ভারতে ক্যানসার আক্রান্ত শিশুদের সংখ্যা বাড়ছে, বলছে সমীক্ষা

কেউ সবে তিন বছর পূর্ণ করেছে, কেউ আবার মাত্র সাড়ে পাঁচ। কিন্তু এর মধ্যেই এমন অনেক কিছুর সাক্ষী হয়েছে তাঁরা, যা দেখে অনেক বড় মানুষও ভয় পেয়ে যাবে। কারও কেমোথেরাপি চলছে, কারও আবার সদ্য অস্ত্রোপচার হয়েছে। কলকাতার যে কোনও হাসপাতালে, যেখানে ক্যানসারের চিকিৎসা হয়, তার ছবি এখন এটাই।

Advertisement

তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ১৩:৫৪
Share:

কেউ সবে তিন বছর পূর্ণ করেছে, কেউ আবার মাত্র সাড়ে পাঁচ। কিন্তু এর মধ্যেই এমন অনেক কিছুর সাক্ষী হয়েছে তাঁরা, যা দেখে অনেক বড় মানুষও ভয় পেয়ে যাবে। কারও কেমোথেরাপি চলছে, কারও আবার সদ্য অস্ত্রোপচার হয়েছে। কলকাতার যে কোনও হাসপাতালে, যেখানে ক্যানসারের চিকিৎসা হয়, তার ছবি এখন এটাই। তবে, শুধু কলকাতা বা এ রাজ্যে নয় সারা ভারতেই ক্রমশ বাড়ছে শিশু ক্যানসার রোগীর সংখ্যাটা। এমনই তথ্য উঠে এল সম্প্রতি একটি গবেষণায়।

Advertisement

একটি সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, বিশ্ব জুড়েই প্রতি বছর বাড়ছে নতুন শিশু ক্যানসার রোগীর সংখ্যা। প্রতি বছর প্রায় ১৬০,০০০ জন অনুর্দ্ধ ১৫ বছর বয়সী শিশু নতুন করে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়। প্রতি বছর ৯০,০০০ শিশু ক্যানসারে মারা যান, যাদের বয়স ১৫ বছরের কম। ২০০৪ সালে প্রতি ১০০ জন ক্যানসার আক্রান্তের মধ্যে শিশু ছিল ২ জন। কিন্তু ২০১৩ সালের পরিসংখ্যান দেখাচ্ছে, প্রতি একশো জন ক্যানসার রোগীর মধ্যে গড়ে ৬ থেকে ৭ জন শিশু ক্যানসারে আক্রান্ত। এই গবেষনা দেখাচ্ছে, ২০০৪ সালে প্রতি দশ লক্ষে ১০১ জন কিশোর ক্যানসারে আক্রান্ত, কিন্তু ২০১৩ সালে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১৫৯.৬। কিশোরীদের ক্ষেত্রেও প্রবণতাটা একই। ২০০৪ সালে যেখানে প্রতি ১০ লাখে সংখ্যাটা ছিল ৮৬, সেটা ২০১৩ সালে বেড়ে হয় ১১২.৪।

গবেষকেরা জানাচ্ছেন, রক্ত, লিভার, কিডনির ক্যানসারই বেশির ভাগ দেখা যায় শিশুদের মধ্যে। আর কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে দেখা যাচ্ছে লিউকোমিয়া এবং ব্রেন টিউমারের প্রবণতা বাড়ছে। তবে, তাঁরা জানাচ্ছেন, ভারতে সব থেকে বেশি ক্যানসার আক্রান্ত শিশু দক্ষিণের রাজ্যগুলিতে। তবে, তুলনায় পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলিতে শিশু ক্যানসার রোগীর সংখ্যা কম।

Advertisement

আরও পড়ুন-জেনে নিন ক্যান্সারের কিছু প্রাথমিক লক্ষণ

শিশুদের মধ্যে ক্যানসারের প্রবণতা বাড়ার পিছনে কয়েকটি কারণকেই দায়ী করছেন গবেষকেরা।

বিশ্ব উষ্ণায়ন, খাদ্যাভাস, আর জীবনযাপনের ধরণকেই দায়ী করছেন গবেষকেরা। ত্বকের ক্যানসারের জন্য বিশ্ব উষ্ণায়ন অনেকক্ষেত্রেই দায়ী বলে মনে করছেন গবেষকেরা। খাদ্যাভ্যাসের ক্ষেত্রে গবেষক জয়শ্রী বসাক জানাচ্ছেন, সব সময় যে সবাই জেনে বুঝে অস্বাস্থ্যকর খাবার খায় এমন নয়। যারা শাক-সব্জি বিক্রি করেন তাঁরা অনেক সময়ই বিশুদ্ধ খাদ্যের সঙ্গে নিম্নমানের উপাদান মেশান। যাকে বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় ‘ফুড অ্যাডলটারেসন’। যেমন, পটল ও কাঁচা আম এক ধরণের রাসায়নিকে ভিজিয়ে রাখা হয়, ভাল রঙের জন্য। কিন্তু এটি শরীরের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকারক। তিনি বলেন, ‘‘দুধকে আমরা শিশুদের জন্য সব থেকে বেশি স্বাস্থ্যকর বলে জানি। কিন্তু সেই দুধের মধ্যেও ময়দা, স্টার্চ, এমনকি ইউরিয়াও মেশানো হয়। যা শরীরের পক্ষে খুবই ক্ষতিকর।’’ তিনি বলেন, এমনকী ব্রটিন পেপার ভিজিয়ে মাওয়ায় মেশানো হয়। আর সব থেকে বেশি ক্ষতি করছে ফাস্ট ফুড এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার। কারণ, এইসব খাবারগুলি মুখরোচক বানানোর জন্য নানা রকম রাসায়নিক উপাদান মেশানো হয়। যা স্বাস্থ্যের পক্ষে হানিকারক।

শুধু খাবার নয়, আধুনিক জীবন যাপনের ধরণও বাড়িয়ে দিচ্ছে শিশুদের মধ্যে ক্যানসারের প্রবণতা। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, ইলেকট্রনিক্সের জিনিস যেমন, মোবাইল, ট্যাবলেট, ল্যাপটপ অধিক ব্যবহারের ফলেও বাড়ছে ক্যানসারের সমস্যা। গবেষক আশিস মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ইলেকট্রনিক্সের জিনিস ব্যবহারের সময় ইলেকট্রো ম্যাগনেটিভ ওয়েব নির্গত হয়। আর এই ওয়েব শরীরের পক্ষে খুবই ক্ষতিকর।’’ গবেষকেরা জানাচ্ছেন একটানা ২০ মিনিট মোবাইলের ব্যবহার বাড়িয়ে দেয় ব্রেন টিউমারের ঝুঁকি।

নিজেদের সচেতনতা বাড়িয়ে, খাদ্যভাসের এবং জীবনযাপনের ধরণ বদলে সুস্থ জীবনযাপন সম্ভব। এমনটাই জানাচ্ছেন চিকিৎসক ও গবেষকেরা। চিকিৎসক অর্ণব গুপ্ত বলেন, ‘‘জাঙ্ক ফুড ও ঠান্ডা পানীয় যতটা সম্ভব কম খাওয়া উচিত। এছাড়াও বাচ্চাদের সামনে ধুমপান করা কখনোই উচিত নয়। এটা শিশুদের স্বাস্থ্যের পক্ষে খুবই ক্ষতিকর।’’ তাঁর পরামর্শ, যেহেতু এখন বাতাস ক্রমেই বিষময় হয়ে উঠছে তাই বাইরে বেশিক্ষন থাকতে হলে মাস্ক ব্যবহার করাই ভাল। নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু ক্যানসার রিসার্চ ইন্সটিটউশনের গবেষক আশিষ মুখোপাধ্যায় জানান, বাজার থেকে শাক-সব্জি এনে সেগুলিকে পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট পাউডারে মিশিয়ে গরম জলে ভাল করে ফুটিয়ে তারপর রান্না করা উচিত। এমনকি মাছ, মাংসও রান্নার আগে নুন দিয়ে ফুটিয়ে নেওয়া উচিত। তাহলে অনেকটাই খাবারগুলি বিষমুক্ত হবে বলে তিনি জানান।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন