Holi Dog Care Tips

রঙের উৎসবে ভাল থাকুক ওরাও, পোষ্য সারমেয়কে কী ভাবে সামলে রাখবেন দিনটিতে?

রঙের উৎসবে শামিল করতে চান আদরের পোষ্য সারমেয়কে? আনন্দ যাতে নিরানন্দে পরিণত না হয়, সে জন্য কোন সতর্কতা অবলম্বন করবেন? পরামর্শ দিলেন পশুচিকিৎসক।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৪ মার্চ ২০২৫ ১০:৪৫
Share:

রঙের উৎসব কী ভাবে কাটাবেন পোষ্যের সঙ্গে? ছবি: সংগৃহীত।

বছর একটিমাত্র দিনই তো রং মাখার জন্য। এমন দিনে আনন্দ, খাওয়া-দাওয়া, হুল্লোড় থাকবে। থাকবে রং মাখামাখিও। বাড়ির সদস্য হয়ে ওঠা পোষ্য সেই আনন্দ উৎসবের অংশীদার হবে না, তা-ও কি হয়!

Advertisement

খেলব হোলি, রং দেব না?

আদরের কুট্টুসকে তাই বাবার কিনে দেওয়া রঙের কৌটো থেকে রং মাখিয়ে দিয়েছিল ছোট্ট রোদ্দুর। বছর চারেকের খুদের মনে হয়েছে, সবাই যখন দোল খেলছে, তাদের বাড়ির সারমেয়টিই বা বাদ যায় কেন! অবোধ শিশুর সারল্যের মাসুল গুনতে হয়েছিল বাড়ির আদরের পোষ্যকে। রং থেকে অ্যালার্জি, অসুস্থতা— দোলের দিনে তাকে নিয়ে বড়সড় বিপত্তি।

Advertisement

কখনও বুঝে, কখনও না বুঝে রঙের উৎসবে এমন অনেক বিপত্তি ঘটে যেতে পারে। পোষ্যের সঙ্গে কী ভাবে দিনটি উদ্‌যাপন করবেন, কোন বিষয় এড়িয়ে চলতে হবে, সেই বিষয়ে পরামর্শ দিলেন সরকারি হাসপাতালের পশুচিকিৎসক সুব্রত সান্‌কি।

ভেষজ বা প্রাকৃতিক রং কি পোষ্যের জন্য ভাল?

বাজারচলতি রং এবং আবিরে থাকে বিভিন্ন রকম রাসায়নিক। ত্বক এবং শরীরের জন্য তা অত্যন্ত ক্ষতিকর। কিন্তু প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি ভেষজ রং অথবা আবির পোষ্যকে সামান্য একটু দিলে কী আর ক্ষতি! সে-ও তো বাড়িরই একজন। এমন ভাবেন অনেকেই। তবে পশুচিকিৎসক বলছেন, ‘‘মনে রাখা দরকার, ভেষজ রং বলে যা বিক্রি হয়, তা মানুষের জন্য হতে পারে, পোষ্যের জন্য নয়। এই ধরনের রং, আবির কোনওটাই পোষ্যের উপর পরীক্ষা করে তৈরি হয়নি। তাই সমস্ত রকম রং থেকেই সারমেয়কে দূরে রাখাই ভাল।’’

ঝুঁকি কোথায় এবং কী ভাবে?

সারমেয়কে বাড়ি থেকে বার না করলেও এই দিনটিতে তাকে আগলে না রাখলে সমস্যা। বাইরে খেলা হলেও আবির মিশে থাকে বাতাসে। তার গুঁড়ো ছড়িয়ে পড়তে পারে সারমেয়র শরীরে। গা চাটলেই তা চলে যাবে পেটে। চিকিৎসক বলছেন, দোলের দিনে ব্যস্ততায় পোষ্যকে জল খাওয়াতে ভুলে যান অনেকেই। গরম পড়তে শুরু হওয়ার সময় পর্যাপ্ত জলের প্রয়োজন হয় সারমেয়র। প্রয়োজনীয় জল না খেলে শরীরে জলের ঘাটতি দেখা দিতে পারে। পাশাপাশি আঢাকা জলে বা পোষ্যের খাবারে আবির, রং পড়তে পারে। সেই খাবার বা জল খেলে সারমেয় অসুস্থ হয়ে পড়বে।

পোষ্য ভয়ও পেতে পারে

রঙের উৎসব উদ্‌যাপনের সংজ্ঞাও গত কয়েক বছরে বদলেছে। বহু জায়গাতেই এখন বক্স বাজিয়ে গান চালানো, রং মাখানো, আবির ছোড়াছুড়ি হয়। পিকনিক, হইহল্লাও উৎসবের অঙ্গ হয়ে উঠেছে। আর তাতেই ভয় পেতে পারে পোষ্য। এই দিনটিতে বাড়ির প্রতিটি সদস্যই রং খেলা, খাবারের আয়োজন, বন্ধুবান্ধব নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। ফলে সারমেয়র দিকে আলাদা করে নজর দিতে পারেন না অনেকেই। বাড়ির সদস্যদের গা-ছাড়া ভাব, তার উপর উচ্চৈস্বরে বক্স বাজিয়ে গান— এই সবই সারমেয়র মনোজগতে প্রভাব ফেলে। উদ্বেগ তৈরি হয়। পোষ্য কুঁকড়ে ভয়ে খাটের নীচে বা তার জন্য নিরাপদ কোনও স্থানে ঢুকে পড়ে।

এমনই ঘটনা ঘটেছিল চারপেয়ে সদস্য ভেবলোর সঙ্গে। তার বাড়ির সদস্যকে পাড়ার লোকজন রং মাখাতে এসেছিলেন। যাঁরা এসেছিলেন, তাঁরা নিজেরাও প্রচণ্ড রং মেখেছিলেন। এমনই অদ্ভুত সাজের লোকজন বাড়ির সদস্যকে রং মাখাচ্ছেন দেখে প্রথমটায় চিৎকার জুড়ে দিয়েছিল সে। তার পর যখন কিছুতেই তা থামানো যায়নি, ভয় পেয়ে সোফার নীচে সে এমন সেঁধিয়ে যায় যে, বেশ কয়েক ঘণ্টা সেখান থেকে তাকে আর বার করা যায়নি।

সুব্রত বলছেন, ‘‘এ রকম পরিস্থিতিতে পোষ্যের উদ্বেগ হতে পারেই, ক্ষেত্রবিশেষে প্যানিক অ্যাটাকের ঝুঁকিও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। বিপদ হওয়ার পরে সারমেয়কে নিয়ে ছোটাছুটির চেয়ে আগে থেকে সাবধানতা অবলম্বন জরুরি। তাকে ব্যস্ততার ফাঁকে সময় দিলে, বাইরে আসতে না দিলেই ভাল হয়।’’ তিনি জানাচ্ছেন, উদ্বেগ বা প্যানিক অ্যাটাকের জন্য স্প্রে, ওষুধ থাকে। পশুচিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে ঘরে কিছু জরুরি ওষুধ মজুত রাখা যেতে পারে।

চোখে-কানে রং ঢুকে গেলে কী করণীয়?

দোলের দিনে রাস্তায় থাকা কুকুরের দিকে পিচকিরি দিয়ে রং দেওয়া, রং ভরা বেলুন ছোড়া খুব সাধারণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাতে যে সারমেয়দেরও ক্ষতি হতে পারে, অনেকে যেমন তা ভাবেন না, তেমন অনেক সহৃদয় মানুষও এ ক্ষেত্রে এগিয়ে আসেন। পোষ্যেরও চোখে, কানে রং ঢুকে যেতে পারে কোনও ভাবে। যে কোন সারমেয়র ক্ষেত্রেই চোখে, কানে বা মুখে রং ঢুকে গেলে পরিষ্কার সুতির নরম কাপড় জলে ভিজিয়ে, তা নিংড়ে নিয়ে তার চোখ, কান বা শরীরের যে যে অংশ রং লেগেছে, তা মুছিয়ে দিতে হবে। পোষ্যের জন্য নির্দিষ্ট শ্যাম্পু দিয়ে স্নান করানো যেতে পারে।

বাইরের রং তুলে দেওয়া যায়। তবে বিপদ হতে পারে খাবারের সঙ্গে পেটে রং চলে গেলে। কুকুরের ঘাম হয় না। তারা জিভ বার করে রাখে শরীর ঠান্ডা করার জন্য। খোলা জিভের মাধ্যমে বায়ুতে মিশে থাকা আবির তাদের শরীরে যাওয়ার ঝুঁকি অনেকটাই বেশি। আবার তারা রং মিশে থাকা খাবার খেয়ে ফেলতে পারে। কেউ যদি রং মাখার পরে হাত ঠিক করে না ধুয়ে তাকে খাওয়ান তা হলেও অসুস্থ হয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে সারমেয়র।

যদি মনে হয় মুখে সরাসরি রং ঢুকে গিয়েছে, তা পেটে চলে যেতে পারে, তা হলে ঘরোয়া কিছু উপায় অবলম্বন করতে পারেন, জানাচ্ছেন পশুচিকিৎসক। একটু নুন-জল খাইয়ে দিলে কুকুর বমি করতে পারে। বমির সঙ্গে শরীরে যাওয়া রং বা বিষাক্ত জিনিস কিছুটা হলেও বেরিয়ে যাবে। অথবা ডিমের সাদা অংশ কয়েক চামচ খাওয়াতে পারেন। এতে থাকা প্রোটিন শরীরকে ক্ষতিকর উপাদান শোষণে বাধা দেবে।

রং মুখে চলে গেলে, হাঁচি, অস্বস্তি, শ্বাসকষ্ট— সারমেয়র এমন যে কোনও লক্ষণ দেখলেই তাকে নিয়ে দ্রুত পশুচিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement