বাঙালির শীতের ছুটি। সঙ্গে ‘হাফ ছুটি’ মুরগিরও। শহরবাসীর অতি আহ্লাদের সেই পাখিকে ক’দিনের জন্য টেক্কা দিতে কোমর বেঁধে তৈরি উৎসবের অতিথি।
টার্কি।
তবে এ পাখি শুধু পাখি নয়, একে একটি আস্ত ছুটির মেজাজ বললেও কম বলা হয়। তার নাম শুধু টার্কিও নয়। বড়দিনের মরসুমে বিশ্ব জুড়ে এই পাখির আহ্লাদের ডাকনামটাই বরং শোনা যায় বেশি। ‘ছুটির টার্কি’। শুধু টার্কি বলে একে ডাকেন আর ক’জনে! শহর কলকাতাও ছুটির টার্কিকে রীতিমতো আপন করে নিয়েছে গত কয়েক বছরে।
মার্কিন মুলুকে ‘থ্যাঙ্কসগিভিং’ ঘিরেই নৈশভোজের টেবিলে এর উত্থান। কালে কালে এমনই জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে টার্কি, যে রসিকতা করে বেঞ্জামিন ফ্র্যাঙ্কলিন এক বার বলেছিলেন, সে দেশের জাতীয় এমব্লেম হিসেবে অন্য কোনও পাখি নয়, টার্কিরই জায়গা হওয়া উচিত। তেমনটা না ঘটলেও আমেরিকা ছাড়িয়ে মোটামুটি গোটা বিশ্বের মন জয় করে দেশে দেশে স্থান করে নিয়েছে ‘থ্যাঙ্কসগিভিং’-এর সেই জাতীয় ভোজ। উৎসবের খানা-পিনায় নাম করা ইংরেজরাও মার্কিনি ‘নিউ ওয়ার্ল্ড’ থেকে শিখেই বড়দিনে টার্কি রোস্ট খাওয়া শুরু করেন বলে শোনা যায়।
ফলে বিলেত ঘুরে, সাহেবদের হাত ধরে আরও নানা ভিন্ দেশি সুখাদ্যের মতো টার্কিও এসে পৌঁছয় এ উপমহাদেশে। তবে এই মার্কিন সন্তানকে বিশেষ নাগালে পাওয়া যেত না বহুকাল। কিছু ক্লাবে সাহেবদের ডিনার টেবিলে দেখা গেলেও আমজনতা টার্কি হইতে বঞ্চিতই থেকেছে অনেক দিন পর্যন্ত। এমনকি, কয়েক বছর মার্কিন দেশে কাটিয়ে দেশে ফিরে আসা বঙ্গসন্তানদের টার্কির জন্য হা হুতাশও কম শোনা যায়নি। নিউ মার্কেটে শীতের সময়ে খান কয়েক টার্কির দেখা মিললেও তার দাম বিশেষ আয়ত্তের মধ্যে থাকত না বলেই দুঃখ ছিল অনেকের।
গত কয়েক বছরে একটু একটু করে বদলেছে ছবিটা। বিশ্বায়নের জোয়ারে সার্থক হয়েছে টার্কির বিশ্বজয়। শুধু শহর কলকাতার সাবেক ক্লাব, পাঁচতারা হোটেল আর পার্ক স্ট্রিট পাড়ার সাহেবি রেস্তরাঁর টার্কি স্যালাড, রোস্টেড আর স্টাফড্ টার্কিই নয়, এখন প্রায় পাড়ায় পাড়ায় বড়দিনের ভোজে টার্কির বায়না মেটানোর ব্যবস্থা চলছে।
ভোজন-বিলাসী বঙ্গসন্তানদের এক দিনের মার্কিনী আমেজ দিতে পূর্ব কলকাতার চ্যাপ্টার টু-তেও থাকছে রীতিমতো সাবেকি স্বাদের টার্কি রোস্ট ইন ক্র্যানবেরি সস্ আর রোস্টেড টার্কি ইন রেড ওয়াইন সস্। শেফ সুশান্ত হালদার বলছিলেন, এই সময়টায় অনেকে আবার বিশেষ ছোঁয়াও চান টার্কি-ভোজের সময়ে। তখন তিনি শেফস স্পেশ্যাল চিজ় সস্ও করে দেন তিনি। সাবেক স্বাদের টার্কি রোস্ট থাকছে বিমানবন্দর চত্বরের হোটেল হলিডে ইন, পার্ক প্যাভিলিয়নের মেনুতেও।
টুকিটাকি মুখরোচকে নাম করে ফেলা হোয়াট্সঅ্যাপ কাফে আবার এনেছে টার্কি কাটলেট। সল্টলেকের ক্যাভিয়ের আবার নাম করেছে অন্য স্বাদের টার্কিতে। বড়দিনের মরসুমেও সেখানে মিলছে গন্ধরাজ টার্কি, টার্কি মসালা। মার্কিন দেশে মুখে মুখে ঘোরে, দলবল ছাড়া টার্কি জমে না। গোটা টার্কির রোস্ট কম মানুষে শেষ করাও সম্ভব নয়। তাই বালিগঞ্জের আহার-এ ক্রিসমাস ইভের বুফেতে থাকছে রোস্ট করা টার্কির স্লাইস।
শহর জুড়ে যেন এ ভাবেই জাঁকিয়ে বসছে টার্কির মরসুম। পারদ পতনের সঙ্গে মাংসপ্রেমীদের বচ্ছরকার টার্কি-বিলাস জমে উঠছে আরও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy