কার্টুন না চালালে খায় না বাচ্চা! কী করবেন?

কার্টুনের প্রতি আসক্তি মোকাবিলায় সবচেয়ে মোক্ষম দাওয়াই হল, বাচ্চার হাত ধরে বাইরে বেরিয়ে পড়া। লিখেছেন মনোবিদ শুদ্ধেন্দু চক্রবর্তী।বাচ্চাদের ক্ষেত্রে কার্টুনের জনপ্রিয়তার কারণ প্রধানত তিনটি। এক, গল্প বলার ধরন। দুই, অডিও-ভিস্যুয়াল আবেদন। তিন, উজ্জ্বল রঙের ব্যবহার। শুধু জনপ্রিয়তাই নয়, কার্টুনের চরিত্র যত সহজে শিশুদের কাছে ‘রোলআইকন’ তৈরি হতে পারে, তত সহজে বাস্তবজগতের কোনও চরিত্র পারে না।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০১৮ ০২:৪২
Share:

নিজস্ব চিত্র।

একটা মজার ব্যাপার ঘটল। বাড়ি ফিরে দেখি খাটের উপর বসে আমার সাড়ে সাত বছরের ছেলে বিড়বিড় করছে ইচি-নি-সান-শি-গো-রোকু। তার গলার স্বর বদলে দিব্বি নাকিনাকি হয়েছে। ঘাবড়ে গিয়ে জিগ্যেস করলাম ওকে। উত্তর দিতে গিয়ে সে আমার মূর্খতা দেখে হেসেই কুটিপাটি। বলল, ‘‘এমা, এটাও জানো না। আমি তো জাপানি ভাষায় এক দুই তিন চার গুনলাম।’’ আমার ছেলের স্কুলে ওর ক্লাসে জাপানি ভাষা শেখানো হয় না, আমি জানি। তা হলে ও এই সব জানল কী করে।

Advertisement

রহস্যের সমাধানও সেই করে দিল। জানাল, শিনচান দেখে দেখে ও এটা শিখেছে। আর যে নাকিনাকি গলাটা আমি শুনছিলাম, ওটা শিনচানের গলার নকল।

প্রথাগত শিক্ষার বদলে অ্যানিমেশনের মাধ্যম যে শিশুশিক্ষায় অনেক বেশি শক্তিশালী এ কথা প্রমাণিত। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে কার্টুনের জনপ্রিয়তার কারণ প্রধানত তিনটি। এক, গল্প বলার ধরন। দুই, অডিও-ভিস্যুয়াল আবেদন। তিন, উজ্জ্বল রঙের ব্যবহার। শুধু জনপ্রিয়তাই নয়, কার্টুনের চরিত্র যত সহজে শিশুদের কাছে ‘রোলআইকন’ তৈরি হতে পারে, তত সহজে বাস্তবজগতের কোনও চরিত্র পারে না।

Advertisement

সমীক্ষা বলছে, এই প্রবণতা তাদের সেই চরিত্র অনুকরণের দিকে এগিয়ে দেয়। এত বড় সুযোগ ব্যবসায়ী দাদাবাবুরা হাতছাড়া করবেন কেন? তাই সেই চরিত্রকে আরও জনপ্রিয় করতে তৈরি হয় নানান বিশেষ সংস্করণের ব্যবহারিক দ্রব্য। যেমন, অ্যাভেঞ্জারসদের ছবি সাঁটা টিফিন বাক্স, ডোরেমন আঁকা জলের বোতল।

যে বাবা-মায়েরা তাঁদের আগামিকে সচ্ছ্বল করতে পাল্লা দিয়ে জীবিকাসন্ধানে ছুটে চলেছেন, তাঁরাও পড়ে গেলেন এই ঘূর্ণাচক্রে। সারাদিন নিঃসঙ্গ থাকা ছেলেমেয়েদের দিনের শেষে বাড়ি-ফেরত বাবা-মা খুশি করতে চান তাঁর প্রিয় কার্টুন চরিত্র দিয়েই। তাই কোনও বাচ্চা যদি কার্টুন না দেখতে দিলে দুপুরের ভাত খেতেও অস্বীকার করে, তাকে সে ভাবে দোষ দেওয়া যায় কি?

মনোবিদ কায়লা বইস আর ব্র্যাড বুশম্যান মিশিগান ইউনিভার্সিটিতে এই নিয়ে একটি সমীক্ষা করেন। গবেষণায় দেখা যায়, গড়পড়তা দুই থেকে পাঁচ বছরের শিশুরা সাধারণত সপ্তাহে ৩২ ঘণ্টা কার্টুন দেখে। ছয় থেকে এগারো বছরে এই সময় নেমে আসে ২৮ ঘণ্টায়। ৫৩ শতাংশ ক্ষেত্রে সেই সময়ে অভিভাবকের তত্ত্বাবধান থাকে না। কার্টুন দেখার সময় বদলে যায় শিশুদের আচার-আচরণ। নিরীহ বাধ্য ছেলে হয়ে উঠতে পারে হিংস্র। আবার, দেশীয় সংস্কৃতির বদলে চেপে বসতে পারে অজানা কোনও দেশের রীতি-রেওয়াজ। গুজরাতের একটি সমীক্ষা জানাচ্ছে, শতকরা আশি শতাংশ ক্ষেত্রেই এই পরিবর্তন আসে। এমনকি, আপাত গোবেচারা কার্টুন চরিত্র পরবর্তীতে সেই খুদে দর্শককে মাদকাসক্তির দিকেও এগিয়ে দিতে পারে।

তা হলে উপায়? সবার আগে সারা দিনে কার্টুন দেখার সর্বোচ্চ সময় বেঁধে ফেলতেই হবে দেড় ঘণ্টার গণ্ডিতে। সন্তর্পণে বেশি ক্ষতিকর কার্টুন থেকে শৈশবমনকে সরিয়ে আনতে হবে তুলনামূলক কম ক্ষতিকারক কার্টুনে। তবে এই সমস্যা মোকাবিলায় সবচেয়ে মোক্ষম দাওয়াই হল, বাচ্চার হাত ধরে বাইরে বেরিয়ে পড়া। আউটডোর গেমস আর ফ্যামিলি আউটিং মাঝেমধ্যে হলেও মহৌষধ হতে পারে।

আর যদি ঘুমের সময় গল্পদাদুর মতো রূপকথা পড়ার অভ্যাস ফিরিয়ে আনা যায়, তা হলে তো আর কথাই নেই। কার্টুন দৈত্য নিধন হোক, এই ভাবেই না হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন