আবহাওয়া বদলের সময় অসুখ ঠেকাতে সাবধান হোন এখন থেকেই। ছবি: শাটারস্টক।
কয়েক দিন আগেই যাদের শত্রু মনে হচ্ছিল, এখন আবার তাদেরই একান্ত আপন করে জায়গা দিয়েছি একেবারে বিছানায়। সত্যিই বসন্তের অকাল বর্ষণ ফিরিয়ে এনেছে কাঁথা-কম্বলকে। এখন ভোররাতে বেশ শীত শীত ভাব, তাপমাত্রা বেশ মনোরম। অন্য দিকে দুপুরে চড়া রোদের আঁচ গায়ে লাগলে গরমের ঠেলায় বিরক্ত লাগে। দিন-রাতের তাপমাত্রার এই ওঠানামার ফলে কিছু কিছু ভাইরাস আর ব্যাকটিরিয়াদের পোয়া বারো।
এই আবহাওয়া ওদের বংশ বিস্তারের জন্যে একেবারে আদর্শ। হু হু করে বেড়ে ওঠে জীবাণুরা। আর তাপমাত্রার এই দ্রুত পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে না পেরে অনেকেই আক্রান্ত হতে পারেন জ্বর-সর্দি-কাশিতে।
ঋতু পরিবর্তনের ফলে জ্বরের এই প্রকোপ নতুন কিছু নয়। প্রত্যেক বছরই আবহাওয়া বদলে যাওয়ার সময় একই ঘটনার পুনরাবৃতি হয়। শুধু প্রয়োজন কিছু জরুরি সতর্কতা মেনে চলা।
আরও পড়ুন: ঘরে ড্যাম্প পড়তে পারে দামি সিমেন্ট-রং ব্যবহার করলেও, মুক্তির উপায় জানেন?
শরীর-সাস্থ্য নিয়ে এ সব তথ্য আগে জানতেন?
বুকে সর্দি বসলে সংক্রমণের ভয় বাড়ে।
বাচ্চা ও বয়স্কদের সাবধানে রাখুন
এক্সট্রিম এজ গ্রুপ অর্থাৎ শিশু আর বয়স্কদের ঋতু পরিবর্তনের অসুখ-বিসুখের ঝুঁকি তুলনামূলক ভাবে বেশি। জ্বরজারির পাশাপাশি বুকের সংক্রমণ অর্থাৎ বুকে সর্দি বসে শ্বাসকষ্টর সম্ভাবনা বেড়ে যায়। বিশেষ করে যাঁদের অ্যাজমা, সিওপিডি অর্থাৎ ক্রনিক অবস্ট্রাক্টিভ পালমোনারি ডিজিজ এবং আইএলডি নামক ফুসফুসের অসুখ আছে তাঁদের নিউমোনিয়ার ঝুঁকি বেশি।
এ ক্ষেত্রে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা না করালে রোগির অবস্থা গুরুতর হয়ে উঠতে পারে। এদের বাড়তি সাবধানতা দরকার। নিউমোনিয়া ও ইনফ্লুয়েঞ্জার টিকা যথেষ্ট কার্যকর। ছোটদের তো বটেই, বাড়ির বয়জ্যেষ্ঠ মানুষদেরও এই টিকা দিয়ে রাখলে জটিল সমস্যার হাত এড়ানো যায় অনায়াসে। যাঁরা ধূমপায়ী এবিং সিওপইডির শিকার, তাঁদের সিগারেট ছেড়ে তো দিতেই হবে, সঙ্গে টিকাও নিয়ে নেওয়া উচিত।
ন্যাচারাল কিলার সেল
বৃষ্টিতে ভিজলে বা ঠান্ডা লাগলে সকলেরই যে জ্বর বা শ্বাসনালীর সংক্রমণ হবে, তা কিন্তু নয়। চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা দেখেছেন যে যাদের শরীরে ন্যাচারাল কিলার সেল KLRD1কম থাকে তাঁরাই চট করে অসুস্থ হয়ে পড়েন। জ্বর ও সর্দি-কাশির সঙ্গে সঙ্গে শরীর জুড়ে ব্যথাও হয়। তবে এতে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই৷ ভাইরাসের কারণে জ্বর হলে সাধারণত সাত দিনের মধ্যেই ভাল হয়ে যায়। তবে জ্বরের সঙ্গে শুরু হয় সর্দি-কাশি আর গলাব্যথাও থাকতে পারে।
কখনও কখনও এর সঙ্গে জেঁকে বসতে পারে ব্যাকটিরিয়ার সংক্রমণও। তখন অ্যান্টিবায়োটিক লাগতে পারে। তবে এ বারে সোয়াইন ফ্লু-র প্রকোপ বেড়েছে। তাই জ্বর হলে হলে কোনও ঝুঁকি না নিয়ে এক বার ডাক্তারের কাছে যেতেই হবে। কোনও প্রি এক্সিস্টিং অসুখ থাকলে ( হাঁপানি, ডায়াবিটিস, সিওপিডি) বাড়তি সাবধানতা নিতেই হবে।
আরও পড়ুন: জিম বা ডায়েটের সময় নেই? ঘাম না ঝরালেও এই পানীয় কমাবে মেদ
সংক্রামক অসুখের টিকা নেওয়ান শিশু ও বয়স্কদের।
এই সময় বাতাসে ধুলোর পরিমাণ বেশি থাকে। সঙ্গে শিমুল পলাশ সজনে ফুলের রেণু বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে। অ্যালার্জিজনিত হাঁচি-কাশি-সর্দি ও অ্যাজমার অ্যাটাকের প্রবণতা খুব বেড়ে যাচ্ছে। যাঁদের অ্যালার্জি আছে তাঁরা অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে প্রয়োজনীয় ওষুধ ব্যবহারে করবেন। অ্যান্টি অ্যালার্জিক নাগাড়ে না খেয়ে ডাক্তারের পরামর্শে ওষুধ খান। অ্যালার্জিক অ্যাজমার হাত থেকে রেহাই পেতে প্রতিরোধক যে ইনহেলার ব্যবহারে করতে পরামর্শ দিয়েছেন তা অবশ্যই ইনহেল করতে হবে। নিজের ইচ্ছা মত বন্ধ করে দিলে চলবে না।
ডায়রিয়া ও অন্যান্য পেটের সমস্যা
দুপুরের গরমে রাস্তায় বেরিয়ে অনেকেই যেখানে-সেখানে জল পান করেন। অনেকে আবার পথের পাশের দোকানের রঙিন শরবৎ চোখ-কান বুজে খেয়ে ফেলেন। এর থেকে পেটের সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যায়। ডায়রিয়া তো হয়ই, এমনকি এ সব গ্রহণ করার কারণে টাইফয়েড, প্যারাটাইফয়েড, জলবাহিত হেপাটাইটিসের কারণে জন্ডিস হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই বাইরের জল এড়িয়ে চলুন। সঙ্গে জল নিয়ে বাইরে যাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। ঋতু পরিবর্তনের ধাক্কায় শরীরটা যেন বিগড়ে না যায় সে দিকে খেয়াল রাখার দায়িত্ব কিন্তু আপনার নিজেরই। অসুখ দূরে সরিয়ে দিয়ে বসন্ত উপভোগ করুন।