Sex Workers Event

বাধা পেরিয়ে ডানা মেলছেন ওঁরা, ‘আমরাও পারি’ বুঝিয়ে দিতে চান যৌনকর্মী, রূপান্তরকামীরা

স্বপ্ন আছে। আছে বাধাও। তার পরেও, ছক ভেঙে এগোনোর স্বপ্ন দেখেন রূপান্তরকামী এবং যৌনকর্মীরা। তাঁরাই এ বার হাঁটবেন ফ্যাশন শো-য়ে। সাক্ষী থাকবে কলকাতা।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১১ জুলাই ২০২৫ ১০:৪৭
Share:

স্বপ্নের ডানা মেলছেন ওঁরা। ছবি: আনন্দবাজার ডট কম।

কারও স্বপ্ন অভিনেত্রী হওয়ার, কারও আবার শিক্ষক।

Advertisement

কিন্তু স্বপ্ন সফলের জন্য হয় নারী, নয়তো পুরুষ হওয়া দরকার। একরাশ অভিমান ঝরে পড়ল সন্দীপ্তা ছেত্রীর গলায়। তিনি বললেন, ‘‘যতই চেষ্টা করি না কেন, কেউ স্বীকৃতি দেবে না। আমি যে পুরুষ বা নারী নই। রূপান্তরিত!’’

ওঁরা কেউ যৌনকর্মী, কেউ রূপান্তরকামী। এই সমাজের চোখে এক প্রকার ব্রাত্য। যতই এ নিয়ে আন্দোলন, লড়াই, গালভরা বক্তৃতা হোক না কেন, সমাজের মানসিকতা যে খুব বেশি বদলায়নি, বলছেন সন্দীপ্তা। চেয়েছিলেন নায়িকা হতে। এখনও চান ভীষণ ভাবে, ছক ভেঙে এগোতে। ‘কিন্তু চাইলেই বা দিচ্ছে কে? বড়জোর কোনও প্রযোজক, পরিচালক সিরিয়াল বা সিনেমায় হিজড়ার পাঠ দেন,’’ আক্ষেপের স্বর তাঁর গলায়।

Advertisement

তবে বাধার পাহাড় পেরিয়েও এগিয়ে যেতে চান ওঁরা। দেখিয়ে দিতে চান, সুযোগে পেলে তাঁরাও পারেন। আর সেই সুযোগই ওঁদের করে দিচ্ছে ‘দুর্বার মহিলা সমন্বয় কমিটি’। আগামী ১২ -১৫ জুলাই রবীন্দ্র সরণির রবীন্দ্র কাননে আয়োজন হচ্ছে বিশেষ অনুষ্ঠানের। যেখানে অংশ নেবেন যৌনকর্মী এবং রূপান্তরকামীরা। ছক ভাঙার গল্প তৈরি হবে আরও এক বার। রকমারি পোশাক পরে র‌্যাম্পে হাঁটবেন চম্পা, কেয়া, রূপশ্রীরা। ব্যতিক্রমী দিন নিয়েই উচ্ছ্বসিত তাঁরা। পুরুষ থেকে নারীতে রূপান্তরিত সন্দীপ্তা বললেন, ‘‘আগেও দু’বার হেঁটেছি। এই নিয়ে তৃতীয় বার। যখন সকলের সামনে সাজগোজ করে মঞ্চে হাঁটি, ভীষণ গর্ব হয়। মনে হয় আমরাও পারি, সেটাই দেখিয়ে দিতে পারছি।’’

৩০ বছর ধরে যৌনকর্মীদের অধিকারের জন্য লড়াই করছে দুর্বার। চিকিৎসা, শিক্ষকতা যদি পেশা হয়, সেই পেশার স্বীকৃতি হয়, তা হলে যৌনকর্মীরা কেন সমাজে ব্রাত্য হয়ে থাকবেন? প্রশ্ন ওঁদের। কিন্তু বিকল্পও তো ভাবা যায়? ছক ভেঙে ফ্যাশন শো, মেলায় বই, হস্তশিল্পের কাজ শিখে দোকান করা, তবে কি তা দু’দিনের জন্যই? ‘‘না! তা কেন’’, বলছেন দুর্বার মহিলা সমন্বয় কমিটির সভাপতি বিশাখা লস্কর। কিন্তু তার জন্য নিজের পেশা ছাড়বেন কেন কেউ? অনেকেই তো নিজের কাজের বাইরে বাড়তি অর্থ উপার্জনের জন্য নানা রকম কাজ করেন। যৌনকর্মীরাও রূপচর্চা, হাতের কাজ শিখছেন। ফ্যাশন নিয়ে সচেতনতা বাড়ছে। সেই কাজ করতেই পারেন। কিন্তু স্বেচ্ছায় যে পেশা তাঁরা বেছে নিয়েছেন, তা ছাড়বেন কেন?

নিজেদের পেশার প্রতি এই সম্মান আদায়েই তো লড়াই। সে কারণেই তো শ্রমিকের মর্যাদা চাইছেন তাঁরা। বাধা আছে পদে পদে। যৌনকর্মীর সন্তানদের স্কুলে ভর্তি করা থেকে নাগরিক অধিকার আদায়ের পথ এখনও খুব মসৃণ নয়। তবু কিছুটা পথ তাঁরা এগিয়েছেন। আরও পথ পাড়ি দেওয়া বাকি। এক দিন ছকভাঙা স্বপ্নের পথের বাধা দূর হবে, স্বপ্ন দেখেন সন্দীপ্তা, চম্পারা। ৩০ বছর পার করার পর সেই দিনের অপেক্ষায় দুর্বারের সদস্যরা। আগামী ১২-১৫ জুলাই কলকাতার বুকে আয়োজন হচ্ছে বিশেষ অনুষ্ঠানে। যেখানে যৌনকর্মীদের অধিকার নিয়ে যেমন আলোচনা হবে, তেমনই তাঁদের হস্তশিল্পের দোকান বসবে। যৌনকর্মীদের জীবনের কঠোর সত্য, জীবন সংগ্রাম নিয়ে লেখা ‘দুর্বার ভাবনা’ও থাকবে সেই স্টলে। অঙ্কন, আবৃত্তি প্রতিযোগিতায় অংশ নেবেন যৌনকর্মীদের সন্তানেরাও। সেখানেই তাঁরা দেখিয়ে দিতে চান, সম্মান করার মতো গুণ-প্রতিভা কম নেই তাঁদের।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement