relationship tips

স্ত্রীর ফোনের পাসওয়ার্ড নেই স্বামীর কাছে, স্বামীর ফোনে হাত দেবেন না স্ত্রী! বিয়ের জন্য তা কি মন্দ?

মোবাইল ফোনেই লুকিয়ে রয়েছে ব্যক্তিগত সব কিছু। সেই আগল কি কাছের মানুষের কাছে খুলে দেওয়া যায়? চর্চায় রয়েছে যুগলের মধ্যে ‘ওপেন ফোন পলিসি’।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২১ মে ২০২৫ ১০:১২
Share:

প্রতীকী চিত্র। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম। গ্রাফিক সহায়তা: এআই।

আপনি কি সম্পর্কে রয়েছেন? যদি থাকেন, তা হলে নিশ্চয়ই কখনও না কখনও সঙ্গীর আচরণ মনে সন্দেহের উদ্রেক ঘটিয়েছে। হয়তো মনে হয়েছে, গভীর রাত পর্যন্ত তিনি কার সঙ্গে চ্যাট করছেন। বা হয়তো ভেবেছেন, সমাজমাধ্যমে সঙ্গীটি কার ছবিতে বেশি লাইক দিচ্ছেন।

Advertisement

সময়ের সঙ্গে ব্যক্তিগত জীবন এবং কর্মজীবনের পরিসর এবং আঙ্গিক বদলাতে থাকে। সম্পর্কের বিভিন্ন বাঁকে তাই একে অন্যের প্রতি ‘সন্দেহ’ তৈরি হওয়াটাও স্বাভাবিক। এ রকম পরিস্থিতিতে নতুন প্রজন্মের অনেকেই সম্পর্ক নষ্টের মূলে দায়ী করছেন প্রিয় মোবাইল ফোনটিকেই। অনেকে সমস্যা মেটাতে সম্পর্কে ‘ওপেন ফোন পলিসি’ শুরু করেছেন। কিন্তু এই ধরনের শর্ত কি কোনও সম্পর্কে উন্নতি ঘটাতে পারে? না কি তা সম্পর্কের অবনতির সূত্রপাত ঘটায়? উত্তর পাওয়ার আগে বিষয়টিকে বুঝতে হবে।

‘ওপেন ফোন পলিসি’ কী?

Advertisement

এই ধরনের শর্তের অর্থ, যুগলের মধ্যে ফোন নিয়ে কোনও গোপনীয়তা থাকবে না। প্রয়োজনে একে অপরের ফোন ব্যবহার করতে পারবেন এবং অন্য জন ফোনে কী করছেন, তার উপর নজরদারিও চালাতে পারবেন। পাশাপাশি ফোনের মেসেজ, সমাজমাজমাধ্যম, অনলাইন পেমেন্ট ইত্যাদিও দেখার অনুমতি থাকবে। সমাজমাধ্যমেও এই নতন ‘ট্রেন্ড’ নিয়ে শুরু হয়েছে চর্চা। নতুন প্রজন্মের অনেকের কাছেই এখন ‘ওপেন ফোন’ সম্পর্কের লিটমাস টেস্টের মতো।

সুবিধা কোথায়?

সম্পর্কে একে অপরের ফোন দেখার অনুমতি থাকলে কয়েকটি সুবিধা পাওয়া যেতে পারে—

১) কয়েকটি ক্ষেত্রে এই ধরনের শর্ত পারস্পরিক সম্পর্কে বিশ্বাস গড়ে তুলতে পারে।

২) অন্যের দৈনন্দিন মোবাইল ব্যবহারের ধরন থেকে সঙ্গী অনেক কিছু শিখতে পারেন।

৩) সন্দেহ থেকে তৈরি হয় সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার ভয় এবং যার ফলে মনে অবসাদ বাসা বাঁধতে পারে। এ রকম ক্ষেত্রে অন্যের ফোন ব্যবহারের অনুমতি সম্পর্ককে বাঁচিয়ে তুলতে পারে।

—প্রতীকী চিত্র।

সমস্যাও রয়েছে বিস্তর

মনে রাখতে হবে, যে কোনও সম্পর্কের ভিত গড়ে ওঠে বিশ্বাসে ভর করে। আবার এটাও ঠিক, যে কোনও সম্পর্কে ব্যক্তিগত পরিসরের প্রয়োজন রয়েছে। মনোরোগ চিকিৎসক শর্মিলা সরকার বললেন, ‘‘এই ধরনের শর্তের কিছু ভাল দিক অবশ্যই রয়েছে। কিন্তু তার থেকেও বেশি রয়েছে খারাপ দিক। সম্পর্কে বিশ্বাস এবং সততা থাকলে ‘ওপেন ফোন পলিসি’র কোনও প্রয়োজন নেই।’’

মনোবিদ অনিন্দিতা মুখোপাধ্যায়ের মতে, নতুন প্রজন্মের একাংশের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা থেকে অবিশ্বাসের জন্ম হয়, যা সম্পর্কের ক্ষতি করে। তাঁরই এক ক্লায়েন্ট স্ত্রীকে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের তথ্য জানাতে নারাজ। কারণ স্বামীর মনে হয়েছে, সে ক্ষেত্রে বিবাহবিচ্ছেদ হলে স্ত্রী বড় অঙ্কের খোরপোশ দাবি করতে পারেন! অনিন্দিতার কথায়, ‘‘যুগলের ফোনের পাসওয়ার্ড দু’জনের জানা থাকলে তা স্বাস্থ্যকর সম্পর্ক। কিন্তু সেটাই স্বাস্থ্যকর সম্পর্কের একমাত্র মাপকাঠি হতে পারে না!’’

শর্মিলার মতে, অন্যের প্রতি মনের মধ্যে কোনও সন্দেহ দানা বাঁধলে আগে সেই ব্যক্তির উচিত নিজেকে প্রশ্ন করা। ফোন-ঘটিত কোনও বিষয় থেকেই বর্তমানে বহু যুগল এবং দম্পতির সম্পর্ক তলানিতে এসে ঠেকছে। তাঁর কথায়, ‘‘এ রকম ক্ষেত্রে ফোন খোলা থাকলে অনেক সময়েই হারানো বিশ্বাস ফিরে আসতে পারে। কিন্তু সেটা দিনের পর দিন করা উচিত নয়।’’ কিন্তু একান্ত ব্যক্তিগত পরিসর অন্যের সঙ্গে ভাগ করা উচিত নয় বলেই মনে করেন শর্মিলা। কারণ তা কখনও কখনও বিশ্বাসের পরিবর্তে অবিশ্বাস তৈরি করতে পারে। তিনি বললেন, ‘‘সব সময় অন্যের ফোন ঘাঁটলে, একটি সাধারণ সহজ মেসেজও তাঁর কাছে অন্য রকম মনে হতে পারে, যেটা সম্পর্কের মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে।’’

অপরাধপ্রবণ মানসিকতা

অন্যকে কারও ঠকানোর মানসিকতা থাকলে তিনি ভবিষ্যতেও একই ভুল করতে পারেন। কথাপ্রসঙ্গেই একটি উদাহরণ দিলেন শর্মিলা। ফোন ঘেঁটেই স্ত্রী স্বামীর পরকীয়ার কথা জানতে পারেন। থেরাপি করিয়েছেন দম্পতি। তার পর তাঁরা ‘ওপেন ফোন পলিসি’ শুরুও করেন। কিন্তু স্বামী তার পরেও পরকীয়া সমান ভাবে চালিয়ে নিয়ে গিয়েছেন। শর্মিলার কথায়, ‘‘কারও ঠকানোর মানসিকতা থাকলে, একটা পথ বন্ধ হলে অজস্র পথ খুলে যায়। সমস্যা হলে সামনাসামনি কথা বলা যেতে পারে। ফোন ঘেঁটে লাভ নেই।’’ একে অপরের ব্যক্তিগত পরিসরকে সম্মান করলে সম্পর্ক আরও ভাল থাকে বলেই মনে করেন শর্মিলা।

—প্রতীকী চিত্র।

সীমা অতিক্রম নয়

সুস্থ সম্পর্কে যুগল বা দম্পতি কী কী করেন, তা একে অপরের জানার অধিকার থাকে। পাসওয়ার্ড বা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের মতো তথ্য জানা থাকলে বিপদে তা কাজেও আসে। কিন্তু অন্যের ফোনে নজরদারির সঙ্গে ‘নীতিপুলিশি’র সাদৃশ্য তুলে ধরতে চাইছেন অনিন্দিতা। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘এতে সাময়িক ভাবে মানুষটির মধ্যে কোনও পরিবর্তন হয়তো আনা যেতে পারে। কিন্তু তাতে তাঁর মানসিকতার কি কোনও পরিবর্তন ঘটবে?’’

অনন্দিতার মতে, সমাজমাধ্যম আসার পরে ‘বন্ধু’র সংজ্ঞা বদলে গিয়েছে। ফলে সীমা অতিক্রম করলেই সম্পর্কে তার অভিঘাত নেমে আসছে। তাঁর কথায়, ‘‘হাতে ফোন আছে মানেই সমাজমাধ্যমে সকলের সঙ্গে কথা বলা যায় না। সমস্যা তৈরি হলে ‘ও তো আমার ফেসবুকের বন্ধু’— এই ধরনের যুক্তিও খাটে না।’’ অনিন্দিতার দাবি, দীর্ঘকালীন ক্ষেত্রে অন্যের ফোনের অ্যাকসেস কোনও সম্পর্কে টেকাতে পারে না। এই ধরনের প্রবণতা সম্পর্ককে আরও ভঙ্গুর করে তোলে।

‘ওপেন ফোন পলিসি’ ব্যক্তিবিশেষে ফলপ্রসূ হতে পারে। সকলের ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি সমান ভাবে কাজ না-ও করতে পারে। এই ধরনের ‘শর্ত’ দু’পক্ষের পারস্পরিক সম্মতিতেই শুরু করা উচিত। পাশাপাশি মনে রাখতে হবে, সম্পর্কের গিঁট কতটা পোক্ত হবে, তা কখনও ফোনের লক স্ক্রিনের উপর নির্ভর করে না।

(এই প্রতিবেদনে সম্পর্কের সমীকরণের ক্ষেত্রে একটি বিশেষ প্রবণতার দিকে নির্দেশ করা হয়েছে। বিনা অনুমতিতে অন্যের ফোন ব্যবহার করা আইনত দণ্ডনীয়।)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement