Diet

ওজন কমান রাম কাপুরের পথে

রোগা হওয়ার জন্য একদম নতুন ধরনের এক ডায়েট ফলো করেছিলেন অভিনেতা। নাম ‘১৬/৮ মেথড’। এই নিয়মে ব্যায়াম ছেড়ে শুধু ডায়েটটুকুই করেন, তাহলেও পাবেন সুফল।

Advertisement

সুজাতা মুখোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০২০ ১৮:১৫
Share:

ঘড়ি ধরে খাওয়া দাওয়াতেই কমবে ওজন।

বছর খানেক আগের কথা৷ মাত্র কয়েক মাসে ৩০ কেজি ওজন কমিয়ে অনুরাগীদের চমকে দেন বিশিষ্ট অভিনেতা রাম কাপুর৷ সঙ্গে পেশিবহুল শরীর আর দুরন্ত ফিটনেস। অবাক হয়েছিল সবাই। একটাই প্রশ্ন ঘোরাফেরা করছিল সামাজিক পাতায়। কী করে হলে, এ-তো পুরো ম্যাজিক!

Advertisement

আসলে রোগা হওয়ার জন্য একদম নতুন ধরনের এক ডায়েট ফলো করেছিলেন অভিনেতা। নাম ‘১৬/৮ মেথড’। সেই ডায়েটের সঙ্গে কার্ডিও–ওয়েট ট্রেনিংয়ের যুগলবন্দিতেই ওজন কমে সুঠাম শরীরের অধিকারী হন তিনি। তবে যেহেতু ওজন কমানোর চাবিকাঠির ৭০ শতাংশই লুকিয়ে আছে ডায়েটের মধ্যে, কাজেই কেউ যদি ব্যায়াম ছেড়ে শুধু ডায়েটটুকুই করেন, তিনিও পাবেন সুফল।

কী আছে ডায়েটে?

Advertisement

এটি এক ধরণের ইন্টারমিট্যান্ট ফাস্টিং। সোজা কথায় উপোস দেওয়া। সারাদিনে ৮ ঘণ্টা স্বাভাবিক খাবার খেয়ে টানা ১৬ ঘণ্টা কিছু না খেয়ে থাকা বা চা–কফি–ক্লিয়ার স্যুপের মতো একেবারে হালকা জলীয় ধরনের কিছু খাওয়া৷ ধরুন, রাত ৯টার সময় ডিনার করলেন। তাহলে দুপুর ১টা পর্যন্ত কিছু খাওয়া যাবে না।আর এই ১টা থেকে ৯টার মধ্যেই লাঞ্চ, স্ন্যাক্স ও ডিনার সব সেরে ফেলতে হবে। দরকার হলে বাদ দিতে হবে ব্রেকফাস্ট। আবার ব্রেকফাস্ট করতেই হলে সকাল ৯টায় ব্রেকফাস্ট ও যথাসময়ে লাঞ্চ করে বিকেল ৫টার মধ্যে ডিনার সেরে ফেলা৷ অর্থাৎ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১৬ ঘণ্টা চলবে ফাস্টিং। বাকি ৮ ঘণ্টা খাওয়া দাওয়া। এতে অসুবিধে হলে ১৬ ঘণ্টার বদলে ১৪ ঘণ্টাও উপোশ করতে পারেন৷ সে ক্ষেত্রে সকাল ৯টায় ব্রেকফাস্ট, যথাসময়ে লাঞ্চ ও ৭টায় ডিনার করতে হবে৷ কেউ কেউ আবার ১২–১২তেও ভাগ করে নেন৷ তাতেও কাজ হয় না তবে কিছুটা ধীর লয়ে।

এভাবে নিয়মিত খাওয়া–দাওয়া করলে ডায়েটের সুফল মিলবে দ্রুত। অনেকে আবার সপ্তাহে দু’একদিন নিয়ম মানেন। পুরোটাই হতে পারে পছন্দমতো। যেমন সুবিধে, তেমন।

৩০ কেজি ওজন কমিয়ে অনুরাগীদের চমকে দেন বিশিষ্ট অভিনেতা রাম কাপুর৷

কী খাবেন?

তবে দিনে ৮ কি ১০ ঘণ্টা খাওয়া যাবে বলে সে সময় অতিরিক্ত খেয়ে নেবেন না৷ তাহলে ওজন তো কমবেই না বরং হজমের গোলমাল হবে। অস্বাস্থ্যকর খাবারের অভ্যাসও গড়ে উঠবে৷ কাজেই পুষ্টিকর কম ক্যালোরির খাবারই খান মাপমতো৷ খাবারের তালিকায় বেশি পরিমাণে রাখার চেষ্টা করুন হোল ফুড বা প্রাকৃতিক খাবার৷ খাবার বাছতে হবে ভাত, রুটি, ফল,শাক ও উপকারি ফ্যাটের মধ্যে সামঞ্জস্য রেখে৷ যেমন, ফলের মধ্যে আপেল, কলা, বেরি, কমলা, পিচ, ন্যাসপাতি, সবজির মধ্যে ব্রকোলি, ফুলকপি, শশা, সবুজ শাক, টমেটো ইত্যাদি৷ হোল গ্রেইন হিসেবে খাওয়া যায় ব্রাউন রাইস, আটা, ওট্স, বার্লি, কিনোয়া, বাকহুইট৷ অপকারি চর্বি মানে ভাজাভুজি, প্রসেসড খাবার ইত্যাদির বদলে খেতে হবে স্বাস্থ্যকর চর্বি। যেমন অলিভ অয়েল, অ্যাভোক্যাডো, বীজ, বাদাম৷ প্রোটিন খেতে হবে পর্যাপ্ত৷ যেমন, কম চর্বিওলা মাছ–মাংস, ডিম, ডাল, বিন্স, দুধ, দই, চিজ, ইয়োগার্ট৷ মাঝেমধ্যে যদি তালিকার বাইরের খাবার খেয়ে ফেলেন, তবে খেয়াল রাখবেন যাতে ক্যালোরি ও পুষ্টির হিসেব ঠিক থাকে৷

এরসঙ্গে জল, চিনি ছাড়া কালো চা–কফি, হার্বাল বা গ্রীন টি, পাতলা স্যুপ খাবেন মাঝেমধ্যে৷ উপোশের সময়ও খেতে পারেন৷ এতে খিদে যেমন কম থাকবে, জলেরও ঘাটতি হবে না শরীরে৷

উপকার/অপকার

‘অভ্যাস না থাকলে হঠাৎ করে ১৬ ঘণ্টা উপোশ করবেন না৷ খিদে ও ক্লান্তির পাশাপাশি অন্য সমস্যাও হতে পারে৷ মেয়েদের অনেক সময় বন্ধ্যাত্ব হতেও দেখা যায়৷ কাজেই প্রথমে ১০–১২ ঘণ্টা দিয়ে শুরু করে আস্তে আস্তে সময়সীমা বাড়ান৷’ জানালেন পুষ্টিবিদ সুজাতা মুখোপাধ্যায়৷

এই ডায়েট একটু কঠিন। তবে ফলো করতে পারলে ওজন কমবে, বাড়বে ব্রেনের কার্যকারিতা ও আয়ু, সুগার বশে থাকবে, কমবে হাইপ্রেশারের প্রকোপ৷ আর্থ্রাইটিস–বিস্মৃতি–ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স ও পেটের রোগ কমাতে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেও এর ভূমিকা আছে৷

কারা করবেন, কারা নয়?

কমবয়সী, নীরোগ ও ফিট হলে ১৬/৮ ডায়েট ফলো করতে পারেন৷ তাও প্রস্তুতি নিয়েই নামবেন৷ সম্ভব হলে চিকিৎসক বা পুষ্টিবিদের পরামর্শ নেবেন৷ ভালো ফিটনেস থাকলে আর অসুখ–বিসুখ যদি না থাকে তবে মধ্যবয়সেও করতে পারেন ইন্টারমিট্যান্ট ফাস্টিং। তবে সেক্ষেত্রেও আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি৷ যাঁরা করতে পারবেন না, তাঁরা হলেন–

• অপুষ্টি–রক্তাল্পতার রোগী

• ইটিং ডিসর্ডার অর্থাৎ খাওয়াদাওয়ার অভ্যাস জনিত সমস্যা আছে যাঁদের

• কিডনির অসুখ, পরফাইরিয়া ও জটিল কোনও অসুখের রোগী

• টাইপ ১ ডায়াবেটিস রোগী, বা মাঝেমধ্যে রক্তে সুগারের পরিমাণ খুব কমে যায় যাঁদের

• বৃদ্ধ, শিশু, কিশোর–কিশোরি, গর্ভবতী বা বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন এমন মহিলা

• কোনও কারণে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা খুব কম থাকলে৷

উপোশের নিয়ম

• উপোশ করুন শরীর বুঝে৷ যখন তরতাজা লাগছে, তখন৷

• শারীরিক–মানসিক অসুস্থতা, অনিদ্রা, ক্লান্তি বা মানসিক চাপের সময় না করাই ভাল৷

• এ সময় ভারী কাজকর্ম বা রোদে ঘোরাঘুরি কম করুন৷

• উপোশ শেষে হালকা খাবার খান। অল্প করে৷ তার দু’তিন ঘণ্টা বাদে আবার খাবেন৷

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন