অন্য কাজ খুঁজছেন দোকানি ও কারিগরেরা

মোবাইলেই সময়, ফুরোচ্ছে কি ঘড়ির দিন? 

কাছেই দোকানে বসে থাকা এক বৃদ্ধ এই দৃশ্য দেখে ফিক করে হেসে ফেলেন। জানান, তিনিও একসময়ে ওই তরুণের মতোই ছিলেন। প্রেমিকার অপেক্ষায় ঘড়ি দেখতেন। শুধু পালটে গিয়েছে সময়। এসে গিয়েছে হাতঘড়ির জায়গায় মোবাইল।

Advertisement

কার্তিক সরকার

তেহট্ট শেষ আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০১৮ ০৬:০৬
Share:

হাত-বদল: কেতাদুরস্ত ঘড়ির কি আর সেই রমরমা আছে?

বেতাই কলেজের সামনে দাঁড়িয়ে পকেট থেকে মোবাইল বার করে অস্থির মনে বার বার ঘড়ি দেখছেন এক তরুণ। একটু পরেই কলেজ গেট দিয়ে বেরিয়ে আসেন এক তরুণী। যুবক একটু ধমক দিয়েই বলেন— “এই তোমার পাঁচ মিনিট?” তরুণীর সলজ্জ হাসি দেখে বোঝা যায়ই ওঁরা প্রেমিক-প্রেমিকা। কাছেই দোকানে বসে থাকা এক বৃদ্ধ এই দৃশ্য দেখে ফিক করে হেসে ফেলেন। জানান, তিনিও একসময়ে ওই তরুণের মতোই ছিলেন। প্রেমিকার অপেক্ষায় ঘড়ি দেখতেন। শুধু পালটে গিয়েছে সময়। এসে গিয়েছে হাতঘড়ির জায়গায় মোবাইল।

Advertisement

তবে কাচ ভেঙে গেলেও প্রেমিকার দেওয়া হাতঘড়িটি আজও পরেন ওই বৃদ্ধ।

আনুমানিক সাড়ে পাঁচ হাজার বছর আগে মিশর ও ব্যাবিলনে প্রথম উৎপত্তি সূর্য ঘড়ির। ১৯৯৭ সাল থেকে বাজারে আসে ক্ষুদ্র কম্পিউটার যুক্ত ডিজিটাল হাতঘড়ি। অথচ, প্রাচীন কাল থেকে সময়ের হিসেব দিয়ে চলা ঘড়িই আজ যেন উবে যাচ্ছে। খোঁজ নিয়ে দেখা গেল, মোবাইলের দাপটে ঝাঁপ বন্ধ করতে বাধ্য হচ্ছেন ঘড়ি ব্যবসায়ীরা। নাজিরপুরের ঘড়ি ব্যবসায়ী সুনীল কর্মকার বলেন, ‘‘মোবাইল এখন সব। আর তাতে সময় দেখার ব্যবস্থা থাকেই। তাই ঘড়ির একদম বিক্রি নেই। এখন মোবাইলেই কাজ সারছেন সকলে।”

Advertisement

তেহট্ট ও করিমপুরে ঘড়ি ব্যবসায়ীদের অধিকাংশই দোকান-পাট বন্ধ করে দিয়েছেন। কেউ অন্য কাজ খুঁজে নিয়েছেন, কেউ আবার চলে গিয়েছেন বিদেশের কোনও সংস্থায় কাজ নিয়ে। কেউ বা ফিরেছেন কৃষিকাজ বা ব্যবসায়।

করিমপুরের ঘড়ির পাইকারি-বিক্রেতা রতন প্রামাণিক বলেন, ‘‘আমি ১৯৯১ সাল থেকে ঘড়ির ব্যবসা করছি। তেহট্ট, করিমপুর, জলঙ্গি বিভিন্ন জায়গায় সাপ্লাই করি। করিমপুরে আগে ৩৫টি ঘড়ির দোকান ছিল। সেটা বর্তমানে হয়ে দাঁড়িয়েছে মাত্র পাঁচ-ছ’টা।’’ তাঁর কাছেই জানা গেল, নাজিরপুরে আগে এগারো-বারোটি ঘড়ির দোকান ছিল। বর্তমানে যার সংখ্যা তিন থেকে চার। তেহট্টেও একই দশা। ডোমকল-জলঙ্গিতেও নামমাত্র ক’টা দোকান টিকে আছে।

তবে অধিকাংশ দোকানেই ঘড়ির সঙ্গে চশমা, বেল্ট, খেলনা ও অন্য জিনিসপত্র রেখে, তা বিক্রি করে কোনওরকমে সংসার চালাচ্ছেন দোকানিরা। যেমন, বহুদিনের পুরনো ঘড়ি ব্যবসায়ী এবং ঘড়ি সারাইয়ের কারিগর সমর পাল। বর্তমানে ঘড়ির ব্যবসা তুলে দিয়ে তিনি জেরক্সের ব্যবসা ধরেছেন।

পড়ুয়াদের পরীক্ষার সময়ে এবং মাঘ-ফাল্গুন মাসে বিয়ের সিজ়নে ঘড়ির চাহিদা খানিকটা থাকলেও বাকি সময়ে বিক্রির পরিমাণ খুব কম। ঘড়ি ব্যবসায়ী তথা কারিগর প্রণব বিশ্বাস বলেন, ‘‘বিয়ের সিজ়নে কিছু দামি ঘড়ি বিক্রি হলেও বাকি সময়ে কম দামি ফ্যাশনেবল ঘড়িই বেশি বিক্রি হয়।” একই সঙ্গে জানান, একটা সময়ে ঘড়ি সারাইয়ের কাজ শিখতে অনেকেই আসতেন। এখন সে সবই অতীত সময়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন