠে মায়াপুর।

জগন্নাথ মিশ্র ও শচীদেবীর কনিষ্ঠ পুত্র শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু ১৪০৭ শকাব্দের ২৩ ফাল্গুন শনিবার (ইং ১৪৮৬ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি) নবদ্বীপের এক পল্লিতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।

সংস্কৃত পণ্ডিত ও গবেষক শ্রী শুভেন্দু সিদ্ধান্তের কথায়, “পঞ্চদশ-ষোড়শ শতাব্দীর নবদ্বীপের সঙ্গে বর্তমান নবদ্বীপের তুলনা করলে হবে না। বর্তমান নবদ্বীপের সঙ্গে সে সময়ের নবদ্বীপের কোনও মিলই নেই। প্রবল বিধ্বংসী বন্যা ও ভাঙনের ফলে গঙ্গার গতিপথ বিভিন্ন সময় বদলেছে। পশ্চিম পার দিয়ে প্রবাহিত জলধারা সেই ভাঙনে পূর্ব পারে চলে আসে। এই বন্যায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল নবদ্বীপের উত্তারঞ্চল। যেখানে ছিল চৈতন্যের জন্মস্থান। চৈতন্যের পিতা জগন্নাথ মিশ্র অর্থবান ছিলেন না। তাঁদের মাটির কাঁচা বাড়ি সেই ভয়ানক বন্যায় মাটির গর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়া স্বাভাবিক। সেই স্থান কোনও দিনও সঠিক ভাবে নির্ণীত করার চেষ্টা হয়নি।”

১৭৮০ সালে এই ভয়াল ভাঙন শুরু হয়েছিল। তার প্রায় বছর চল্লিশ পরে চৈতন্যের পরম ভক্ত লর্ড হেস্টিংসের দেওয়ান গঙ্গাগোবিন্দ সিংহ চৈতন্যের জন্মস্থান চিহ্নিত করার কাজে ব্রতী হয়েছিলেন। তিনি জমি জরিপ বিভাগের একজন অত্যন্ত দক্ষ কর্মী ছিলেন। ১৭৯২ সালে দেওয়ান গঙ্গাগোবিন্দ চৈতন্যদেবের ভদ্রাসন চিহ্নিত করে একটি বিরাট মন্দির স্থাপন করেন। ১৮১৮ সালে আবার গঙ্গার ভয়ানক ভাঙন শুরু হয়। ভাঙতে ভাঙতে তা প্রায় মন্দিরের কাছে চলে আসে। ১৮২৩ সালে ভয়ানক ভাঙনে সেই বিশাল মন্দির পুরোপুরি গঙ্গার গর্ভে চলে যায়।

১৯৭০ সাল নাগাদ ব্রজমোহন দাস বাবাজি, যাঁর পূর্বনাম ছিল রাধাকিশোর সিংহ, তিনি এই মন্দির খনন করে সত্য উদ্ঘাটনের কাজে ব্রতী হন। ব্রজমোহন ছিলেন পেশায় একজন দক্ষ বাস্তুকার। নিজের সঞ্চিত অর্থে বোরিং মেশিন কিনে রামচন্দ্রপুরের জমিতে কুঁড়েঘর স্থাপন করে একাই সেই কাজে ব্রতী হয়েছিলেন। কোনও রকম সরকারি সাহায্য দুরে থাক, এই কাজ করতে গিয়ে তাঁকে সইতে হয়েছিল অপমান, অপবাদ এবং ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ। সঞ্চিত অর্থ ফুরিয়ে যাওয়ার পরেও ব্রজমোহন দাস বাবাজি মহাশয় বাড়ি বাড়ি ভিক্ষা করে অর্থ সংগ্রহ করেন এবং খনননকার্য চালিয়ে সেই মন্দিরের স্থাপত্যের নির্দশন স্বরূপ বেশ কিছু পাথর পান। সেই পাথরগুলিও কে বা কারা চুরি করে নিয়ে যায়। অবশেষে কাজ অসমাপ্ত রেখেই তিনি গত হন ।

নবদ্বীপ পুরাতত্ত্ব পরিষেদের সভাপতি শান্তিরঞ্জন দেবের কথায়, “শ্রীচৈতন্যদেবের প্রকৃত ভদ্রাসন চিহ্নিত করার উদ্যোগ যে পরবর্তী কালে নেওয়া হয়নি, তা নয়। কিন্তু কোনও এক অজ্ঞাত কারণে সে উদ্যোগ ফলপ্রসূ হয়নি। যেখানে হাজার হাজার বছরের পুরনো ইতিহাসকে আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে তুলে আনা হচ্ছে, সত্য উদ্ঘাটন করা হচ্ছে, সেখানে মাত্র সাড়ে ৫০০ বছরের ইতিহাস নির্ণয় করা কি খুব কঠিন কাজ? বিভিন্ন সময় বার বার প্রশাসনে অনুরোধ জানানোর পর তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সময়ে সরকারি স্তরে এই উদ্যোগ শুরু হওয়ার পরেই অচিরেই তা বন্ধ হয়ে যায়।”

কেন? তা আজও রহস্য...

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement