new born baby

কলিক পেনের কষ্ট দূরে থাকুক

সদ্যোজাতদের মধ্যে কলিক পেন স্বাভাবিক। কিন্তু কেন হয় তা? উপশম হবে কী ভাবে? জেনে নিন

Advertisement

 ঈপ্সিতা বসু

শেষ আপডেট: ২৬ জুন ২০২১ ০৮:২৯
Share:

কান্না শিশুর স্বাভাবিক প্রবৃত্তি, বিশেষত জন্মের পরে প্রথম তিন মাস। কিন্তু সদ্যোজাত কোনও কারণ ছাড়াই ঘন ঘন কাঁদলে মা-বাবার জন্য তা চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। এই কান্নার কারণ হতে পারে কলিক পেন। শিশু চিকিৎসক চয়ন গঙ্গোপাধ্যায়ের মতে, ‘‘কলিক কোনও মারাত্মক অসুখ নয়। সাধারণত কলিক বলতে ইনফ্যান্টাইল কলিককেই বোঝায়। জন্মের কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই প্রতি ১০ জন বাচ্চার মধ্যে এক জন কলিকে আক্রান্ত হয়। দিনে তিন ঘণ্টা, সপ্তাহে তিন দিনের বেশি আর তিন সপ্তাহ ধরে যদি কোনও বিশেষ কারণ ছাড়াই একটানা বা একটু পর পর অনেকক্ষণ শিশু কেঁদে যায়, তা থেকে রোগনির্ণয় করা হয়। শিশুর জন্মের ছ’ সপ্তাহ থেকে চার মাস পর্যন্ত এটি হতে পারে।’’

Advertisement

উপসর্গ কী?

কলিক হলে বাচ্চা রোজ একই সময়ে কাঁদে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কান্নার সময়টা হয় সন্ধের দিকে বা রাতে। হঠাৎ চিৎকার করে কেঁদে উঠতে দেখা যায়। অনেক সময়ে কাঁদতে কাঁদতে চোখমুখ লাল হয়ে যায়। অনেক বাচ্চাই কাঁদতে কাঁদতে পা পেটের কাছে তুলে নিয়ে আসে। অনেকের হাত মুঠো হয়ে যায়। এই ব্যথার জন্য শিশুর ঘুমেরও অনিয়ম হয়। অনেক সময়েই বমি, ডায়রিয়ার লক্ষণও প্রকট হয়। সঙ্গে তাপমাত্রাও ১০০-র উপরে উঠতে শুরু করলে বুঝতে হবে কলিকের কারণে এমন হচ্ছে।

Advertisement

প্রায় সব শিশুর কেন কলিক পেন হয়, তার কারণ নিয়ে চিকিৎসকেরা নিশ্চিত নন। তাও বেশ কিছু সম্ভাবনার কথা তুলে ধরলেন ডা. গঙ্গোপাধ্যায়। বাচ্চার খাদ্যতন্ত্র বড়দের মতো পরিণত নয়। আর সে কারণেই দুধ খাওয়ালে তা ঠিকঠাক হজম না হয়ে চলে যায় ক্ষুদ্রান্ত্রে। এ জন্য পেটে গ্যাস তৈরি হয়। এই গ্যাস খাদ্যনালি বেয়ে উঠে আসে উপরের দিকে। গ্যাসের সঙ্গে পাকস্থলীতে হজমে সহায়ক যে অ্যাসিড জমা হয়, তাকেও ঠেলে তুলে আনে। এই দুয়ের ব্যথা সহ্য করতে না পেরেই শিশুটি কেঁদে ওঠে। আবার বোতলে ভর্তি দুধ না থাকলে, দুধের সঙ্গে হাওয়াও চলে যেতে পারে পেটে। তা থেকেও গ্যাস তৈরি হয়। দুধে অ্যালার্জির কারণেও এমনটা হতে পারে। শিশুর খাদ্যতন্ত্র অপরিণত বলে অনেক সময়ে ল্যাকটোজ় সহ্য করতে পারে না।

কলিকের ব্যথায় কী করবেন?

ঘরোয়া কয়েকটি বিষয় লক্ষ রাখলেই কলিক থেকে শিশুটি মুক্তি পায়। ডা. গঙ্গোপাধ্যায়ের পরামর্শ, ‘‘এ ক্ষেত্রে শিশুদের বাবা-মাকে ধৈর্য ধরে রাখতে হবে। বাচ্চাকে শান্ত করতে হবে। আদর করে ধীরে ধীরে কান্না থামানোর চেষ্টা করতে হবে। শিশু বিরক্ত হয়, এমন কোনও কাজ করা যাবে না।’’ আরও লক্ষ রাখতে হবে, বাচ্চাকে দুধ খাওয়ানোর সময়ে ওর মাথাটা যেন একটু উঁচুতে থাকে। খাওয়ানোর পরে বাচ্চার পেটের গ্যাস বার করিয়ে দিতে হবে। তার জন্য বাচ্চাকে কাঁধে শুইয়ে পিঠ মালিশ করে দিন। আবার বাচ্চাকে খাটে শুইয়ে ছোট্ট পা দুটো সাইকেল প্যাডলিংয়ের মতো একবার ভাঁজ করুন আর সোজা করুন। ঘরে হালকা আলো জ্বালান। ওকে আরাম দিতে স্নানের আগে রোজ বডি অয়েল দিয়ে পেটের অংশে বৃত্তাকারে হাত ঘুরিয়ে মালিশ করুন।

চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন

এর তেমন কোনও ওষুধ নেই। গ্যাসের ব্যথা কমানোর ওষুধ বা চিকিৎসকের পরামর্শ মতো সিমথিকোন ড্রপ দেওয়া হয়। কান্নার সঙ্গে বমি, ডায়রিয়া ও জ্বর হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। বাচ্চার অন্য কোনও রোগ না থাকলে এবং ওজন ঠিক থাকলে, এটিকে কলিক হিসেবে ধরে নেওয়া হয়।

কলিক মারাত্মক অসুখ নয়। বাচ্চার বয়স চার-পাঁচ মাস হলে এ ব্যথা ধীরে ধীরে চলেও যায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন