সোয়াইন ফ্লু

কর্তা-বদলিতে ক্ষোভ, আবার মৃত্যু উত্তরবঙ্গে

দুই স্বাস্থ্যকর্তার বদলির নির্দেশে উত্তাল হল জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতাল। ক্ষোভ দানা বেঁধেছে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কর্মীদের একটা বড় অংশে। শুক্রবারই বদলির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সদ্য-প্রাক্তন সুপার পার্থ দে ও জেলার অতিরিক্ত মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তা গৌতম মণ্ডলকে। স্বাস্থ্য দফতর সরাসরি কিছু না বললেও বিষয়টিকে শাস্তিমূলক বদলি হিসেবেই দেখছেন কর্মী-চিকিৎসকরা। সোয়াইন ফ্লুয়ে আক্রান্ত দুই চিকিৎসকের ওয়ার্ডে ডিউটি করার জেরেই এই বদলি বলে মনে করছেন তাঁরা।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৫ মার্চ ২০১৫ ০২:৩২
Share:

চিকিৎসকের মুখেও মাস্ক। জলপাইগুড়ি হাসপাতালে শনিবার। ছবি: সন্দীপ পাল।

দুই স্বাস্থ্যকর্তার বদলির নির্দেশে উত্তাল হল জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতাল। ক্ষোভ দানা বেঁধেছে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কর্মীদের একটা বড় অংশে। শুক্রবারই বদলির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সদ্য-প্রাক্তন সুপার পার্থ দে ও জেলার অতিরিক্ত মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তা গৌতম মণ্ডলকে। স্বাস্থ্য দফতর সরাসরি কিছু না বললেও বিষয়টিকে শাস্তিমূলক বদলি হিসেবেই দেখছেন কর্মী-চিকিৎসকরা। সোয়াইন ফ্লুয়ে আক্রান্ত দুই চিকিৎসকের ওয়ার্ডে ডিউটি করার জেরেই এই বদলি বলে মনে করছেন তাঁরা। ক্ষুব্ধ চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কর্মীদের মতে, কিছু ঘটলেই এ ভাবে কর্তৃপক্ষের রোষের মুখে পড়লে কাজের ইচ্ছেটাই তো মরে যাবে। ধাক্কা খাবে ‘টিমওয়ার্ক’-ও।

Advertisement

রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর অবশ্য প্রথম থেকেই এটিকে ‘রুটিন’ বদলি বলে দাবি করেছে। স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথীকে উত্তরবঙ্গের চিকিৎসকদের ক্ষোভ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি ‘কিছু বলব না’ বলে এড়িয়ে গিয়েছেন। যদিও সরকারি চিকিৎসকদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব হেলথ সার্ভিসেস ডক্টর্স-এর জলপাইগুড়ি জেলা সম্পাদক বলেন, “সোয়াইন ফ্লুয়ের প্রাদুর্ভাবের মধ্যে স্বাস্থ্য প্রশাসনের কোনও কর্তার বদলি কিছুটা হলেও অসুবিধার সৃষ্টি করবে। পরিস্থিতি সামাল দিতে বরং সুপার ও অতিরিক্ত মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তাকে কিছু দিন এখানে রাখলে উপকার হতো।”

জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে আপাতত তিন জন সোয়াইন ফ্লু আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা চলছে। তাঁদের মধ্যে দু’জন হাসপাতালেরই চিকিৎসক। রোগীদের পরিবারের লোকজনের অনেকেরই অভিযোগ, প্রাক্তন সুপার থাকাকালীন যে ভাবে সোয়াইন ফ্লু পরিস্থিতি মোকাবিলায় চিকিৎসকেরা ঝাঁপিয়েছিলেন, তা এখন কিছুটা হলেও ধাক্কা খেয়েছে। পার্থ দে অবশ্য এ ব্যাপারে কিছু বলতে চাননি।

Advertisement

শনিবারই সোয়াইন ফ্লুয়ে শিলিগুড়ির এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। বছর ছ’য়েকের ওই শিশু শিলিগুড়ির এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি ছিল। এই নিয়ে এখনও পর্যন্ত রাজ্যে সোয়াইন ফ্লুয়ে মৃত্যু বেড়ে হল ১৯। এ দিন নতুন করে ১৫ জনের রক্তে সোয়াইন ফ্লুয়ের ভাইরাস মিলেছে। এঁদের মধ্যে কলকাতার বাসিন্দা ৭ জন ও জেলার ৮। জেলার মধ্যে উত্তর ২৪ পরগনার লোক সব চেয়ে বেশি। কলকাতার ৭ আক্রান্তের মধ্যে বিধাননগর পুরসভার চেয়ারম্যান পারিষদ দেবাশিস জানার বাবা বিষ্ণুপদ জানা রয়েছেন। সল্টলেক এলাকায় চলতি বছর এই প্রথম সোয়াইন ফ্লু আক্রান্ত কোনও রোগীর খোঁজ মিলল। রাজ্যে এখনও পর্যন্ত মোট ৩০৪ জন সোয়াইন ফ্লুয়ে আক্রান্ত হলেন। হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ৮২ জন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ২০৩ জন।

শিলিগুড়িতে যার মৃত্যু হয়েছে সেই ৬ বছরের শিশুকন্যাকে জ্বর এবং বুকে ব্যথা নিয়ে গত ৩ মার্চ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দাবি করেছেন, সোয়াইন ফ্লু ছাড়াও শিশুটির ফুসফুসে পুঁজ জমে গিয়েছিল। বিশেষ ধরনের একটি নিউমোনিয়াতেও ভুগছিল সে। শিশুর মৃত্যুর কারণ হিসেবেও সোয়াইন ফ্লুয়ের সঙ্গে একাধিক রোগের কথা লেখা রয়েছে। শিশু-মৃত্যুর রিপোর্ট দার্জিলিং জেলা স্বাস্থ্য দফতরে পাঠানো হয়েছে বলে হাসপাতাল সূত্রের খবর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন