Badampahar Offbeat Travel Destination

বর্ষায় বেরিয়ে পড়তে চান? সপ্তাহশেষের ঠিকানা হতে পারে বাদামপাহাড়, মনে হবে পটে আঁকা ছবি

ঝাড়গ্রাম, বেলপাহাড়ি— এ সব ঘোরা। তা হলে নতুন কোন জায়গায় যাবেন বর্ষায়? অরণ্য-পাহাড়, দুই-ই আছে বাদামপাহাড়ে। দু’দিনেই ঘোরা যায়। কী ভাবে যাওয়া যায় সেখানে?

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০২৫ ১১:১৫
Share:

বর্ষায় বাদামপাহাড় এলাকায় পাহাড়ি টিলাগুলি হয়ে ওঠে ঘন সবুজ। ছবি: সংগৃহীত।

বাদামপাহাড়। নাম শুনলেই মনে মনে কেমন কৌতূহল জাগে। প্রশ্ন আসে, এমন নামে সত্যি কি কোনও পর্যটনকেন্দ্র আছে? ভারতীয় রেলস্টেশনের তালিকা খুঁজতে বসলেই পেয়ে যাবেন সেই নাম। তবে শুধু এমন নামের স্টেশন বলে নয়, বাদামপাহাড়ের পরিচিতি তার সৌন্দর্যের জন্য।

Advertisement

টাটনগর রেলস্টেশন থেকে ট্রেন যায় সেখানে। বাদামপাহাড়ে নেমে গাড়ি নিয়ে ঘুরে ফেলা যায় আশপাশ। ঝাড়খণ্ড পার করে শুরু হচ্ছে ওড়িশা। এই রাজ্যের ময়ূরভঞ্জ জেলায় তার অবস্থান। ছোটনাগপুর মালভূমির অংশবিশেষ বাদামপাহাড় এখন কিছুটা শহুরে। পাকা সড়ক, দোকানপাট, হোটেল হয়েছে সেখানে। তবে মুছে যায়নি প্রকৃতির অকৃত্রিমতা। নামের সঙ্গে সাযুজ্য রেখেই পাহাড়ের দেখা মিলবে সেখানে। বর্ষার জল পেয়ে গাছগাছালি আরও সবুজ। সেই শ্যামলিমাই যেন প্রকৃতিকে জীবন্ত করে তুলেছে। তাই বাদামপাহাড় ঘুরে নেওয়ার এই উপযুক্ত সময়।

ওড়িশার এই এলাকা মূলত খনি অঞ্চল। তবে বাদামপাহাড় নামটি যেন আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, নির্জনতা তাকে পরিচিতি দিয়েছে। এখনও সেখানে সে ভাবে পর্যটকদের উপস্থিতি লক্ষ করা যায় না বটে, তবে ‘অফবিট’ ভ্রমণ নিয়ে যাঁদের উৎসাহ, তাঁদের কারও কারও পা পড়েছে সেখানে।

Advertisement

ওড়িশার ময়ূরভঞ্জ জেলার পরিচিতি লৌহ আকরিকের খনির জন্য। তবে পর্যটনস্থল হিসাবেও এই জেলা কম সমৃদ্ধ নয়। এখানেই সিমলিপাল জাতীয় উদ্যান। জলাধার, ঝর্না এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, এই জেলার পদে পদে।

তবে যদি বাদামপাহাড়ই ভ্রমণের মূল লক্ষ্য হয়, তা হলে ঘুরতে পারেন অন্য ভাবেও। বনবাংলোয় রাত্রিবাস করতে পারেন। আর পায়ে হেঁটে ঘুরে নিতে পারেন আশপাশ। এই স্থান এক্কেবার নিজের মতো প্রকৃতি উপভোগের জন্য।

বাদামপাহাড় এলাকায় রয়েছে লৌহ আকরিক খনি। সে কারণে কিছু অংশ দেখায় এমনও। ছবি: সংগৃহীত।

বাদামপাহাড়ে থেকে চলে যেতে পারেন আশপাশের কয়েকটি জলাধার। মোটামুটি ৩০ কিলোমিটার দূরেই রয়েছে পাহাড়ঘেরা সুলাইপাত বা সুলেইপাত জলাধার। জায়গাটি সিমলিপাল অরণ্য থেকে মোটামুটি ২০ কিলোমিটার দূরে। বিস্তীর্ণ স্থান জুড়ে তার অবস্থান। পায়ে হেঁটে পুরোটা ঘোরা কষ্টকর। বাইক বা গাড়ি থাকলে জলাধারটি এক চক্কর দিয়ে আসতে পারেন।

ভরা বর্ষায় কৃষ্ণবর্ণের মেঘের প্রতিচ্ছবি স্বচ্ছ জলে পড়লে তার রূপ হয় মায়াময়। আবার মেঘ ভেদ করে সূর্যরশ্মি বেরিয়ে এলে সৌন্দর্য আর এক রকম। স্বচ্ছ জলাধারের সৌন্দর্য বাড়িয়েছে জলরাশির একপাশে থাকা সবুজ ঢেউখেলানো টিলা। খড়কাই নদীর উপর বাঁধ দিয়ে সুলাইপাত জলাধারের সৃষ্টি। বর্ষাই সেই সৌন্দর্য উপভোগের আদর্শ সময়।

সুলাইপাত থেকে ফের পাকা সড়ক ধরে এগোনোর পালা। পরের গন্তব্য বাঁকাবল জলাধার। পথেই পড়বে ময়ূরভঞ্জের একাধিক গ্রাম। শীতে যা রুক্ষ, বর্ষায় তা শ্যামল। লোহার খনির জন্য পথের দু’পাশের মাটি লালচে। পাহাড়কে সঙ্গী করে রায়রংপুরের রাস্তা ধরে গেলে দূরত্ব কম বেশি ৩০ কিলোমিটার। তবে স্থানীয়দের যাতায়াতের অরণ্যপথ ধরলে দূরত্ব কমে যাবে বেশ কিছুটা।

সুলাইপাত জলাধার। ঘুরে নিতে পারেন এখানেও। ছবি: সংগৃহীত।

বাঁকাবলও সুন্দর। সেখান থেকেও দেখা যায় অনুচ্চ টিলা । তবে সুলাইপাতের মতো অতটাও বড় নয় এই জলাধার। বাঁকাবল জলাধারটি সিমলিপালের খুব কাছে। এখান থেকে ১২৮ কিলোমিটার দূরে ঘন অরণ্যের মধ্যে রয়েছে দেবকুণ্ড জলপ্রপাত।

তবে কতটা ঘুরবেন, কী ভাবে ঘুরবেন, সবটাই নির্ভর করে হাতে ক’টা দিন ছুটি, তার উপরে। দিন দুয়েকের জন্য গেলে বাদামপাহাড় ঘুরে এই দুই জলাধার দেখে নিতে পারেন। তবে হাতে বাড়তি সময় থাকলে সিমলিপাল জাতীয় উদ্যান, বাংরিপোসির জঙ্গলও ঘোরা যায়। বর্ষায় অবশ্য গহীন অরণ্য এবং সংরক্ষিত এলাকায় প্রবেশের অনুমতি মেলে না। তবে অরণ্য সংলগ্ন কয়কেটি স্থান ঘোরা যায়। যেমন এই সময়েও ঘোরা যায় লুলুং। স্থানটি সিমলিপাল জাতীয় উদ্যান এবং ব্যাঘ্র প্রকল্পের লাগোয়া জায়গায় অবস্থিত।

কী ভাবে যাবেন?

বাদামপাহাড় যাওয়া যায় ট্রেনে। হাওড়া থেকে প্রথমে টাটানগর স্টেশন। হাওড়া থেকে রাতের সমলেশ্বরী এক্সপ্রেস ধরলে ভোররাতে টাটানগর পৌঁছে যাবেন। ট্রেনটি ছাড়ে রাত ১০টা ১০ মিনিটে। টাটানগর পৌঁছয় ভোররাতে। ২টো ২৭ মিনিটে। হাওড়া থেকে রাত ১১টা ৫ মিনিটে ছাড়ে অহমদাবাদ সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস। টাটানগর পৌঁছয় রাত প্রায় ৩টে নাগাদ। রাতের ট্রেন ধরার সুবিধা হল, অফিস বা দিনের কাজ সেরে ট্রেনে চেপে বসা যায়। গন্তব্যে সকাল সকাল পৌঁছনো যায়। এতে সময় বাঁচে। টাটানগর-বাদামপাহাড় মেমু আছে। সকাল ৬টায় টাটানগর থেকে একটি ট্রেন আছে যেটি বাদামপাহাড় পৌঁছোয় ৯টা ৪৫ মিনিটে। বেলা ১০টাতেও ট্রেন আছে। কলকাতা থেকে সড়কপথে বাদামপাহাড়ের দূরত্ব ২৮০ কিলোমিটারের মতো।

থাকবেন কোথায়?

বাদামপাহাড়ে ওড়িশার বন দফতরের বাংলো আছে। একটি হোটেলও হয়েছে। তার বাইরে বিশেষ থাকার ব্যবস্থা নেই। চাইলে টাটানগরে থেকে বাদামপাহাড় ঘুরেও ফিরে আসা যায়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement