health

অতিরিক্ত ঋতুস্রাব অগ্রাহ্য করলে রক্তাল্পতার ঝুঁকি বাড়ে

ঋতুমতী হওয়ার পর যে কোনও মেয়েরই এই সমস্যা হতে পারে।

Advertisement

সুমা বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ জানুয়ারি ২০২১ ১৪:১৬
Share:

সমস্যা বাড়লে দ্রুত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।

২০১১ এর জনগণনা অনুযায়ী আমাদের দেশে ৩৩৬ মিলিয়ন ঋতুমতী মহিলা আছেন। তাঁদের মধ্যে ৫০ শতাংশেরই ঋতুস্রাব সংক্রান্ত নানা সমস্যায় ভোগেন। বিশেষ করে, অতিরিক্ত ঋতুস্রাবের সমস্যা নিয়ে জেরবার অনেকেই। গত ১০ বছরে সংখ্যাটা আরও বেড়ে গিয়েছে। সঠিক চিকিৎসার অভাবে এঁদের অনেকেই ক্রনিক অ্যানিমিয়া-সহ নানা সমস্যায় ভুগছেন। এমনটাই বললেন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ অভিনিবেশ চট্টোপাধ্যায়।
তবে রোগ নির্ণয় পদ্ধতির উন্নতি হওয়ায় এবং সচেতনতা বাড়ায় আগের থেকে অনেক বেশি রোগ ধরা পড়ছে। ঋতুমতী হওয়ার পর যে কোনও মেয়েরই এই সমস্যা হতে পারে। তবে দেখা গিয়েছে যে, সদ্য কিশোরী এবং ৪০ বছরের বেশি বয়সিদের অতিরিক্ত ঋতুস্রাবের ঝুঁকি বাড়ে। কারণ, কিশোরী বয়সে মেনার্কি শুরুর সময় এবং ৪০ বছর বয়সের পর ঋতুনিবৃত্তির আগে শরীরে সাময়িক ভাবে ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন হরমোনের তারতম্য হয়। এর ফলেই অতিরিক্ত ঋতুস্রাবের সমস্যা বাড়ে বলে জানালেন অভিনিবেশ। আবার অতিরিক্ত ওজনের কারণেও হেভি ব্লিডিং হতে পারে।
অতিরিক্ত ঋতুস্রাবের কারণ
• জরায়ুতে ফাইব্রয়েড বা টিউমার।
• ওভারিতে কোনও সমস্যা থাকলে ঠিক মতো ডিম্বাণু নিঃসরণ হয় না। তাতে প্রোজেস্টেরন হরমোন উৎপাদন কমে গিয়ে এই সমস্যা দেখা দেয়।
• জরায়ু লাইনিং এ বিনাইন (অর্থাৎ ক্যানসার নয় এমন) পলিপ হলে।
• জরায়ুর এন্ডোমেট্রিয়ামের সমস্যা।
• জন্ম নিয়ন্ত্রণের জন্য ইন্ট্রা ইউটেরাইন ডিভাইস ব্যবহার করলে তার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ায়।
• সারভিক্সে সংক্রমণ।
• গর্ভপাত।
• ইউটেরাস ও সারভিক্সের ক্যানসার হলেও অতিরিক্ত ঋতুস্রাব হয়।
• রক্তের কিছু বিরল অসুখে অনেক সময় হেভি ব্লিডিং হয়।
• হরমোন ওষুধ, রক্ত পাতলা করার ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রয়ায় অতিরিক্ত ঋতুস্রাবের ঝুঁকি থাকে।
• লিভার ও কিডনির অসুখ থাকলেও এই সমস্যা হতে পারে।

যে সব পরীক্ষা জরুরি
অতিরিক্ত ঋতুস্রাব হলে চিকিৎসক কিছু পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দেন বলে জানালেন অভিনিবেশ চট্টোপাধ্যায়।
• রক্তের হিমোগ্লোবিন, রক্ত তঞ্চনের সমস্যা এবং থাইরয়েড হরমোনের ভারসাম্য বজায় আছে কিনা জানতে রক্ত পরীক্ষা করানো দরকার।
• সারভিক্সে সংক্রমণ বা ক্যানসার আছে কিনা জানতে প্যাপ স্মিয়ার পরীক্ষা করা হয়।
• জরায়ু থেকে টিস্যু সংগ্রহ করে এন্ডোমেট্রিয়াল বায়োপ্সি করা দরকার।
• ইউটেরাস, ওভারি ও পেলভিসের আল্ট্রাসাউন্ড।
• ইউটেরাসের লাইনিং-এর সমস্যা জানতে সোনোহিস্টেরোগ্রাফি করতে হয়।
• ইউটেরাস খুঁটিয়ে দেখতে হিস্টেরোস্কোপি করতে হতে পারে।
অ্যানিমিয়ার ঝুঁকি থাকে
অনেক সময় হেভি ব্লিডিং হলেও অনেকে ব্যাপারটা বিশেষ আমল দেন না। পরে ঠিক হয়ে যাবে ভেবে ফেলে রাখেন। প্রতি মাসে অতিরিক্ত রক্তপাত হতে হতে রক্তাল্পতা বা অ্যানিমিয়ার ঝুঁকি বাড়ে। অন্য দিকে অ্যানিমিয়া হলেও অতিরিক্ত ঋতুস্রাব হয়। ব্যাপারটা চক্রাকারে চলতে থাকে। আবার যে কারণে হেভি ব্লিডিং হচ্ছে, তার চিকিৎসা না করানোয় অসুখটা ক্রমশ জটিল হতে শুরু করে। অসুখের প্রাথমিক পর্যায়ে ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করে কাজ হলে অনেক দিন ফেলে রাখলে রোগের জটিলতা বেড়ে যায়। বিশেষ করে মেনোপজের পর বেশি ঋতুস্রাব অনেক সময় ক্যানসারের উপসর্গ হতে পারে। তাই অসুখের শুরুতেই সঠিক চিকিৎসা করানোর পরামর্শ দিলেন অভিনিবেশ।
চিকিৎসা মানেই সার্জারি নয়
অনেকের ধারণা, হেভি ব্লিডিং-এর একমাত্র চিকিৎসা বোধ হয় সার্জারি। সেই ভয়েই অনেকে চিকিৎসকের কাছে যেতে ইতস্তত করেন। নিতান্ত প্রয়োজন না হলে কখনওই অস্ত্রোপচার করা হয় না। হরমোনের তারতম্যের কারণে অতিরিক্ত ঋতুস্রাব হলে কন্ট্রাসেপ্টিভ পিল বা অন্যান্য হরমোন ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করা হয়। ফাইব্রয়েড, টিউমার বা সিস্ট থাকলে ইন্টারভেনশন পদ্ধতিতে চিকিৎসা করা হয়। তবে বড় টিউমার বা এন্ডোমেট্রিওসিস হলে ল্যাপারোস্কোপিক পদ্ধতিতে তা বের করে দেওয়া হয়। ক্যানসার বা অন্যান্য জটিলতা থাকলে প্রয়োজন হলে ওপেন সার্জারি করতে হতে পারে। অ্যানিমিয়া কমাতে ফলিক অ্যাসিড ও আয়রন দেওয়া হয়। একই সঙ্গে ওজন কমানোর জন্যে নিয়মিত এক্সারসাইজ ও সঠিক ডায়েট করা দরকার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন