ব্রিটিশ লেখক অ্যান্ড্রু ও’হেগান। ছবি: ইনস্টাগ্রাম।
প্রথম বইয়েই উঠে এসেছিল বাবার কথা। সব যে খুব ভাল কথা, তেমন তো নয়। তবে সত্য বা সত্যের কাছাকাছি ছিল তা! তার পরেও বার বার তেমন নানা কথা এসেছে ব্রিটিশ লেখক অ্যান্ড্রু ও’হেগানের নানা বইয়ে। অন্দরমহলের কথা। সম্পর্কের কথা। কিন্তু সে সব তো সাধারণত লোকে বলতে চান না কারও সামনে। আর তিনি তা নিয়ে বই লিখে ফেললেন! ‘জয়পুর লিটারেচার ফেস্টিভ্যাল’-এ আড্ডার ফাঁকে আনন্দবাজার অনলাইনকে অ্যান্ডু বলেন, ‘‘আসলে যা-ই লেখা হোক না কেন, সবই তো ঘটে। আমরা কেউ তা মেনে নিই, কেউ এড়িয়ে যাই।’’
যা ঘটে, তা নিয়ে তো সাংবাদিকেরা লেখেন। সাহিত্যিকেরা কি সব সময়ে সত্য ঘটনাই লেখেন? কল্পনাও তো কাজ করে? ‘‘লেখা মানেই সাহিত্য। তা সে সংবাদ প্রতিবেদন হোক, স্মৃতিচারণ হোক কিংবা উপন্যাস। আসলে সবই কোনও একটা সময়ের কথা বলে, জায়গার কথা বলে। আদতে সত্যই,’’ বক্তব্য ‘আওয়ার ফাদার্স’-এর লেখকের।
জয়পুর সাহিত্য উৎসবে ব্রিটিশ লেখক অ্যান্ড্রু ও’হেগান। ছবি: সংগৃহীত।
নিজেই বলতে শুরু করেন বাবার কথা। জানান, বাবা মাদকাসক্ত ছিলেন। লেখকের ছেলেবেলা কেটেছে সে সব সামলে। কিন্তু তা নিয়ে কথা না বললে আসলে নিজের অভিজ্ঞতার অনেকটা ঢেকে চলতে হবে। তার তো কোনও মানে হয় না। অ্যান্ড্রুর বক্তব্য, ‘‘আমাদের চারপাশে যা ঘটে, সেটাই আমাদের অভিজ্ঞতা। অথচ সে সব না বলার চল আছে। এ আবার কেমন জীবন বলুন, যেখানে আসলে যেটা জানি, সেটা নিয়েই কথা বলব না! নিজের কাছেই তো তা হলে সত্যটা লুকিয়ে চলতে হবে। তার তো কোনও মানে দেখি না।’’ যাপন নানা প্রকার হয়। তাঁরটা নিজের মতো। তাই যখন লেখালেখি করবেন ঠিক করলেন, প্রথমেই নিজের বড় হওয়ার সময়ের কথা মনে করলেন। আর লিখলেনও।
শুধু পরিবারেই থেমে থাকেননি। লেখেন কর্মজীবনে আলাপ হওয়া মানুষদের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়েও। ২০১৪ সালে প্রকাশিত ‘ঘোস্টিং’ নামক বইয়ে। এতেও কি আটকায় না কোথাও? অ্যান্ড্রু কিন্তু এ সব প্রশ্নে বিচলিত হন না। উত্তর আসে, ‘‘সত্যিই তো বলছি। মিথ্যা যদি না লিখি, তা হলে সমস্যা কোথায়?’’ সম্পর্ক যে কারও সঙ্গেই সব সময়ে মধুর থাকে না, তা জানেন অ্যান্ডু। তা মনে করাতে থাকেন কথায় কথায়। এবং বলেন, ‘‘সে কারণেই তো গোটা বিশ্বের মানুষের সবচেয়ে বেশি উৎসাহ পারস্পরিক সম্পর্ক নিয়ে। অন্য কিছু নিয়ে এত উৎসাহ দেখবেন না!’’
আর যা নিয়ে পাঠকের উৎসাহ আছে, তা নিয়ে লেখায় কোনও ভুল খুঁজে পান না অ্যান্ড্রু। বলেন, ‘‘লোকে নিজের জীবনের কথা বলবে, সম্পর্কের কথা বলবে, সেটাই তো স্বাভাবিক। আমিও তা-ই করি।’’