আশঙ্কা নেই গলা ব্যথায়

ভোগেন বহুজন। গলা ব্যথায় তো বটেই। ব্যথা হলে আতঙ্কেও। কিন্তু গলা ব্যথা আশঙ্কাজনক রোগ নয়। ভাইরাস, ছত্রাক বা আরও কিছু কারণে এই রোগ হয়। চিকিৎসা করালেই সেরে যায়। গলা ব্যথার নানা দিক ও চিকিৎসা নিয়ে আলোচনা করলেন কাঞ্চন পাঠকগলার যে কোনও অংশেই ব্যথা হতে পারে। যেখানে ব্যথা হয় সেই স্থানের নাম অনুসারে রোগের নাম হয়। যদির গলার পাশে টনসিলে হয় তবে এই ব্যথাকে টনসিলাইটিস বলে। যদি গলার পিছন দিকে ফ্যারিঙ্গসে হয় তাহলে ফ্যারিঞ্জাইটিস বলে। আরও নীচে ল্যারিঙ্গসে ব্যথা হলে তাকে ল্যারিঞ্জাইটিস বলে। এগুলো সবই প্রদাহজনিত অসুখ।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০১৮ ০৩:১১
Share:

গরম জলের ভাপ নিলে গলা ব্যথায় আরাম হয়। ছবি: কৌশিক সাঁতরা।

খুব সাধারণ একটা অসুখ। এই অসুখে আমরা কম বেশি সকলেই ভুগি। বা অতীতে ভুগেছি। কখনও কখনও গলা ব্যথা খুবই ভোগায়। আবার কখনও অল্প চিকিৎসাতেই সেরে যায়। তবে অনেক সময়ে এই সাধারণ অসুখের জন্য আমরা কেউ কেউ আশঙ্কিত হয়ে পড়ি। কারণ গলা ব্যথা এবং সেই সঙ্গে স্বরভঙ্গের জন্য কেউ কেউ খুব ভয় পেয়ে যান। কারণ ক্যানসারের একটি লক্ষণ হল, স্বরভঙ্গ। ফলে আতঙ্কে ভুগতে শুরু করেন কেউ কেউ।

Advertisement

গলার যে কোনও অংশেই ব্যথা হতে পারে। যেখানে ব্যথা হয় সেই স্থানের নাম অনুসারে রোগের নাম হয়। যদির গলার পাশে টনসিলে হয় তবে এই ব্যথাকে টনসিলাইটিস বলে। যদি গলার পিছন দিকে ফ্যারিঙ্গসে হয় তাহলে ফ্যারিঞ্জাইটিস বলে। আরও নীচে ল্যারিঙ্গসে ব্যথা হলে তাকে ল্যারিঞ্জাইটিস বলে। এগুলো সবই প্রদাহজনিত অসুখ।

গলা ব্যথার কিছু প্রাথমিক লক্ষণ রয়েছে। ঢোক গিলতে গেলে ব্যথা লাগে। কখনও গলায় জ্বালা জ্বালা ভাব থাকে। কারও আবার গলার ভিতরে চুলকানোর মতো অস্বস্তি হয়। কথা বলতেও অসুবিধা হয়। এর সঙ্গেই আরও কিছু উপসর্গ থাকতে পারে। সেগুলো হল—

Advertisement

১। জ্বর ও মাথা ব্যথা।

২। নাক বন্ধ ও হাঁচি হওয়া।

৩। কাশি ও সারা গায়ে ব্যথা থাকতে পারে।

৪। গলার স্বরভঙ্গ হয়ে যায়।

সেই সঙ্গে গলার বাইরে ঘাড়ের গ্রন্থিগুলো ফুলে যেতে পারে। এর মধ্যে এক বা একাধিক সমস্যা এক সঙ্গে থাকতে পারে।

গলা ব্যথা কী কী কারণে হতে পারে? মোটামুটি কয়েকটি কারণ জানা গিয়েছে।

১। অধিকাংশ গলার ব্যথার কারণ ভাইরাসের সংক্রমণ। ফ্যারেঞ্জাইটিস, টনসিলাইটিস ও ল্যারিঞ্জাইটিস ভাইরাসের কারণে হয়। ভাইরাল ফিভার বা ইনফ্লুয়েঞ্জা জাতীয় জ্বর হয়নি এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া কষ্টকর।

এছাড়া, হাম, চিকেন পক্সের মতো অসুখগুলোতেও খুব গলা ব্যথা হয়। মাম্পস একটি মুখের বাইরের অসুখ। কিন্তু এই রোগেও তীব্র গলায় ব্যথা হয়। খেতেও খুব কষ্ট হয়।

২। ব্যাকটেরিয়া বা ছত্রাকের সংক্রমণেও গলা ব্যথা হয়। স্ট্রেপ্টোকক্কাস জাতীয় জীবাণুর আক্রমণে টনসিল আক্রান্ত হওয়ার কথা আমরা সকলে জানি। ছোটরা এই অসুখে বেশি আক্রান্ত হয় যদিও বড়রা বাদ যান না। এ ছাড়াও আরও কিছু জীবাণু আছে যারা সরাসরি টনসিলে আক্রমণ করে। যেমন ডিপথেরিয়া। তবে এখন আর ডিপথেরিয়া রোগটি দেখা যায় না বললেই চলে। টিকাকরণের কারণেই এই রোগ প্রায় নির্মূল হয়েছে। ছত্রাক সংক্রমণ যদি হয় সেটা শুধু টনসিল নয় সারা মুখ বা গলা আক্রমণ করতে পারে।

৩। সিগারেট বা অন্য রাসায়নিকের কারণে গলা ব্যথা হয়। সিগারেট খেলে গলার সমস্যা হয়, এটা সকলের জানা। এর সঙ্গে যোগ করা হয়েছে নাগরিক সভ্যতার উৎপাত। নানা দূষণের কারণে গলায় সমস্যা হয়। এ ছাড়া পেরিটনসিলাইটিস, গ্যাস্ট্রোএসোফেগিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ (জিইআরডি), এপিগ্লটাইটিস— এই ধরনের কিছু অসুখ খুব ভোগায়।

গলা ব্যথার চিকিৎসার জন্য কতকগুলো সহজ পদ্ধতি রয়েছে। যেগুলো প্রাথমিক ভাবে বাড়িতেই শুরু করা যেতে পারে। যেমন অল্প উষ্ণ জলে লবণ দিয়ে গার্গল করা। এই পদ্ধতি সকলে জানেন। এতে ব্যথা কিছুটা কমে এবং আরাম পাওয়া যায়। গলার নীচের দিকে ব্যথা বা স্বরের সমস্যা থাকলে গরম জলের ভাপ নেওয়া একটি পুরনো ঘরোয়া চিকিৎসা। এটাও অনেকে জানেন। অনেক সময়ে গরম জলের সঙ্গে ইউক্যালিপ্টাস তেল বা বেঞ্জিন দিয়েও ভাপ নেন।

কোন কোন ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ

গরম জল, চা বা গরম পানীয় গলার ব্যথার উপশম করে। তালমিছরি বা এই রকম কিছু বা লজেন্স খেলে উপকার পাওয়া যায়।

প্রাথমিক ভাবে গলায় ব্যথা হলেই উদ্বিগ্ন হওয়ার প্রয়োজন নেই। তবে গলা ব্যথা খুব তীব্র হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন। শ্বাসকষ্ট ও গলা ব্যথা এক সঙ্গে হলেও চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। দেখতে হবে গলার সঙ্গে কানেও ব্যথা রয়েছে কিনা। জ্বর ১০১ ডিগ্রি ফারেনাইটের উপরে হলে এবং সঙ্গে গলা ব্যথা থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ জরুরি। কাশির সঙ্গে যদি রক্ত পড়ে এবং অল্প গলা ব্যথা যদি অনেক দিন (সাত দিনের বেশি) ধরে চলে তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসক এ বিষয়ে সঠিক পরামর্শ দিতে পারবেন। যদি কোনও ইএনটি বিশেষজ্ঞকে দেখানোর সুযোগ থাকে তাহলে তাঁর কাছেও যাওয়া প্রয়োজন।

গলা ব্যথার চিকিৎসা

ভাল ভাবে পরীক্ষা করে একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসক গলায় ব্যথার কারণ নির্ণয় করতে পারেন। এই পরীক্ষা হাসপাতালের ইএনটি ক্লিনিকে বা চিকিৎসকের ক্লিনিকে সাধারণ যন্ত্রপাতির মাধ্যমেই সম্ভব। খুব বেশি হলে কিছু রক্ত পরীক্ষা বা গলার ‘সোয়াব কালচার’ করাই যথেষ্ট। এর সঙ্গে দেখতে হবে রোগীর অন্য কোনও বড় অসুখ বা শারীরিক সমস্যা আছে কিনা! সেক্ষেত্রে অবশ্যই বুকের এক্স রে এবং আরও কিছু পরীক্ষা করা প্রয়োজন। কয়েকটি ক্ষেত্রে গলার এক্স রে করতে হয়।

গলার ব্যথার কারণের উপরে চিকিৎসা নির্ভর করে। মূলত কিছু অ্যান্টিবায়োচিক ও ব্যথার ওষুধ দিয়েই চিকিৎসা করা হয়। কোনও জটিলতা থাকলে তবেই রোগীকে ভর্তি করানো হয়। কয়েকটি ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচার করার প্রয়োজন থাকে। যেমন পেরিটনসিলাইটিস। তবে এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা খুবই কম।

পরিশেষে এটা বলা ভাল, গলা ব্যথা সাধারণ চিকিৎসাতেই সেরে যায়। তবে দীর্ঘদিন যদি কেউ গলার সমস্যায় ভোগেন বা কোনও অসুবিধে হয় তাহলে একটু নাক-কান-গলা পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া দরকার।

লেখক চিকিৎসক নয়াগ্রাম সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন