স্বাদেগুণে মশলা ম্যাজিক

রোজকার জিরে-ধনে-আদা-রসুনে কী গুণ বা হিং ফোড়নের কী উপকার, তা জেনে নিয়ে ব্যবহার করলে রান্নায় স্বাদের পাশাপাশি পুষ্টির দিকটাও বজায় থাকবে।

Advertisement

সায়নী ঘটক

শেষ আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৭:২৮
Share:

প্রতীকী ছবি।

বাসনার সেরা বাসা রসনায়— এ কথা আমরা ছোট থেকে শুনে আসছি। কিন্তু যে সব মশলাপাতির গুণে রান্না স্বাদু হয়ে ওঠে, তার যথাযথ গুণবিচার আমরা করতে পারি কি? কোন মশলার কী পুষ্টিগুণ, কী ভাবে রান্নায় ব্যবহার করলে তা অক্ষুণ্ণ থাকবে— সে সব ভেবে অনেকেই রান্না করেন না। রোজকার জিরে-ধনে-আদা-রসুনে কী গুণ বা হিং ফোড়নের কী উপকার, তা জেনে নিয়ে ব্যবহার করলে রান্নায় স্বাদের পাশাপাশি পুষ্টির দিকটাও বজায় থাকবে।

Advertisement

পরিপাকের বন্ধু

রান্নায় ব্যবহৃত বেশির ভাগ মশলাতেই অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টস রয়েছে ভরপুর। খাবার হজম করতে সাহায্য করাও আর একটি প্রধান কাজ এ সব মশলার। পরিপাকের সময়ে বিভিন্ন খাবারের খাদ্যগুণ বিশ্লেষিত হয়ে শরীরে তার যে আত্তীকরণ ঘটে, এর নেপথ্য ভূমিকা কিন্তু বিভিন্ন মশলারই।

Advertisement

পুষ্টিবিদ সুবর্ণা রায়চৌধুরীর মতে, বাটা বা গুঁড়ো— যে ভাবেই মশলা খাওয়া হোক না কেন, তা তাজা অবস্থায় ব্যবহার করাই বাঞ্ছনীয়। ‘‘অনেকে মশলা বেটে ফ্রিজে রেখে ব্যবহার করেন, যার ফলে কয়েক দিন পরে এর গুণাগুণ চলে যায়। রেডিমেড আদা-রসুন পেস্ট বা ওই জাতীয় মিক্সেও প্রিজ়ার্ভেটিভ থাকে, যা ব্যবহার না করাই ভাল। মিক্সিতে বেটে বা গুঁড়িয়ে ফ্রেশ মশলা রান্নায় দিন। হলুদ, লঙ্কা, আদা, রসুন এগুলো কখনও পুরনো ব্যবহার করবেন না,’’ পরামর্শ দিলেন সুবর্ণা।

গুণাগুণ

গোটা গরমমশলা বা গুঁড়ো ব্যবহার করা হয় বিভিন্ন আমিষ এবং নিরামিষ রান্নায়। সবক’টির মধ্যেই অ্যান্টিব্যাকটিরিয়াল গুণ রয়েছে। লবঙ্গে অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। গ্যাসট্রিকের সমস্যা, দাঁত ও মাড়ির সমস্যায় যা খুবই কার্যকর। তবে রান্নায় গরমমশলার পরিমাণ সীমিত থাকাই ভাল। ফোড়ন কিংবা শেষে সামান্য ছড়িয়ে নেওয়া— এর অতিরিক্ত খেলে তা লিভারের সমস্যা ডেকে আনতে পারে।

ধনে-জিরে গুঁড়ো বা বাটা হিসেবে ব্যবহার করা হয় নানা ধরনের ভারতীয় রান্নায়। গ্যাস-অম্বল, ইনটেস্টিনাল অবস্ট্রাকশন দূর করতে কাজে দেয় ধনে ও জিরে। হজমে সাহায্য করতেও জিরের জুড়ি নেই। রান্নায় রাঁধুনিও ব্যবহার করেন অনেকে, যা অ্যালার্জি প্রতিরোধে, অ্যাজ়মা, স্ট্রেস, এপিলেপ্টিক ফিটের মতো সমস্যায় কাজে দেয়। গোটা সরষে বা সরষে বাটাও বাঙালি রান্নার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। সালফার থাকায় শরীরের টক্সিন দূর করে। এ ছাড়া হিংয়েরও অনেক গুণ। গ্যাসের সমস্যা কমাতে হিং উপকারী। গোলমরিচ স্যালাডে বা স্যান্ডউইচে ব্যবহার করা যায়। আবার স্টু বা রান্নায় দিতে পারেন। এর গুণও অনেক। সর্দি-কাশির সময়ে গলা পরিষ্কার রাখে গোলমরিচ।

মশলার কমবেশি

কিছু মশলা রয়েছে, যা বাঙালি রান্নায় তুলনামূলক কম ব্যবহার করা হয়, অবাঙালি রান্নায় আবার ফোড়ন বা বাটা হিসেবে এর বহুল ব্যবহার। যেমন, জোয়ান, মেথি, মৌরি ইত্যাদি। হজমের সাহায্যে জোয়ানের গুণ বলার অপেক্ষা রাখে না। এ ছাড়া রক্ত পাতলা করে কার্ডিয়াক প্রবলেম রোধে বা কিডনি স্টোনের মতো সমস্যায় কাজে দেয় জোয়ান। মৌরি হরমোনাল ব্যালান্স ঠিক রাখা থেকে শুরু করে ক্রনিক কাশির নিরাময়ে কার্যকর। মেথি ইনসুলিন ক্ষরণে সাহায্য করে রক্তে গ্লুকোজ়ের পরিমাণ কমাতে সাহায্য করে। তাই ডায়াবেটিক রোগীরা মেথি-মৌরীর জল খেতে পারেন। আয়রন, এসেনশিয়াল অ্যামাইনো অ্যাসিডে ভরপুর মেথি চুলের জন্য তো ভালই, তা ছাড়া ব্রেস্টফিডিং করানোর সময়ে মায়েদের জন্যও উপকারী।

রান্নার মশলার গুণাগুণ বলে শেষ করা যায় না। তবে সব কিছুই পরিমিত মাপে, তাজা অবস্থায় খেলে তাতে উপকার সর্বাধিক। জিরে, ধনে ইত্যাদি মশলা ফোড়ন দেওয়ার সময়ে যেন তা বেশি পুড়ে না যায়, তা হলেও গুণ নষ্ট হয়ে যায়। তাই সে দিকেও খেয়াল রাখা জরুরি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন