Fever

বাচ্চার জ্বর হলে আতঙ্কিত না হয়ে নজর রাখুন

অসময়ের বৃষ্টি, শীতের আমেজ, স্কুলের পরীক্ষা কোনও কিছুকেই তোয়াক্কা না করে ডেঙ্গির জীবাণু বহনকারী এডিস ইজিপ্টা মশার দাপট অব্যাহত। রাজনীতিবিদ থেকে শিশু, কারওরই নিস্তার নেই ডেঙ্গি জ্বরের হাত থেকে। বাচ্চার ডেঙ্গি হলে ভয় না পেয়ে নজরদারি করতে পরামর্শ দিলেন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ সৌমিত্র দত্ত।ডারউইনের সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট তত্ত্ব মনেপ্রাণে মেনে চলে এডিস ইজিপ্টা মশককুল। তাই তুবড়ির খোল বা তুলসী মঞ্চে জমে থাকা যৎসামান্য জলে দ্রুত লার্ভারা বেড়ে ওঠে। আর সেই জন্যই ডেঙ্গি জ্বরের এই বাড়বাড়ন্ত।

Advertisement

সুমা বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০১৭ ১২:৪৩
Share:

ছবি: সংগৃহীত।

ডারউইনের সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট তত্ত্ব মনেপ্রাণে মেনে চলে এডিস ইজিপ্টা মশককুল। তাই তুবড়ির খোল বা তুলসী মঞ্চে জমে থাকা যৎসামান্য জলে দ্রুত লার্ভারা বেড়ে ওঠে। আর সেই জন্যই ডেঙ্গি জ্বরের এই বাড়বাড়ন্ত। প্রায় প্রত্যেক দিনই ডেঙ্গি সংক্রান্ত কোনও না কোনও মন খারাপ করা খবর জেনে কমবেশি প্রায় সকলেই আতঙ্কিত। ঋতু পরিবর্তনের এই সময়টায় ডেঙ্গি-সহ বিভিন্ন ভাইরাস ব্যাক্টেরিয়ার বাড়বাড়ন্ত স্বাভাবিক। তাই সাবধানতা নিন। কিন্তু অযথা ভয় পাবেন না। বাচ্চাদের এই সময় ভাইরাল ফিভারের প্রবণতা বাড়ে। এ বার ডেঙ্গি জ্বরের মহামারীর আকার ধারণ করায় ভয় ভাবনা বেড়েছে। জ্বর হলে কয়েকটা বিষয় নজর রাখুন, কিন্তু আতঙ্কগ্রস্ত হবেন না।

Advertisement

আরও পড়ুন: হাঁপানি ও ফুসফুসের অসুখ থাকলে জ্বর হলেই সতর্ক হতে হবে

এডিস ইজিপ্টার আজব চরিত্র

Advertisement

অত্যন্ত ক্ষুদ্র এডিস ইজিপ্টার খিদে অন্য মশাদের থেকে বেশি। পর পর চার পাঁচ জনকে কামড়ালে তবে তাদের উদর পূর্তি হয়। আর এই কারণেই একই পরিবারে একাধিক মানুষের মধ্যে ডেঙ্গির ঘটনা শোনা যায়। স্ত্রী অ্যানোফিলিস মশা এক জনের রক্ত খেয়েই পেট ভরিয়ে ফেলে। এক চড়েতে ঠান্ডা করাও মুশকিল নয়। কিন্তু ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র এডিস ইজিপ্টাকে চপেটাঘাত করার আগেই অন্যের রক্ত পান করে পালায়। বাড়ির ৫০ থেকে ১০০ মিটারের মধ্যেই ডেঙ্গির ভাইরাসবাহী এই মশার ঘোরাফেরা। তাই সকলের মিলিত উদ্যোগে এদের নিকেশ করা মোটেও কঠিন নয়। অত্যন্ত অল্প জলে স্ত্রী এডিস ডিম পাড়ে। লার্ভারাও দ্রুত পূর্ণাঙ্গ মশায় পরিণত হয়। বিশেষ করে শীত পড়ার মুখে নির্ধারিত সময়ের আগেই ওরা পূর্ণতা পায়। এই মশার আর এক বৈশিষ্ট্য, এরা ঘন জনবসতিপূর্ণ অঞ্চলে দ্রুত বংশ বৃদ্ধি করতে চেষ্টা করে, যেখানে একসঙ্গে অনেক মানুষকে পাবে। ঠিক সেই কারণেই স্কুল, অফিস, বাজার, হাউজিং কমপ্লেক্সে অল্পস্বল্প জল পেলেই এদের বাড়বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করা মুশকিল হয়। ফুলদানি, ফ্রিজের বা এসির জমা জলে দ্রুত বংশ বৃদ্ধি করে। একটু সতর্ক হলেই কিন্তু এদের জব্দ করা কঠিন নয়। সকাল ৭টা থেকে ১১টা আর বিকেল ৪টে থেকে ৭টা এডিস ইজিপ্টার দংশনের প্রাইম টাইম। তাই বাচ্চাদের স্কুল কোচিং ক্লাসে পাঠানোর সময় সতর্ক থাকা দরকার। আর্বোভাইরাস

ডেঙ্গির তিন অবস্থা

আর্বো ভাইরাস অর্থাৎ পতঙ্গবাহিত ডেঙ্গির ভাইরাস ডেন-১ থেকে ডেন-৪ আমাদের শরীরে প্রবেশ করার পর কয়েক দিন ইনকিউবেশন পিরিয়ডে থাকে। এর পর রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে পরাজিত করে রোগ সৃষ্টি করে। ডেঙ্গির উপসর্গকে তিনটি পর্যায়ে আলাদা করে দেখা হয়। একটু খেয়াল করলেই বুঝতে পারবেন।

সিম্পল ফেজ: জ্বর, সর্দি, পেটে ব্যথা দিয়ে রোগের সূত্রপাত। প্রথম তিন দিন এই ভাবেই চলে। কখনও কখনও চোখে (রেট্রোওরবিটাল লোব) ভয়ানক ব্যথা হয়। এই অবস্থায় রক্ত পরীক্ষা করে ডেঙ্গির জীবাণু পাওয়া গেলেও অযথা আতঙ্কিত হয়ে বাচ্চাকে হাসপাতালে ভর্তি করার দরকার নেই। তবে অবশ্যই খেয়াল রাখবেন। পর্যাপ্ত পরিমাণে জল ও জলীয় খাবার দিতে হবে। আর নিয়ম করে রক্তের প্লেটলেট কাউন্ট পরীক্ষা করাতে হবে। বমি হলে অবশ্য ভর্তি করার দরকার হতে পারে। আর বারে বারে অল্প অল্প করে পুষ্টিকর খাবার খাওয়ানো দরকার। ক্রিটিকাল ফেজ: প্রথম দিন তিনেক এ রকম চলার পর বাচ্চার অবস্থার অবনতি হলেও হতে পারে। এই অবস্থায় দ্রুত প্লেটলেট কাউন্ট কমে যেতে শুরু করে। বাচ্চা নেতিয়ে পড়ে, খেতে পারে না। জ্বর চলতেই থাকে। এ রকম অবস্থা শুরু হলেই হাসপাতালে ভর্তি করে দেওয়া দরকার। এই ফেজে রক্তের প্লেটলেট কাউন্টের সঙ্গে সঙ্গে পিসিভি বা প্যাকড সেল ভলিউম টেস্ট করিয়ে নেওয়া উচিত। অনেক সময় ক্রিটিকাল ফেজে বাচ্চার নাক বা দাঁত দিয়ে ব্লিডিং হতে পারে। শরীরে র‌্যাশ বেরোয়। বুকে পেটে জল জমে যাওয়ার ঝুঁকিও থাকে। তবে হাসপাতালে রেখে সঠিক চিকিৎসার সাহায্যে রোগের সঙ্গে লড়াই করা যায়। অনেক ক্ষেত্রে এই সময়ে শিশুর চোখ মুখ ফুলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তবে পুরো ব্যাপারটাই ম্যানেজ করতে হবে ক্রিটিক্যাল কেয়ারে রেখে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে। কেননা অনেক সময় প্লাজমা লিকেজ হলে রোগী শকে চলে যেতে পারে। রিকভারি ফেজ: অনেক সময় ক্রিটিকাল ফেজে না গিয়েই বাচ্চার রিকভারি ফেজ চলে আসে। জ্বর কমে, বাচ্চার ক্ষিদে বাড়ে, র‍্যাশ মিলিয়ে যেতে শুরু করে। তবে বাচ্চাই হোক বা পূর্ণবয়স্ক, সম্পূর্ণ সুস্থ হতে ১৫ দিন সময় লাগে।

আরও পড়ুন: ডেঙ্গিময় বঙ্গভূমে রঙ্গে মেতেছে নেটের দেওয়াল

চিকিৎসা

সত্যি কথা বলতে কি, ডেঙ্গি ভাইরাসের জন্য কোনও অ্যান্টি ভাইরাল ওষুধ নেই। জ্বর কমানোর ওষুধ আর উপসর্গভিত্তিক চিকিৎসা করা দরকার। আর নজরদারি করতে হবে। জ্বর হলেই হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন নেই। প্লেটলেট কাউন্ট ২০,০০০ এর কম হলে তবেই প্লেটলেট দিতে হয়। নিজের বাড়ির চারপাশ ও পাড়া পরিচ্ছন্ন রাখুন। ঠান্ডা পড়ার সঙ্গে সঙ্গে ডেঙ্গির প্রকোপ কমবে, তাই অযথা আতঙ্কিত হবেন না। আগামী দিনে ডেঙ্গির টিকা নিলে এই সমস্যার হাত থেকে রেহাই মিলবে আশা করা যায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন