পুরনো দিনের লোহা, অ্যালুমিনিয়াম বা স্টেনলেস স্টিলের কড়াইয়ের বদলে হেঁশেলে জায়গা করে নিয়েছে ননস্টিক তাওয়া থেকে প্যান। ননস্টিক তাওয়ার সুবিধা হল, অল্প তেলেই রান্না হয়, চোখের নিমেষে খাবার নীচ থেকে পুড়ে যায় না।
ব্যবহারে সুবিধা হলেও, ননস্টিক বাসনে টেফলনের কোটিং থাকে, যা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। কারণ, টেফলন হল এক ধরনের ফ্লিউরোপলিমার, যা অতিরিক্ত গরম হলে বা তাতে হাতা-খুন্তির ঘষা লাগলে তা থেকে ফ্লুয়োরাইড় বেরিয়ে মিশতে পারে খাবারে। এই ফ্লুয়োরাইড মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের জন্য ভাল নয়। তা ছাড়া, এটি থেকে ক্যানসারের ঝুঁকিও বাড়ে। তাই নির্দিষ্ট সময় অন্তর এই ধরনের বাসন পাল্টে ফেলা জরুরি।
আরও পড়ুন:
ননস্টিক প্যান ব্যবহার করাই যায়। তবে হাতের কাছে যদি লোহার কড়াই থাকে, সেটিকেও কাজে লাগানো যায় ননস্টিকের মতোই।
প্রথমেই লোহার কড়াই গরম জলে ধুয়ে নিতে হবে। সাবান দেওয়ার দরকার নেই। তার পর সেটি পরিষ্কার করে মুছে নিতে হবে। ২-৩ মিনিট মাঝারি আঁচে তাওয়া বা কড়াই গরম হওয়ার পর ব্যবহার করতে হবে রান্নার তেল। যে তেলের ধূমাঙ্ক (স্মোক পয়েন্ট) বেশি (তিলের তেল, সূর্যমুখীর তেল), সেটি ব্যবহার করাই ভাল। তেলের স্মোক পয়েন্ট হল সেই তাপমাত্রা, যেখানে তেল গরম করলে তা থেকে ধোঁয়া বের হতে শুরু করে এবং তেলটি ভাঙতে শুরু করে। স্মোক পয়েন্টের উপরে গেলেই তেলের পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়ে ক্ষতিকর যৌগ তৈরি হয়।
তেল দেওয়ার পর যোগ করতে ১ চামচ নুন। এতে ধাতব ছিদ্রগুলি উন্মুক্ত হবে। নুন একটু গরম হলে কাগজ বা কাপড়ের সাহায্যে কড়াই পরিষ্কার করে নিন। তার পরে আবার তেল দিন। ৫-৭ মিনিট কম আঁচে গরম করার পর অতিরিক্ত তেল ঢেলে ফেলুন। কড়াই পরিষ্কার নিলেই সেটি ননস্টিকের মতো কাজ করবে।
রন্ধনশিল্পী সঞ্জীব কপূর বলছেন, এমন লোহার কড়াইতে কী ভাবে রান্না করা উচিত আর কী করা ঠিক নয়।
১। পেঁয়াজ আড়াআড়ি ভাবে কেটে তেলে ডুবিয়ে সেটি লোহার কড়াইয়ে বুলিয়ে দিন। তেল সব জায়গায় সমান ভাবে লাগবে। তার পর রান্না করুন। এতে ভাজাভুজি চট করে আটকে যাবে না।
২। লেবু, ভিনিগার যুক্ত বা টম্যাটো দেওয়া রান্না লোহার কড়াইয়ে এড়িয়ে চলতেই বলছেন রন্ধনশিল্পী। কারণ, লেবু বা ভিনিগারের অ্যাসিড যুক্ত উপাদানের সঙ্গে লোহা বিক্রিয়া করে। এতে খাবারে ধাতব গন্ধ চলে আসতে পারে। রান্না যদি একান্তই করতে হয়, রান্নার পর নির্দিষ্ট পাত্রে খাবার ঢেলে রাখুন।
৩। শাক, ডাল, মাংস, মাছ, যে কোনও রান্নাই লোহার কড়াইতে করা যায়। তবে খাবারে ভিটামিন সি যুক্ত হলে (যেমন পাতিলেবুর রস, আমলকিতে থাকে) আয়রন শোষণ বেড়ে যায়। তাই কারও আয়রন খাওয়ায় নিষেধ থাকলে, সাবধান হওয়া প্রয়োজন।