লম্বা লাইনে না দাঁড়িয়ে, ঠেলাঠেলি শুরুর আগে ইতিমধ্যেই শ্রীভূমির ঠাকুর দেখে ফেলেছেন কয়েক হাজার মানুষ। বাগবাজার সর্বজনীনের মণ্ডপ দর্শনও কোনও ঝুটঝামেলা ছাড়াই করে ফেলেছেন কয়েক হাজার দর্শনার্থী। দক্ষিণের মুদিয়ালির পুজো সে ভাবেই দেখে ফেলেছেন অনেকে।
তবে এই সব দর্শনার্থীর কেউ যাননি পুজো মণ্ডপে। তবুও মণ্ডপসজ্জা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখেছেন তাঁরা। একদম কাছ থেকে নিজের মতো করে দেখছেন প্রতিমার মুখ। পুজো শুরুর আগে দ্বিতীয়া বা তৃতীয়া থেকেই মণ্ডপে গিয়ে যেমন ঠাকুর দেখার ভিড় বাড়তে শুরু করেছে, সে রকমই পুজোর অ্যাপের মাধ্যমে ঠাকুর দেখার দর্শকও বাড়ছে। অ্যাপ নির্মাণকারী সংস্থাগুলি জানাচ্ছে, ইতিমধ্যেই গত বছরের অ্যাপের দর্শনার্থীর সংখ্যাটা ছাপিয়ে গিয়েছে এ বছর।
একটি পুজো অ্যাপের মাধ্যমে ঠাকুর দেখে রীতিমতো রোমাঞ্চিত শোভাবাজারের বাসিন্দা রক্তিম মজুমদার। রক্তিম বলেন, “গত বছর অষ্টমীর দিন বেরিয়েছিলাম। দু’ঘণ্টা ধরে লম্বা লাইনে অপেক্ষা করে যখন প্রতিমার সামনে পৌঁছনো গেল, তখন পুজোর কর্মকর্তারা তাড়া দিচ্ছেন বেরোনোর জন্য।” রক্তিম জানান, অন্যকে দেখার সুযোগ দেওয়ার জন্য দ্রুত মণ্ডপ থেকে বেরিয়ে পড়তে হয়। ভাল ভাবে একটি পুজো দেখার আগেই অতৃপ্তি নিয়ে রওনা হতে হয় অন্য মণ্ডপের উদ্দেশে। রক্তিম বলেন, “পুজো অ্যাপের মাধ্যমে এ বার ভাল ভাবে ঠাকুর দেখলাম।”
এই পুজো অ্যাপের মাধ্যমে ঠাকুর দেখা কিন্তু টিভির পুজো পরিক্রমার মতো নয়। টাচ স্ক্রিন অথবা মাউস ৩৬০ ডিগ্রি ঘুরিয়ে নিজের মতো করে ঠাকুর দেখা যায় এতে। গত কয়েক বছর ধরে এ রকমই পুজো অ্যাপের মাধ্যমে প্রতিমা ও মণ্ডপ দর্শন করাচ্ছেন কলকাতার যুবক সৌম্য মুখোপাধ্যায়। সৌম্য বলেন, “এই বছর আমরা শহরের ৪০টি সেরা প্রতিমা দর্শন করাচ্ছি পুজো অ্যাপের মাধ্যমে। শুধু এই বছরই নয়, আমাদের আর্কাইভে গেলে গত ছ’বছরের কয়েকটি সেরা ঠাকুরও দেখা যাবে।”
শহরের সাইবার বিশেষজ্ঞেরাও জানাচ্ছেন, এই ধরনের পুজো অ্যাপের জনপ্রিয়তা ক্রমশই বাড়ছে। এক সাইবার বিশেষজ্ঞ অভিষেক মিত্রের মতে, “থ্রি ডি চশমা পরে পুজো অ্যাপ খুললে থ্রিডি ছবি দেখতে পাওয়া যায়। ফলে বাড়ি বসেই ভিড়ের মধ্যে দাঁড়িয়ে পুজো দেখার অভিজ্ঞতা হতে পারে।” আর এক সাইবার বিশেষজ্ঞ সন্দীপ সেনগুপ্ত বলেন, “বয়স্ক, অসুস্থ কিংবা শহরের বাইরে থাকা অনেকেই এই অ্যাপের মাধ্যমে শহরের হইচই উপভোগ করতে পারবেন।”