—প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।
মাঝেমধ্যেই চিনচিনে বুকে ব্যথা, কখনও আবার হাঁচি, কাশির সময়ে বুকে, পিঠে তীব্র ব্যথা হয়। আবহাওয়া বদল, শীতের শুরুতে বুকের পাঁজরে চাপধরা ব্যথাতেও ভোগেন বয়স্করা। গ্যাস-অম্বলের সমস্যা ভেবে অনেকে তা উপেক্ষাও করেন। কিন্তু সাধারণ বুকে ব্যথার সঙ্গে পাঁজরের ব্যথার তফাত রয়েছে। রিব পেন অনেক সময়েই অন্য গুরুতর অসুখের ইঙ্গিত দেয়।
ব্যথার কারণ ও উপসর্গসমূহ
এর জন্য পাঁজরের গঠন বোঝা জরুরি। বক্ষগহ্বরকে ঘিরে থাকা বাঁকা-লম্বাটে হাড়ের একটি সিস্টেম হল পাঁজর, যা শ্বাসপ্রশ্বাসে সাহায্য করে। ডান ও বাঁ পাশে ১২টি করে পাঁজরে মোট ২৪টি হাড় থাকে, যা সামনে স্টারনাম, পিছনে কশেরুকা কলামের সঙ্গে যুক্ত। অর্থাৎ ফুসফুস, হৃৎপিণ্ড, অন্ত্র ও মেরুদণ্ডের সঙ্গে জুড়ে থাকে পাঁজর। এর কোনও একটিতে সমস্যা হলেই পাঁজরে ব্যথা হতে পারে।
সচরাচর মাসকুলার স্প্যাজ়মের কারণে এই ব্যথা হয়। শারীরচর্চা, ভারী জিনিস তোলা, হঠাৎ মোচড়ে পাঁজরের পেশিতে টান লাগতে পারে। এই ব্যথা নিজে থেকেই কমে যায়। হজমের সমস্যার কারণেও ব্যথা হতে পারে। জেনারেল ফিজ়িশিয়ান সুবীর মণ্ডল বলছেন, “অধিকাংশ মানুষই গ্যাস, অম্বল, আলসারের কারণে পাঁজরে ব্যথায় ভোগেন।”
পাঁজরের হাড় ভেঙে গিয়ে বা চিড় ধরেও ব্যথা হতে পারে। হঠাৎ পড়ে যাওয়া, কোনও দুর্ঘটনা বা আঘাতে রিব কেজের সঙ্গে ভার্টিব্রা, কশেরুকাতেও ফ্র্যাকচার, তা থেকে পাঁজরে ব্যথা হতে পারে। ডা. মণ্ডল বলছেন, “বয়স্ক লোক, যাঁদের শারীরিক ভারসাম্য কম, তাঁদের ক্ষেত্রে এই সম্ভাবনা বেশি। সামান্য নড়াচড়া, শ্বাস নিলেও এতে ব্যথা হয়।”
উপসর্গ যখন
বেশ কিছু রোগের আগাম জানান দেয় পাঁজরে ব্যথা। যেমন, পিত্তথলিতে পাথর থাকলে ডান পাঁজরের নীচ থেকে পিঠের দিকে তীব্র ব্যথা হয়। লিভারের সমস্যায় ডান পাঁজরের নীচে চাপ ধরা ব্যথা থাকে। কিডনির সমস্যায় পাঁজরের পিছনের দিকে ব্যথা হতে পারে। সহ-উপসর্গ হিসেবে প্রস্রাবে জ্বালা, তার রং বদল হয়।
জেরিয়াট্রিক মেডিসিনের অধ্যাপক ডা. অরুণাংশু তালুকদার বলছেন, “নিউমোনিয়ার জন্যও পাঁজরে ব্যথা হয়। শীতে বহু বয়স্ক মানুষই এই সমস্যায় ভোগেন।” এ ক্ষেত্রে পাঁজরের সঙ্গে বুকে ব্যথার তফাত করা কঠিন। চেস্ট এক্স-রেতে ধরা সম্ভব। প্লুরিসি ও ফুসফুসের অন্য সমস্যাতেও উপসর্গ হিসেবে এই ব্যথা হয়।
পাঁজরে ব্যথাই বুক বা তার আশপাশের ত্বকে হারপিস জোস্টার হওয়ার কথা জানান দেয়। এ এক ধরনের পক্স ভাইরাস। ডা. তালুকদার বলছেন, “এ ক্ষেত্রে প্রথম দু’-তিন দিন পাঁজরের যে কোনও এক দিকে ভীষণ ব্যথা হয়, তবে কারণ বোঝা যায় না। পরে ব্যথার জায়গায় ফোসকা দেখা দিলে কারণ স্পষ্ট হয়।”
অনুঘটক ডায়াবিটিস
ডায়াবিটিসের কারণে যদিও পাঁজরে ব্যথা হয় না, তবে এই রোগীদের রক্তে শর্করার মাত্রা বেশি থাকায় হাড়ের গুণগত মান বদলে যেতে পারে, যা থেকে ব্যথা হয়ে থাকে। তা ছাড়া, উচ্চ রক্তচাপ বা রক্তে শর্করার মাত্রা বেশি থাকলে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে থাকে না। ফলে হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা থেকেই যায়। এর জানানও দেয় পাঁজরে ব্যথা। গ্যাসের সমস্যা ভেবে এই ব্যথা ফেলে রাখলে তা প্রাণঘাতীও হতে পারে।
—প্রতীকী চিত্র।
আরও কারণ
অস্টিয়োপোরোসিস, ফাইব্রোসিটিস, অটোইমিউন বা নিউরোলজিক্যাল সমস্যা থেকেও এই ব্যথা হতে পারে।
নিরাময়ের কথা
সাধারণত ব্যথার ধরন, অবস্থান ও অন্যান্য লক্ষণ অনুযায়ী সমস্যা ক্ষেত্র নির্ধারণ এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হয়। অধিকাংশ পাঁজরে ব্যথা ওষুধ, ফিজ়িয়োথেরাপিতে সেরে যায়। পর্যাপ্ত বিশ্রাম, গরম সেঁকে আরাম মেলে। হার্ট, কিডনি বা গলব্লাডারে সমস্যা হলে অস্ত্রোপচার করতে হতে পারে। মানসিক কারণে ব্যথা হলে অ্যান্টি-সাইকোটিক ওষুধ কাজে দেয়।
এক কথায়, হাই তোলা, আড়মোড়া ভাঙা, কাশতে গিয়ে যদি পাঁজরে ব্যথা হয়, তা তুলনায় কম দুশ্চিন্তার। কিন্তু নড়াচড়া না করলেও একটানা যে ব্যথা হতে থাকে, তার অবিলম্বে চিকিৎসা জরুরি। চিকিৎসকদের মতে, দীর্ঘ দিন ধরে পাঁজরে ব্যথা উপেক্ষা করলে তা কখনও কখনও প্রাণঘাতী হতে পারে। তাই ব্যথার শুরুতেই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া ভাল।
প্রতিদিন ২০০’রও বেশি এমন প্রিমিয়াম খবর
সঙ্গে আনন্দবাজার পত্রিকার ই -পেপার পড়ার সুযোগ
সময়মতো পড়ুন, ‘সেভ আর্টিকল-এ ক্লিক করে