ভারতের সবচেয়ে ধনী রন্ধনশিল্পী কে? গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
রান্না করাকেও শিল্পের পর্যায় নিয়ে যাওয়া যায়, তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন দেশ-বিদেশের রন্ধনশিল্পীরা। এখন রান্না করাকেই পেশা বানিয়ে কোটি কোটি টাকা আয় করছেন ভারতীয় রন্ধনশিল্পীরা। রান্না করেই ‘পদ্মশ্রী’ সম্মান অর্জন করেছেন রন্ধনশিল্পী সঞ্জীব কপূর। এই পেশা এখন কেবল রেস্তরাঁর হেঁশেলেই সীমাবদ্ধ নয়, এর সঙ্গেও এখন জুড়ে গিয়েছে গ্ল্যামার দুনিয়াও। ভারতের জনপ্রিয় রন্ধনশিল্পীরা যে এখন কেবল দেশ-বিদেশে রেস্তরাঁ খুলছেন এমন নয়। টিভি শো, ইউটিউব চ্যানেলেও সমান ভাবে তাঁদের রান্নার দক্ষতা প্রদর্শন করে চলেছেন তাঁরা। ভারতের সবচেয়ে ধনী রন্ধনশিল্পীদের তালিকায় কে কে রয়েছেন, রইল হদিস।
সঞ্জীব কপূর
ভারতের ধনী রন্ধনশিল্পীদের তালিকায় প্রথমেই রয়েছেন সঞ্জীব কপূর। ১৯৮৪ সালে রন্ধনশিল্পী হিসাবে কর্মজীবন শুরু করেন সঞ্জীব। ১৯৯২ সালে তিনি মুম্বইয়ের জনপ্রিয় এক বিলাসবহুল হোটেলে প্রধান রন্ধনশিল্পী হিসাবে যোগ দেন। ধীরে ধীরে রন্ধনশিল্পী হিসাবে নাম ছড়িয়ে পড়ে তাঁর। এর পরেই টেলিভিশন শো ‘খানা খজ়ানা’ এ যোগ দেন তিনি। ১৯৯৩ সালে শুরু হওয়া ওই টেলিভিশন শো এতটাই জনপ্রিয় হয়েছিল যে, তা প্রায় ১৮ বছর ধরে চলেছিল। প্রায় ১৫০টি রান্নার বই লিখেছেন সঞ্জীব। তাঁর ‘ইয়ালো চিলি’ ব্র্যান্ডের অধীনে দেশ-বিদেশে রয়েছে একাধিক ফাইন ডাইনিং রেস্তরাঁ। এ ছাড়া রান্নার জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রাদি, বাসনপত্রের সংস্থাও রয়েছে সঞ্জীবের। তাঁর সম্পত্তির পরিমাণ প্রায় ১১৬৫ কোটি টাকা। সমাজমাধ্যম থেকেও তিনি বেশ ভাল টাকা আয় করেন। সঞ্জীব মাসে ৫০ কোটি টাকারও বেশি আয় করেন।
বিকাশ খন্না
বিশ্বে ১০ জন ভারতীয় শেফের ঝুলিতে রয়েছে ‘মিশেলিন স্টার’-এর তকমা। তাঁদের মধ্যে এক জন বিকাশ। রসনাজগতের এই সম্মান তাঁদের ঝুলিতেই থাকে, মিশেলিন সংস্থার বিচারে যাঁরা নিজেদের সেরা প্রমাণ করেছেন। তাঁর রান্নায় মজেছেন দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী থেকে শুরু করে আমেরিকার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। পঞ্জাবের অমৃতসর থেকে যাত্রা শুরু করে নিউ ইয়র্কের ম্যানহাটনে ভারতীয় খাবারের রেস্তরাঁ তৈরি— বিকাশের সাফল্যের কাহিনি নিয়ে সিনেমাও তৈরি হতে পারে। শুধু রন্ধনশিল্পী নয়, বিকাশ লেখালেখিও করেন। সিনেমার জগতেও পা রেখেছেন বিকাশ। বারাণসী এবং বৃন্দাবনের বিধবাদের কাহিনি নিয়ে তাঁর পরিচালিত ‘দ্য লাস্ট কালার’ প্রশংসা কুড়িয়েছে ৭১তম কান চলচ্চিত্র উৎসবে। তৈরি করেছেন একাধিক তথ্যচিত্রও। এখন নিউইয়র্কে ‘বাংলো’ নামক রেস্তরাঁ রয়েছে তাঁর। টেলিভিশন ও সমাজমাধ্যম থেকেও ভাল পরিমাণ আয় করেন বিকাশ। তাঁর মোট সম্পত্তির পরিমাণ প্রায় ৮০-১২০ কোটি টাকা।
কুণাল কপূর
সমাজমাধ্যমে বেশ পরিচিত মুখ কুণাল। দিল্লির পঞ্জাবি পরিবারের ছেলে তিনি। হোটেল ম্যানেজমেন্ট নিয়ে পড়াশোনা শেষ করে বিলাসবহুল রেস্তরাঁয় রন্ধনশিল্পী হিসাবে কাজ শুরু করেন ২০০২ সালে। ক্রমে হোটেল জগতে পরিচিতি বাড়ে কুণালের। বিভিন্ন রান্নার শোয়ের সঞ্চালক হিসাবে, কখনও আবার বিচারক হিসাবে টিভিতে দেখা যেতে শুরু করে কুণালকে। ‘কোয়ার্টার প্লেট’ আর ‘পিনকোড’ নামে একাধিক রেস্তরাঁ চেন রয়েছে কুণালের। ইউটিউব, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম থেকেও ভাল আয় করেন তিনি। তাঁর সম্পত্তির পরিমাণ প্রায় ৪৫ কোটি টাকা।
রণবীর ব্রার
লখনউয়ের সাধারণ মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলে রণবীর। ১৭ বছর বয়স থেকেই রান্না সংক্রান্ত বিভিন্ন ধরনের কাজ করতে শুরু করেন তিনি। রন্ধনশিল্পী হতে চান, শুনে বাড়ির লোকজন অবাক হয়েছিলেন। তাঁকে হোটেল ম্যানেজমেন্ট নিয়ে পড়তে বারণও করা হয়েছিল। তবুও রণবীর শোনেননি। নিজেকে প্রমাণ করেছেন তিনি। পড়াশোনা শেষ করে বিলাসবহুল হোটেলে চাকরি। তার পর আর পিছনে ঘুরে তাকাতে হয়নি রণবীরকে। বিদেশে গিয়েও কাজ করেছেন তিনি। ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে রেস্তরাঁ রয়েছে রণবীরের। দুবাইতেও রেস্তরাঁ খুলেছেন তিনি। একাধিক রান্নার শোয়ে সঞ্চালক আর বিচারক হিসাবে রণবীরকে দেখা গিয়েছে টিভির পর্দায়। ছবিতে কাজও করেছেন তিনি। এর পাশাপাশি বইও লিখেছেন রণবীর। তাঁর সম্পত্তির পরিমাণ প্রায় ৪০ কোটি টাকা।
হরপাল সিংহ সোখি
টিভির পর্দায় যে সব রন্ধনশিল্পীদের প্রায়ই দেখা যায়, হরপাল সিংহ সোখি তাঁদের মধ্যে অন্যতম। পশ্চিমবঙ্গের খড়্গপুরে ছোটবেলা কেটেছে হরপালের। তার পর ভুবনেশ্বরে হোটেল ম্যানেজমেন্ট নিয়ে পড়াশোনা করেছেন তিনি। পড়াশোনা শেষ করে রন্ধনশিল্পী হিসাবে কাজে যোগদান করেন। ক্রমেই তার জনপ্রিয়তা বাড়ে। টিভির পর্দায় পরিচিত হয়ে ওঠেন তিনি। দিল্লিতে তাঁর ‘কারিগরি’ রেস্তরাঁর একাধিক শাখা রয়েছে। দুবাইতেও রেস্তরাঁ খুলেছেন তিনি। তাঁর সম্পত্তির পরিমাণ প্রায় ৩৫ কোটি টাকা।