Health

করোনা-আবহে আচমকা শ্বাসকষ্টে বাড়ছে ঝুঁকি, কী করবেন?

কোভিড-১৯ সংক্রমণের এক মারাত্মক উপসর্গ শ্বাসকষ্ট। আর এই কারণে কত অল্পবয়সি মানুষ অকালে প্রাণ হারাচ্ছেন তার ঠিক নেই।

Advertisement

সুমা বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ অগস্ট ২০২০ ১৭:০১
Share:

পালমোনারি এম্বোলাইজেশনের উপসর্গ হিসেবে বুকে, গলায় ও কাঁধে ভয়ানক ব্যথা করে দম আটকে আসে। ফাইল ছবি।

করোনা কালে শ্বাসকষ্ট শব্দটা শুনলেই শিরদাঁড়া দিয়ে হিমশীতল স্রোত বয়ে যায়। কোভিড-১৯ সংক্রমণের এক মারাত্মক উপসর্গ শ্বাসকষ্ট। আর এই কারণে কত অল্পবয়সি মানুষ অকালে প্রাণ হারাচ্ছেন তার ঠিক নেই। তবে একথাও ঠিক যে শুধু অতিমারি সৃষ্টিকারী ভাইরাস ছাড়াও নানা কারণে রেসপিরেটরি এমার্জেন্সি হতে পারে।

Advertisement

ফুসফুস সংক্রান্ত মারাত্মক উপসর্গ হলে দ্রুত যথাযথ চিকিৎসা না করালে অবস্থা সঙ্কটজনক হয়ে ওঠার ঝুঁকি প্রবল। যেমন অতিরিক্ত কাশি, কাশতে কাশতে দম বন্ধ হয়ে যাওয়া, জ্ঞান হারিয়ে ফেলা, কাশির সঙ্গে রক্ত বেরোন, শ্বাসকষ্ট হতে হতে অজ্ঞান হয়ে যাওয়া— এই সব উপসর্গের ডাক্তারি নাম রেসপিরেটরি এমার্জেন্সি।

চেস্ট ফিজিশিয়ান সৌম্য দাস জানালেন, যাঁদের অ্যাজমা ও ফুসফুসের ক্রনিক অসুখ সিওপিডি আছে তাঁদের আচমকা তীব্র শ্বাসকষ্ট শুরু হতে পারে। বিশেষ করে এঁদের যদি কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ কিংবা সাধারণ ইনফুয়েঞ্জা হয়, তার থেকেও রেসপিরেটরি এমার্জেন্সির ঝুঁকি থাকে। এঁদের শ্বাসকষ্ট নিয়ন্ত্রণের জন্য রিলিভার ইনহেলার দেওয়া থাকে। আচমকা শ্বাসকষ্ট শুরু হলে এই ইনহেলার ৬ থেকে ৮ বার নিতে হবে এক ঘণ্টার মধ্যে। তাতেও যদি শ্বাসকষ্ট না কমে অবশ্যই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া উচিত।

Advertisement

শ্বাসপ্রশ্বাসের সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়ে শরীরে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে। ফাইল ছবি।

সৌম্যবাবু বলেন, এই করোনার সময় এআরডিএস, অর্থাৎ অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ডিসট্রেস সিনড্রোমের প্রবণতা বেশি পাওয়া যাচ্ছে। এমনিতেই কোভিড ১৯ সংক্রমণ হলে এই সমস্যার ঝুঁকি বাড়ে। যাঁদের ক্রনিক ফুসফুসের অসুখ আছে তাঁদের এআরডিএস-এর ঝুঁকি খুব বেশি। ডেঙ্গি বা ব্যাকটেরিয়াল নিউমোনিয়া হলেও ফুসফুসের সূক্ষ্ম রক্তজালিকা থেকে তরল নিঃসৃত হয়ে ফুসফুসের বাতাস ভর্তি ছোট্ট থলি অ্যালভিওলাইতে গিয়ে জমে যায়। ফলে শ্বাসপ্রশ্বাসের সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়ে শরীরে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যায়। প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট হতে হতে রোগী নেতিয়ে পড়ে। এক্ষেত্রে রোগীর প্রাণ বাঁচাতে ভেন্টিলেটরে দেওয়া দরকার। প্রোন পোজিশনে, অর্থাৎ রোগীকে উপুড় করে শুইয়ে রেখে অক্সিজেন দিলে ভাল ফল পাওয়া যেতে পারে।

ক্রিটিক্যাল কেয়ার স্পেশালিস্ট পুষ্পিতা মণ্ডল জানালেন, কোভিড-১৯ সংক্রমিতদের মধ্যে যাঁদের সাইটোকাইন স্ট্রম হয়, রোগের শুরুতে চিকিৎসা হয়নি কিংবা ভাইরাল লোড খুব বেশি তাঁদের এআরডিএসের ঝুঁকি থাকে। এছাড়া অন্যান্য ভাইরাল অসুখেও এআরডিএস-এর আশঙ্কা থাকে। এই সমস্যা হলে রোগীর শরীরে অক্সিজেনের অভাব পূরণ করা দরকার। একই সঙ্গে ফ্লুইড ম্যানেজমেন্টের ওপর জোর দিতে হয়। পুষ্পিতাদেবী জানালেন, অনেক সময় রোগীকে দীর্ঘদিন ভেন্টিলেটরের সাপোর্টে রাখতে হতে পারে।

আরও পড়ুন: আপনার কেনা স্যানিটাইজারে আদৌ ভাইরাস মরছে তো? কী বলছেন চিকিৎসকরা​

সৌম্য দাস জানালেন,রেসপিরেটরি এমার্জেন্সির মধ্যে আর একটি বড় সমস্যা হিমপ্টোসিস। এক্ষেত্রে আচমকা কাশতে কাশতে মুখ থেকে গলগল করে রক্ত বেরোয়। কাশির সঙ্গে অল্পস্বল্প রক্তপাতও যেমন হয়, তেমনই ২০০ মিলিলিটার থেকে ১০০০ মিলিলিটার পর্যন্ত রক্ত বেরতে পারে। ফুসফুসের টিবি থাকলে এই সমস্যার ঝুঁকি খুব বেশি। এছাড়া সিওপিডি, ব্রঙ্কাইটিস, নিউমোনিয়া ও পালমোনারি এম্বোলাইজেশন থাকলেও কাশির সঙ্গে প্রচুর রক্ত বেরোনর ঝুঁকি থাকে। অনেকেই জানেন না যে তিনি ফুসফুসের যক্ষ্মায় আক্রান্ত। তাই আচমকা কাশির সঙ্গে রক্ত বেরোন শুরু হলে প্রচণ্ড ভয় পেয়ে যান।

সৌম্যবাবু জানালেন, ব্যাপারটা যদিও আপাতদৃষ্টিতে অত্যন্ত ভয়ের, তবু মাথা ঠান্ডা না রাখতে পারলে সমস্যা জটিল হয়ে ওঠার ঝুঁকি থাকে। বেশির ভাগ রোগী ভয় পেয়ে হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুর দোরগোড়ায় পৌঁছে যান। অনেক সময় ফুসফুসে রক্ত ভর্তি হয়ে গিয়ে শ্বাসে অক্সিজেনের অভাবে রোগীর মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ে। কাশির সঙ্গে রক্ত বেরোলে প্রথমেই মাথা ঠান্ডা রেখে রোগীকে ডান বা বাম দিক ফিরিয়ে শুইয়ে রাখতে হবে। এর ফলে রোগীর উপরের দিকের ফুসফুসটিতে রক্ত জমতে পারবে না। কিছুটা অক্সিজেন শরীরে যাবে। তবে রক্তপাত বন্ধ না হলে (এক লিটার পর্যন্ত রক্ত বেরিয়ে যেতে পারে) সৌম্যবাবুর পরামর্শ, দ্রুত অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা করে রোগীকে কাত করে শুইয়ে বা বসিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া জরুরি।

অন্য একটি রেসপিরেটরি এমার্জেন্সি নিউমোথোরাক্স। ধূমপায়ী ও গাঁজা সেবনকারীদের মধ্যে এই কষ্টদায়ক সমস্যার ঝুঁকি বেশি। এছাড়া সিওপিডি, বাড়াবাড়ি ধরনের অ্যাজমা, পালমোনারি ফাইব্রোসিস, টিবি বা নিউমোনিয়া থাকলে এই সমস্যার ঝুঁকি থাকে। দুর্ঘটনায় পাঁজর ভেঙে গেলে নিউমোথোরাক্সের সমস্যা হতে পারে। এই সমস্যা হলে ভয়ানক শ্বাসকষ্ট শুরু হয়ে বলে জানালেন সৌম্য দাস। অবিলম্বে হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দরকার।

আরও পড়ুন: মশার কামড়ে কি কোভিড হতে পারে?​

পুষ্পিতা মণ্ডল জানালেন, কোভিড-১৯ সংক্রমণের কারণে পালমোনারি এম্বোলাইজেশনের ঘটনা বেশি দেখা যাচ্ছে। এর ফলে জমাট বাঁধা রক্তের ডেলা ফুসফুসের ধমনিতে আটকে গিয়ে মারাত্মক সমস্যার ঝুঁকি থাকে। সৌম্যবাবু জানালেন, এই সমস্যা হলে দ্রুত চিকিৎসা না করলে রোগীর প্রাণ বাঁচানো কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। পালমোনারি এম্বোলাইজেশনের উপসর্গ হিসেবে বুকে, গলায় ও কাঁধে ভয়ানক ব্যথা করে দম আটকে আসে। শ্বাসপ্রশ্বাস দ্রুত হয়, হার্ট বিট বেড়ে গিয়ে রোগী জ্ঞান হারাতে পারে।

ফুসফুসে রক্ত ভর্তি হয়ে গিয়ে শ্বাসে অক্সিজেনের অভাবে রোগীর মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ে। ফাইল ছবি

বড় আর্টারিতে এম্বোলাইজেশন হলে ১০ মিনিটের মধ্যে চিকিৎসা শুরু না করলে বাঁচানো মুশকিল হয়। বসে বসে কাজ, মোটা চেহারা, পা কিংবা হিপ জয়েন্ট ভেঙে গেলে, দীর্ঘদিন শুয়ে থাকলে, দীর্ঘ সময় উড়ান বা ট্রেনে সফর করলে, অর্থাৎ স্থবির হয়ে শুয়ে-বসে থাকলে এই সমস্যার ঝুঁকি থাকে। সুস্থ থাকতে নিয়মিত শ্বাসের ব্যায়াম করবেন। কোনও রকম অসুস্থতা দেখলে অবশ্যই ডাক্তার দেখান।

(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।

• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন