সুখী দাম্পত্যের চাবিকাঠি লুকিয়ে কিছু সাংসারিক কৌশলে। ছবি: আইস্টক।
কাছের মানুষদের সঙ্গে সম্পর্ক ভাল রাখতেই আমরা উৎসাহী। কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে নিজেদের কিছু সমস্যাও এই সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করে। অনেক সময় আবার সে ভাবে কিছু করারও থাকে না, তবু সম্পর্ক নষ্ট হয়। বিবাহিত সম্পর্কের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। মনোবিদদের মতে, লিভ ইন রিলেশন হোক বা সাংসারিক বন্ধন, দীর্ঘ দিন একসঙ্গে থাকতে থাকতে দু’জন মানুষ পরস্পরের দোষ-ত্রুটিকেও চিনে ফেলে। ফলে মুগ্ধতা হারাতে থাকে ও সম্পর্ক তার জেল্লা হারায়।
তবে পুরনো সম্পর্কে যতই ভুল-ত্রুটি সামনে আসুক বা সমস্যার মুখোমুখি হোন না কেন, ক্ষত সরিয়ে আবার একসঙ্গে পথ চলাই অধিকাংশ মানুষের লক্ষ্য হয়ে থাকে। দাম্পত্য কলহ খুব সাধারণ ও স্বাভাবিক বিষয় হলেও তা মিটিয়ে আবার একসঙ্গে সংসার করাকেই প্রাধান্য দেন বেশির ভাগ মানুষ।বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সব দীর্ঘমেয়াদী সম্পর্ককে তরতাজা ও সুস্থ রাখতে মেনে চলতেই হয় বেশ কিছু কৌশল। সাংসারিক ক্ষেত্রে তবেই সমস্যা পেরিয়ে এগিয়ে চলা সহজ হয়।
ভালবাসার পরেও তা প্রকাশের সমস্যা, জটিলতা ও নিত্য সাংসারিক ঝঞ্ঝাটের কবলে পড়ে পুরনো বোঝাপড়া অনেক নিচে চাপা পড়ে গিয়েছে কি? তা হলে তা মেরামত করতে আর সময় নেবেন না। জানেন কি, দাম্পত্য সম্পর্কে কী কী বিষয় মাথায় রাখলে সম্পর্ক সুন্দর হবে?
আরও পড়ুন: এ সব কৌশলেই পর্নোগ্রাফির নেশা থেকে সন্তানকে দূরে রাখুন
একে অন্যের কাজে সাহায্য করুন।
যোগাযোগ: আধুনিক কর্মব্যস্ত যুগে প্রত্যেকই নিজের নিজের কাজ ও জগৎ নিয়ে ব্যস্ত। দু’জনেই চাকুরিজীবী হলে এই ব্যস্ততা আরও বাড়ে। তাই প্রতি দিনের যোগাযোগের ক্ষেত্রে সচেতন হোন। অনেকেই হোয়াট্সঅ্যাপ বা এসএমএসের মাধ্যমে যোগাযোগ বজায় রাখেন। তবে মনোবিদদের মতে, যোগাযোগের ক্ষেত্রে ‘ভার্বাল’ হোন। দূরে থাকলেও চেষ্টা করুন প্রতি দিন ফোন করতে। প্রিয়জনের কণ্ঠস্বরের প্রতি মানুষের যে আসক্তি থাকে, কয়েকটা লেখা শব্দ তার পরিপূরক হয় না। তাই যোগাযোগ বাড়ানোর চেষ্টা করুন।
আলোচনা: বন্ধুত্ব রাখতে পারলে তো খুবই ভাল। যে কোনও সম্পর্কেই বন্ধুত্ব থাকলে তা সবচেয়ে সুন্দর হয়। কিন্তু যদি বন্ধুত্বের ছোঁয়াচ প্রথম থেকেই আলগা থাকে, তা হলে অন্তত এমন একটা সমীকরণ বজায় রাখুন যেখানে দাঁড়িয়ে যে কোনও সমস্যা বা প্রয়োজন নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করা যায়। গোপনীয়তা যত কমবে, ততই সহজ হবে সম্পর্কের রসায়ন। ঝগড়াঝাঁটি মেটাতেও আলোচনার জায়গা প্রশস্ত রাখুন। ইগো সরিয়ে সহজ হোন আলোচনায়।
মনে রাখা:সুখী দাম্পত্যের সমীকরণ তৈরিতে বেশ কিছু ভুলে যাওয়াকে বাদ দিতে হবে প্রথম থেকেই। সঙ্গীর জন্মদিন বা নিজেদের বিয়ের তারিখ— উপহার দিতে পারুন বা না পারুন অন্তত ভুলে যাবেন না। বরং সে দিনটা নিজেদের মতো করে কাটানোর প্রস্তাব দিন। বাড়ির যে কোনও অনুষ্ঠান বা ঘরোয়া আড্ডায় অতিথিদের সঙ্গে সময় কাটানোর মাঝেই টুকটাক খেয়াল রাখুন তাঁরও। এতে সঙ্গী আপনার কাছে তাঁর গুরুত্বের বিষয়ে নিঃসন্দেহ থাকবেন।
আরও পড়ুন: শরীরের যত্ন নেওয়ার জন্য হাতে বেশি সময় নেই? এই সব মেনে হার্টকে রাখুন বিপন্মুক্ত
একসঙ্গে খাওয়ার অভ্যাস আয়ত্তে আনুন।
সময়: যত ব্যস্তই থাকুন না কেন, দিনের মধ্যে অন্তত কিছুটা ব্যক্তিগত সময় রাখুন। সে সময় একসঙ্গে গল্প করতে পারেন, চাইলে টিভি দেখা বা যে কোনও বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে পারেন। সারা দিনে সময় না পেলে অন্তত সপ্তাহে একটা দিন সময় রাখুন সঙ্গীর জন্য। বছরে এক-দু’বার বেড়াতেও যান একসঙ্গে। পারিবারিক বন্ধনের ক্ষেত্রে এই চেনা পরিবেশের বাইরে গিয়ে ক’টা দিন একসঙ্গে কাটিয়ে আসা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
কাজ বদল: মাঝে মাঝে পরস্পরের কাজের চাপ কমাতে অন্যের কাজ নিজে করে দিন। এমনিতেই ছেলেদের কাজ, মেয়েদের কাজ বলে সাংসারিক কাজে কোনও প্রভেদ হয় না। সেই ভেদাভেদ তৈরি করে নিই আমরাই। সম্পর্কে নতুন মশলা যোগ করতে এ ওর কাজে সাহায্য করুন, কখনও সখনও সে কাজ সেরেও দিন নিজেই।
খাওয়া: সপ্তাহে এক দিন বা মাসে এক দিন বাইরে খেতে যেতেই হবে এমনটা নয়। তবে চেষ্টা করুন অন্তত একটা বেলা একসঙ্গে খেতে বসতে। খাওয়ার সময় নানা পারিবারিক আলোচনা, গল্প ও হাসিঠাট্টায় পরিবেশ হালকা যেমন হয়, তেমনই সঙ্গীর খাওয়ার পরোয়া না করে নিজে খেয়ে নিলেন, এমন অভিমানও কমানো যায়।
আরও পড়ুন: শহর জুড়ে যেন টার্কির মরসুম
গ্রাফিক: তিয়াসা দাস।
যৌন জীবন: সুস্থ ও স্বাভাবিক পারিবারিক জীবন বজায় রাখতে যৌন জীবনের ভূমিকা বিরাট। মানসিক উদ্বেগ কমাতেও এর জুড়ি নেই। তাই শারীরিক চাহিদা অনুযায়ী সুস্থ যৌন জীবন বজায় রাখুন। যৌনতার সময় যৌথ ইচ্ছা ও চাহিদাকেই গুরুত্ব দিন।
শারীরিক পরিবর্তনকে গুরুত্ব: বয়সের সঙ্গে সঙ্গে নারী-পুরুষ নির্বিশেষ কিছু শারীরিক পরিবর্তন আসে। সে সবের আঁচ এসে পড়ে যৌন জীবনেও। সে ক্ষেত্রে ধৈর্য ধরতে সিখুন। খুব সমস্যা এলে চিকিৎসকের সাহায্য নিন, কিন্তু কোনও ভাবেই সঙ্গীর পক্ষে অপমানজনক, এমন কোনও কাজ বা মন্তব্য করবেন না।
(ইতিহাসের পাতায় আজকের তারিখ, দেখতে ক্লিক করুন — ফিরে দেখা এই দিন।)