Night Queen Flower

রাতজাগা ফুল আর মিঠে গন্ধ

সূর্যাস্তের পরেই একটু একটু করে ফুটতে থাকে এ ফুল। সারা রাত ফুটে থাকে নিশিপদ্ম। এ গাছের যত্ন করবেন কী ভাবে? জেনে নিন সারা দিন কিন্তু প্রস্ফুটিত ফুলের দেখা পাবেন না। সন্ধে হওয়ার পর থেকেই একটু একটু করে পাপড়ি মেলতে শুরু করে নিশিপদ্ম।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০০:০১
Share:

দিনে কুঁড়ি, রাতে প্রস্ফুটিত নিশিপদ্ম (ডান দিকে)

‘নাইট কুইন’, ‘রাত কী রানি’ কিংবা ‘নিশিপদ্ম’... নামেই বোঝা যায়, এ ফুলের সঙ্গে রাতের যোগাযোগ আছে। এ ফুল শুধু রাতে ফোটে। ছাদে বা বারান্দায় এই গাছ একটা থাকলে, তাতে ফুল ধরলে দারুণ দেখায়। আর এ ফুলের গন্ধও ভারি মিঠে, উগ্র নয়। একটা গাছে একসঙ্গে অনেক নিশিপদ্মও ফোটে। রাতের অন্ধকারে গাছ আলো করে থাকে এই ফুল।

Advertisement

তবে এ ফুল ফোটার নির্দিষ্ট সময় আছে। সারা দিন কিন্তু প্রস্ফুটিত ফুলের দেখা পাবেন না। সন্ধে হওয়ার পর থেকেই একটু একটু করে পাপড়ি মেলতে শুরু করে নিশিপদ্ম। যত রাত বাড়ে, তত পাপড়ি খোলে। এ ফুল ফোটা দেখার জন্য সবচেয়ে ভাল সময় রাত বারোটা থেকে দুটো। ফুল পুরো ফুটতে ফুটতে প্রায় মাঝরাত। ভোররাত পর্যন্তও থাকে এই প্রস্ফুটিত নিশিপদ্ম। কিন্তু সকাল হলেই একেবারে কুঁকড়ে বুজে যায়। তবে গাছটি লাগালেই ফুল পাবেন না। তার জন্য কিন্তু বেশ অপেক্ষা করতেহবে। একে একে জেনে নিন নিশিপদ্মের রোজরুটিন কেমন হলে, তা গাছের জন্য ভাল।

Advertisement

নিশিপদ্মর রোজকাহন

পাথরকুচি পাতা থেকে যেমন গাছ বেরোয়, এ গাছও সে ভাবেই বাড়ে। এ গাছের পাতা মাটিতে পুঁতে দিতে হবে। দিনকয়েক অপেক্ষা করলে দেখা যাবে শিকড় বেরোতে শুরু করেছে। তখন সেই শিকড়সহ ছোট চারা নিয়ে বড় টবে ভাল করে মাটি দিয়ে পুঁতে দিন। গাছও বাড়তে থাকবে। অনেকে ব্রহ্মকমল আর নিশিপদ্ম একই ফুল বা গাছ ভেবে ভুল করেন। দুটো কিন্তু আলাদা গাছ।

• মনে রাখবেন, এ গাছ লাগানোর সঙ্গে সঙ্গে ফুল পাবেন না। গাছ বাড়লেও প্রথম বছরেই এ গাছে ফুল ধরে না। তার জন্য ধৈর্য ধরতে হবে। গাছ বড় হয়ে তাতে ফুল আসতে মোটামুটি বছর তিনেক সময় লাগে। কখনও চার বছর পরেও গাছে ফুল ধরতে পারে। তাই ফুল না ধরলেও প্রথম তিন বছর গাছের যত্নআত্তি করে যেতে হবে।

• এই গাছ কড়া রোদে না রেখে একটু ছায়ায় রাখলেই ভাল। কড়া রোদে গাছের ডাল হলুদ হয়ে যায়। তখন দেখতে ভাল লাগে না।

• সন্ধের পরে গাছ ঘরে নিয়ে আসতে পারেন। তা হলে সারা রাত ধরে গাছে ফুল ফোটাও দেখতে পাবেন। ভোর চারটের পর থেকে ফুল গুটিয়ে যায়। তাই সকাল বেলা দেখবেন পুরো ফুলটাই গুটিয়ে কুঁড়ি হয়ে গিয়েছে। নিশিপদ্মের শোভা দু’চোখ ভরে দেখতে গেলে দু’চোখের পাতা রাতে এক করা যাবে না। ক্যামেরায় তুলেও রাখতে পারেন ভিডিয়ো করে। এ ফুল ফুটতে শুরু করলে ধীরেধীরে এর মিঠে গন্ধও ছড়িয়ে পড়ে সারা ঘরে। সাদা রঙের এই ফুল লম্বা একটু চ্যাপ্টা ডালেই হয়ে থাকে।

• এ ফুলের বাহার গাছেই। ফুল তুলে ঘরে ফ্লাওয়ার ভাসে রাখলেও খুব একটা লাভ নেই। দিনের বেলায় তা কুঁড়িই থাকবে।

• এ গাছ টবেও হয়। একটু বড় টবে মাটি দিয়ে এই গাছ করতে পারেন। মাসে একবার সার দিলেই চলবে। মাঝেমাঝে গাছের গোড়ায় খোল দিতে পারেন। নাইট্রোজেনসমৃদ্ধ সার কম দেওয়াই ভাল এ গাছের জন্য। বরং পিএইচ ব্যালান্স ৫.৫ -৬.৫-এর মধ্যে থাকে, এমন ভাবে মাটি তৈরি করতে পারেন।

• নিয়মিত গাছে জল দিন। তবে গাছে জল দেওয়ার পরে দেখে নিন গাছের গোড়ায় যেন জল জমে না থাকে। জলনিকাশিও ভাল হতে হবে। না হলে গাছের শিকড় পচে যেতে পারে। এ গাছ একবার বেড়ে গেলে আর ভয় নেই। ভাল ভাবে বেঁচে থাকে। তবে সাবধান থাকতে হবে পোকামাকড় থেকে।

• বর্ষায় এই গাছে ফাঙ্গাল ইনফেকশন হতে পারে। পোকাও ধরতে পারে, তাই সাবধান। গাছের পাতায় স্পট দেখা দিচ্ছে কি না, খেয়াল রাখুন। ফাঙ্গিসাইড স্প্রে করতে পারেন। আর যদি দেখেন, পাতার বেশির ভাগ অংশ পোকায় খেয়ে গিয়েছে, তা কেটে সম্পূর্ণ বাদ দিয়ে দেওয়াই ভাল।

• প্রপ্যাগেট করতে চাইলে এই গাছের ফ্ল্যাট কাণ্ড বা পাতা থেকেও নতুন গাছ তৈরি করতে পারেন। তবে তার জন্য সেই পাতা বা কাণ্ডের অংশ কাগজে মুড়ে কিছু দিন অন্ধকারে রেখে দিতে হবে। ভাল করে তা শুকিয়ে গেলে তবে নতুন পাত্রে মাটি দিয়ে তাতে পুঁতে দিন।

• স্থানীয় নার্সারি বা অনলাইনে নিশিপদ্ম গাছ কিনতে পাবেন। তবে কেনার সময়ে ভাল করে দেখে নেবেন এর চারা একদম পরিষ্কার কি না! অর্থাৎ চারার কোনও পাতা বা কাণ্ডে যেন হলুদ বা মরচে ধরার মতো কোনও স্পট না থাকে। অনলাইনে কিনলে তা অবশ্য দেখার সুযোগ নেই। সবচেয়ে ভাল হয়, কোনও পরিচিতের বাড়িতে এই গাছ থাকলে একটা ডাল বা গাছের পাতা চেয়ে নিতে পারেন। তার থেকেই তৈরি করতে পারবেন নতুন গাছ।

• নিশিপদ্ম গাছ যেমন টবেও হয়, তেমনই মাটিতেও হয়। যদি অনেক ফুল চান, তা হলে বাড়ির বাগানে লাগাতে পারেন এই গাছ। আর এই ফুলের শোভা চার দেওয়ালের মাঝে ধরে রাখতে চাইলে টবে লাগানোই ভাল। গাছে ফুল এলে কিন্তু সেই ডালের দিকে খেয়াল রাখবেন। ফলের ভারে যেমন ডাল ঝুলে যায়, এ ফুলের ভারেও কিন্তু তা অনেকটা ঝুলে যায়।

এ গাছের বিশেষ যত্নের প্রয়োজন পড়ে না। আর পাঁচটা গাছের মতোই নিয়মিত যত্ন নিলে হেসেখেলে বাড়ে। তবে হেলাফেলাও করবেন না। এত সুন্দর একটা গাছ, নিয়মিত পরিচর্যা করলে আপনার বাড়ি সে আলো করে থাকবে বইকি!

ছবি সৌজন্যে: মৌসুমী মিত্র

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন