Employee Wellbeing

কেবল কাজ আদায় নয়, কাজের মানুষটিকে ভাল রাখলে তবেই ভাল থাকা যাবে! বলছে আধুনিক অফিসনীতি

বক্তব্য একটাই— অফিসকাছারিতে উদয়াস্ত পরিশ্রম করা মানুষগুলিকে ভাল রাখা কেবল দায় নয়, বরং প্রয়োজন। কারণ, কর্মীরা ভাল থাকলে তবেই বাণিজ্যে লক্ষ্মী বাস করবে।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৪:১৮
Share:

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি জাহিদ গাংজিকে অভ্যর্থনা জানাচ্ছেন রত্না সিংহ। ছবি : সংগৃহীত।

কাজের বোঝা হালকা করতে প্রয়োজন কর্মীদের। বেতনের বিনিময়ে তাঁরা কাজ করবেন। কিন্তু ভাল কাজ পাওয়ার জন্য কি শুধু বেতনটুকুই যথেষ্ট? এ যুগের অফিস কর্তৃপক্ষ মনে করেন, শুধু বেতন যথেষ্ট নয়। উৎসবে ‘বোনাস’ বা বিশেষ উপহারও যথেষ্ট নয়। কর্মীদের থেকে ভাল কাজ পেতে চাইলে তাঁদের ভাল থাকার দিকে নজর দিতে হবে।

Advertisement

কর্মীদের ভাল রাখতে কী করতে হবে? তার উত্তর খুঁজতে গত শুক্রবার এক আলোচনাচক্র বসিয়েছিল বেঙ্গল চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ় (বিসিসি অ্যান্ড আই)। সেখানে উপস্থিত ছিলেন বাংলার বাণিজ্য জগতের কর্তাব্যক্তিরা। আলোচনায় সভায় তাঁরা যা বললেন, তার বক্তব্য একটাই— অফিসকাছারিতে উদয়াস্ত পরিশ্রম করা মানুষগুলিকে ভাল রাখা কেবল দায় নয় বরং প্রয়োজন। কারণ, কর্মীরা ভাল থাকলে তবেই বাণিজ্যে লক্ষ্মী বাস করবে।

অনুষ্ঠানটির মূল ভাবনা যাঁর মস্তিষ্কপ্রসূত, তিনি বেঙ্গল চেম্বারের ওয়েলনেস অ্যান্ড কমিউনিটি কমিটির চেয়ারপার্সন সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায়। অনুষ্ঠানের শুরুতে তিনি দেখালেন কেন কর্মীদের ভাল থাকা শুধু অর্থের জোগানের উপর নির্ভর করে না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-এর একটি সমীক্ষার উল্লেখ করে সুজয় জানালেন, কর্মীপিছু জন্য যদি কোনও সংস্থা অতিরিক্ত এক ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৯০ টাকা) বিনিয়োগ করে থাকে, তবে অন্তত তার চার গুণ ফেরত পেয়েছে।

Advertisement

অর্থাৎ, কর্মীরা সুখী হলে আখেরে লাভ নিয়োগকারীরই। কিন্তু কর্মীদের সুখী রাখতে গেলে কী করা দরকার? সুজয় জানাচ্ছেন, কর্মীদের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্য, অনুভূতি এবং আবেগের খেয়াল রাখতে হবে। অর্থের প্রয়োজন মেটানোর পাশাপাশি তাঁদের সামাজিক চাহিদা বুঝতে হবে। একই সঙ্গে কাজের পরিবেশ, ভাল কাজের স্বীকৃতি, পুরস্কার, পেশাজীবনে উন্নতি, নীত, লক্ষ্য, সব দিকে খেয়াল রাখা জরুরি। তবেই কর্মীরা ভাল থাকবেন এবং তার জোরেই তরতরিয়ে এগোবে সংস্থা।

অনুষ্ঠানমঞ্চে চলছে আলোচনা। কথা বলছেন প্যানেলিস্টরা।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন নিউরোসাইকিয়াট্রিস্ট চন্দ্রশেখর মুখোপাধ্যায়, প্রোটাচ গল্‌ফ অ্যাকাডেমির প্রতিষ্ঠাতা এবং ডিরেক্টর ইন্দ্রজিৎ ভালুটিয়া, টাটা স্টিলের চিফ ওয়েলনেস অফিসার মুকেশ আগরওয়াল, ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সেরিব্রাল পালসির ভাইস চেয়ারপার্সন রিনা সেন, বেদিক রিসর্ট অ্যান্ড হোটেল প্রাইভেট লিমিটেডের অ্যাসোসিয়েট ভাইস প্রেসিডেন্ট রাজীব রায়চৌধু্রী এবং আরপি সঞ্জীব গোয়েঙ্কা গ্রুপের উপদেষ্টা সব্যসাচী ভট্টাচার্য। অনুষ্ঠানের সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন বিসিসি অ্যান্ড আই-এর ওয়েলনেস কমিউনিটি কমিটির মেন্টর রত্না সিংহ। অনুষ্ঠানের শুরুতে কর্মীদের ভাল থাকা নিয়ে কথা বললেন গাংজি অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েশনের জাহিদ গাংজি। তিনি বললেন, ‘‘কর্মক্ষেত্রে এখন সুস্থ কর্মীর থেকে সুখী কর্মী বেশি জরুরি হয়ে পড়েছে। নতুন যুগের পরে কর্মীদের ভাল রাখার সংজ্ঞা বদলে গিয়েছে।’’ কর্মীদের ভাল রাখার ব্যাপারে বাকি প্যানেলিস্টরাও নিজস্ব মতামত জানালেন।

চিকিৎসক চন্দ্রশেখর যেমন মনে করেন, যে কোনও কর্মীর লক্ষ্য স্পষ্ট হওয়া জরুরি। তাঁর কথায়, ‘‘লক্ষ্য যদি স্থির থাকে, তবে আমি দেখেছি, যে কোনও সমস্যা থেকে দ্রুত ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষমতাও থাকে।’’ ইন্দ্রজিৎ নিজে খেলার জগতের মানুষ। তাঁর সমাধানেও প্রাধান্য পেয়েছে খেলাধুলো। তিনি বললেন, ‘‘যে কোনও ধরনের স্পোর্টস— সে ব্যাডমিন্টন হোক বা ফুটবল-ক্রিকেট, এমনকি, দাবার মতো ইনডোর গেমসও আমাদের হার-জিৎ সহজে সামলাতে শেখায়। তাই কর্মীদের ভাল রাখার ক্ষেত্রে স্পোর্টস কাজে লাগতে পারে।’’ রিনা মনে করেন, নিজের সমস্যাগুলিকে ভুলে অন্যকে ভাল রাখার কথা ভাবতে শেখাতে হবে কর্মীদের।

টাটা স্টিলের ওয়েলনেস অফিসার মুকেশ তাঁর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে জানালেন, কর্মীদের স্বাস্থ্য ভাল রাখার উপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলেন তিনি। তাতে সুফল মিলেছে। তিনি বলছেন, ‘‘আমরা একটা বিশেষ কর্মসূচি নিয়েছিলাম, যেখানে কর্মীদের জীবন যাপনের ধরন বদলে দেওয়া হবে। এই প্রক্রিয়ায় অফিসের কোনও কোনও কর্মী ২০ কেজি ওজনও কমিয়েছেন। অনেকে অনেক রোগ থেকে মুক্তি পেয়েছেন। তাঁরা পরে আমাদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন।’’ বেদিকের রাজীবের কাছে আবার ভাল থাকার উপায় দু’টি, ভাল খাওয়া এবং সবুজে ঘিরে থাকা। কর্মীদের খাওয়াদাওয়া এবং অফিসের পরিবেশে সবুজালি কর্মীদের মন ভাল রাখার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে বলে মনে করেন তিনি। শেষে সব্যসাচী বললেন, নিয়ম মানার কথা। তাঁর মতে, সকাল থেকে রাত একটি স্বাস্থ্যকর রুটিনে থাকতে পারাও ভাল থাকার উপায় হতে পারে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement