কমোডের চেয়ে বেশি জীবাণু স্মার্টফোনে!

এ দেশে শৌচাগারের অভাব থাকতে পারে, মোবাইল ফোনের নেই! হাটেবাজারে, মাঠেঘাটে, এমনকি শৌচাগারেও মোবাইল নিয়ে যাওয়া কার্যত রেওয়াজ হয়ে গিয়েছে। প্রযুক্তির উপরে এই নির্ভরতায় যোগাযোগ হয়তো নিবি়ড় হয়েছে। কিন্তু জনস্বাস্থ্য বিজ্ঞানীরা বলছেন, মোবাইলের দৌলতে বা়ড়ছে জীবাণুঘটিত সংক্রমণের বিপদও!

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৩ জানুয়ারি ২০১৯ ০৪:১৪
Share:

—প্রতীকী ছবি।

এ দেশে শৌচাগারের অভাব থাকতে পারে, মোবাইল ফোনের নেই! হাটেবাজারে, মাঠেঘাটে, এমনকি শৌচাগারেও মোবাইল নিয়ে যাওয়া কার্যত রেওয়াজ হয়ে গিয়েছে। প্রযুক্তির উপরে এই নির্ভরতায় যোগাযোগ হয়তো নিবি়ড় হয়েছে। কিন্তু জনস্বাস্থ্য বিজ্ঞানীরা বলছেন, মোবাইলের দৌলতে বা়ড়ছে জীবাণুঘটিত সংক্রমণের বিপদও!

Advertisement

সম্প্রতি বিদেশের বিভিন্ন সমীক্ষায় উঠে এসেছে, উন্নত দেশের নাগরিকদের স্মার্টফোনে লেগে থাকা জীবাণুর পরিমাণ নাকি শৌচাগারের কমোডের থেকেও বেশি! সেই সব জীবাণুর মধ্যে রয়েছে ‘ই কোলাই’-সহ নানা ধরনের রোগ সৃষ্টিকারী ব্যাক্টিরিয়াও। এ দেশে এমন সবিস্তার সমীক্ষা এখনও হয়নি। তবে নাগরিক অভ্যাস যে-পথে হাঁটছে, তাতে এখানেও সমীক্ষা করলে ফলাফল একই, বড়জোর উনিশ-বিশ হতে পারে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। ২০১১ সালে লন্ডন স্কুল অব হাইজিন এবং ট্রপিক্যাল মেডিসিনের সমীক্ষায় ধরা পড়েছিল, সে-দেশে প্রতি ছ’টি মোবাইলের মধ্যে একটিতে ফিক্যাল ব্যাক্টিরিয়া (মল থেকে উৎপন্ন) রয়েছে। সেই সঙ্গে পাওয়া গিয়েছিল ই-কোলাইয়ের মতো ব্যাক্টিরিয়াও।

জনস্বাস্থ্য বিজ্ঞানী এবং পরিবেশবিদদের অনেকেই বলছেন, তরুণ প্রজন্ম মোবাইল নিয়ে সর্বত্র যাতায়াত তো করছেই। অনেকে বা়ড়ির একেবারে খুদে সদস্যকে ভোলাতেও হাতে মোবাইল ধরিয়ে দিচ্ছেন। সেই শিশুটি মোবাইল মুখেও দেয়। খেতে খেতে অনেকে কথা বলেন মোবাইলে, খাবার টেবিলেও মোবাইল রেখে দেন। দু’‌টোই সমান বিপজ্জনক। ‘‘শৌচাগারে গেলে ভাল ভাবে সাবান দিয়ে হাত-পা-মুখ ধুতে বলা হয়। কিন্তু মোবাইল তো আর ধোয়া যায় না। তার উপরে স্মার্টফোনে ‘কভার’ থাকে। মোবাইল ফোন যদিও বা মুছে নেওয়া যায়, কিন্তু আবরণের আড়ালে তো রুমাল পৌঁছয় না,’’ বললেন এক পরিবেশবিদ।

Advertisement

ব্রিটেনের অ্যাবারডিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাক্টিরিয়োলজির অধ্যাপক হিউ পেনিংটনের মতে, মোবাইল দিনের মধ্যে বহু বার শরীরের সংস্পর্শে আসে। তাই সংক্রমণের আশঙ্কা বাড়ে। কলকাতার অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব পাবলিক হেল্‌থ অ্যান্ড হাইজিনের বিজ্ঞানী মধুমিতা দুবে জানাচ্ছেন, শৌচাগার থেকে বেরিয়ে ঠিকমতো হাত না-ধুলে বা শৌচাগারে মোবাইল নিয়ে গেলে তার মাধ্যমে নানা ধরনের ক্ষতিকর ব্যাক্টিরিয়া ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে। সব সময় হয়তো সঙ্গে সঙ্গে রোগ দেখা দেবে না। কিন্তু বিপদের আশঙ্কা থেকেই যায়। তাঁর কথায়, ‘‘মোবাইলের ব্যবহার তো বন্ধ করা যাবে না। তবে বিপদ রুখতে নিয়ম করে হাত-পা-মুখ ধোয়ার মতো স্বাস্থ্য-সচেতনতা জরুরি।’’

জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশবিজ্ঞানী স্বাতী নন্দী চক্রবর্তীর বক্তব্য, সর্বত্র ব্যবহারের ফলে মোবাইল হয়ে উঠছে জীবাণুর অন্যতম বাহক। শিশুরা হাত এবং যে-কোনও জিনিস বারবার মুখে দেয়। তাই ওদের মোবাইল দেওয়া উচিত নয়। ‘‘অ্যাসিনেটোব্যাক্টর, সিউডোমোনাস, স্টেফাইলোকক্কাসের মতো ব্যাক্টিরিয়া এ ভাবে বেশি ছড়ায়। আমজনতা, চিকিৎসক— সব তরফেই এই বিষয়ে আরও সচেতনতা জরুরি। শুধু শিশু নয়, এই জীবাণু সব বয়সের মানুষেরই ক্ষতি করতে পারে,’’ বলছেন স্বাতীদেবী।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement