‘পাইলস’ নিয়ে সতর্ক না হলে পরিস্থিতি সঙ্গীন হতে পারে। লিখেছেন সার্জন অনির্বাণ জানা।

অর্শচরিত ভয়ঙ্করী

আমাদের দেহের সব থেকে অবহেলিত অংশ বোধহয় পায়ুপথ। ফিসার, পাইলস এ সব শব্দগুলো সাধারণ মানুষের কাছে খুব চেনা শব্দ। ফিসার পায়ুপথ ছিঁড়ে যাওয়ার জন্য হয়, ফিসটুলা এক ধরনের নালি ঘা আর পাইলস হল পায়খানার রাস্তার শিরার রোগ।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০১৮ ০৮:৪৬
Share:

পাইলস প্রথম থেকে সতর্ক থাকা দরকার। বলছেন চিকিৎসকরা।

অর্শ রোগে মলদ্বার থেকে মলত্যাগের সময় রক্ত পড়ে। কখনও তার পরিমাণ কম, কখনও বেশি। কখনও তা অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক, আবার কখনও বিনা যন্ত্রণায় অঝোরে রক্তপাত হয়ে যায়। অনেকের মলদ্বার ফুলে ওঠে আবার কারও-কারও মলদ্বার থেকে মাংসপিণ্ড ঝুলে পড়ে যা কখনও আপনাআপনি ভেতরে ঢুকে যায় অথবা চাপ দিয়ে ঢুকিয়ে দিতে হয়।

Advertisement

সত্যি বলতে কী, আমাদের দেহের সব থেকে অবহেলিত অংশ বোধহয় পায়ুপথ। ফিসার, পাইলস এ সব শব্দগুলো সাধারণ মানুষের কাছে খুব চেনা শব্দ। ফিসার পায়ুপথ ছিঁড়ে যাওয়ার জন্য হয়, ফিসটুলা এক ধরনের নালি ঘা আর পাইলস হল পায়খানার রাস্তার শিরার রোগ। এই শিরাগুলোকে বলা হয় অ্যানাল ক্যুশন অর্থাৎ, পায়খানার রাস্তার তাকিয়া। যখন শিরাগুলোয় চাপ পড়ে তখন সেগুলো ছিঁড়ে যায় আর শুরু হয় রক্তপাত। রক্তপাতের পরিমাণ প্রথম দিকে সাধারণত অল্প থাকে। কিন্তু এমনও নজির রয়েছে যে, রোগ বাড়তে বাড়তে ক্রমাগত রক্তপাতের জন্য রোগীকে রক্ত দিতে হয়েছে।

পায়ুপথ বা অ্যানাল ক্যানেলের কাছে সিস্টেমিক আর পোর্টাল সিস্টেম জোড়া লাগানো আছে। দু’টি সিস্টেমে শিরা-ধমনীর যোগাযোগও ওই জায়গায় হয়। স্বভাবতই শরীরের কোনও একটা সিস্টেমে চাপ পড়লে ক্ষতিগ্রস্ত হয় শিরাগুলো।

Advertisement

এই রোগের প্রধান কারণ ধরা হয় কোষ্ঠকাঠিন্যকে। শক্ত পায়খানা পায়ুপথের শিরাগুলোয় রক্ত চলাচলে বাধা দেয়। শিরার উপর চাপ পড়ে এবং ছিঁড়ে যায়। এ ছাড়া সংক্রমণ এবং আলাদা করে শিরার রোগে পাইলস হতে পারে। কিছু কিছু মানুষের পায়খানার রাস্তার পেশির ক্ষমতা কম থাকে। ‘অ্যানাল হাইপোটোনিয়া’ও পাইলস হওয়ার একটা কারণ। বয়স্ক মানুষের পেশির শক্তি অনেক সময় কমে যাওয়ার কারণে পাইলস হতে পারে। মোটা হয়ে যাওয়াও পাইলস হওয়ার জন্য দায়ী হতে পারে। গর্ভাবস্থায় বা পেটের ভেতর কোনও টিউমার থাকলেও পাইলস দেখা দিতে পারে।

কী কী কারণে অর্শ হতে পারে

দীর্ঘমেয়াদী কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়েরিয়া

আনাজ, ফল ও আঁশযুক্ত খাবার কম খাওয়া।

অতিরিক্ত ওজন

গর্ভাবস্থা বা জল কম খাওয়া

লিভার সিরোসিস

মল ত্যাগের সময় চাপ দেওয়া

অতিরিক্ত মাত্রায় মল নরমকারক ওষুধ ব্যবহার করা

পায়খানা করার সময় বেশি সময় ব্যয় করা

বয়সের কারণে পেশির ক্ষমতা কমে যাওয়া

পরিবারে কারও পাইলস থাকা

পাইলসে সাধারণত ব্যথাহীন রক্তপাত হয়। পায়খানা হওয়ার আগে বা পরে এবং কিছু ক্ষেত্রে পায়খানার সঙ্গে রক্ত পড়ে। অনেকের ক্ষেত্রে নরম মাংসপিণ্ডের মতো পাইলস বেরিয়ে আসতে দেখা যায়। বেরিয়ে আসা পাইলস আটকে গেলে অথবা রক্তের দলা শিরার ভেতর জমাট বাঁধলে ব্যথা হতে পারে। ডাক্তারি ভাষায় এই অবস্থাকে ‘প্রোলাপ্সড পাইলস’ ও ‘থ্রম্বোসড্ হিমারয়েড’ বলে। পাইলসের দলা যদি পায়খানার রাস্তার ভেতরে থাকে তা হলে তাকে ‘ফার্স্ট ডিগ্রি হিমারয়েড’ বলে। যদি বাইরে বেরিয়ে আসা এবং নিজে থেকে ভেতরে ঢুকে যাওয়া চলতে থাকে তা হলে সেটি ‘সেকেন্ড ডিগ্রি’, বাইরে বেরিয়ে আসার পর সেটা যদি আঙুল দিয়ে ভেতরে ঢুকিয়ে দিতে হয় তা হলে ‘থার্ড ডিগ্রি’ আর বাইরে বেরিয়ে আসার পর সেটা যদি বাইরেই রয়ে যায় তা হলে তাকে ‘ফোর্থ ডিগ্রি’ পাইলস বলে।

চিকিৎসা পদ্ধতি পাইলসের ডিগ্রির উপর নির্ভর করে। থার্ড আর ফোর্থ ডিগ্রির জন্য অস্ত্রোপচারের পরামর্শ দেওয়া হয়। মাইক্রোসার্জারিও করা যায়। আরও নিত্যনতুন পদ্ধতি আবিষ্কৃত হচ্ছে পাইলস-এর অস্ত্রোপচারের। এই রোগকে ঠেকিয়ে রাখার জন্য অবশ্যই আনাজ বেশি করে খেতে হবে। জলও প্রচুর পরিমাণে খাওয়া দরকার। একটা ব্যাপারে বিদেশিদের থেকে আমরা বিজ্ঞানসম্মত। সেটা হল ভারতীয় পদ্ধতিতে হাঁটুমুড়ে পায়খানায় বসা। এতে পাইলস হওয়ার সম্ভাবনাও কম থাকে। কিন্তু এখন বহু ভারতীয় বাড়িতেই বিদেশি কায়দায় কমোড ঢুকে গিয়েছে। পায়খানা কালো বা লালচে হলে, পায়খানার সঙ্গে খুব বেশি রক্ত পড়লে, পায়খানার সময় বা পরে পায়ুপথের মুখে চাকা অনুভব করলে, মলদ্বারে ব্যথা হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। বেশিদিন ভুগলে ডাক্তার দেখিয়ে নেওয়াই ভাল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন