আদরের প্রকাশ হিসেবে আলিঙ্গন পছন্দ নয় আপনার পোষ্যের। ছবি: সংগৃহীত।
আপনার পোষ্য যে আপনার কাছে সবচেয়ে আদরের, সবচেয়ে প্রিয়, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু আদরের প্রকাশ নিয়ে নানাবিধ তর্ক রয়েছে। মানুষ একে অপরের প্রতি ভালবাসা প্রকাশের জন্য আলিঙ্গন করেই থাকেন। সেটি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক। কিন্তু সারমেয়র কাছে তা স্বাভাবিক নয়। তাদের কাছে যেমন গা শুঁকে, গা চেটে আদর করাই হচ্ছে স্বাভাবিক আচরণের তালিকায় পড়ে। তাই চেপে ধরে সারমেয়কে আদর করলে আনন্দ কেবল আপনি পাচ্ছেন, সে পাচ্ছে না। আর মুখ ফুটে প্রতিবাদ জানানোর ক্ষমতাও তার নেই। ফলে অনুমতি দিচ্ছে কি দিচ্ছে না, তা-ও বোঝা যাচ্ছে না। কিন্তু পোষ্যের কিছু নীরব আচরণ আপনাকে ইঙ্গিত দিতে পারে। সেগুলির দিকে নজর দিলে হয়তো অবোলা প্রাণীর মনের কথা বুঝে যেতেও পারেন। অনেক সময়ে শিশুরা পোষ্যকে জড়িয়ে ধরে আদর করতে চায়। কিন্তু সেখানে বিরক্তি বেড়ে গিয়ে কখন যে হিংস্র হয়ে উঠবে সারমেয়, তা আন্দাজ করা যায় না। বিরক্তি চরমে পৌঁছে গেলে শিশুকে হঠাৎ করে কামড়েও দিতে পারে সে।
সারমেয়রা নিজেদের মধ্যে কী ভাবে যোগাযোগ করে, দেখেছেন কখনও? লক্ষ করবেন, তারা একে অপরকে জড়িয়ে ধরে না। উল্টে মাটিতে চেপে ধরে। তবে এই আচরণের দু’টি অর্থ হতে পারে। একটি খেলা করা, আদর করা, অন্যটি লড়াই করা। সুতরাং, যখন আপনি একটি সারমেয়কে জড়িয়ে ধরেন, সে বুঝতে পারে না, আপনি কী বলতে চাইছেন। আপনি তাদের জাপ্টে ধরে রাখলে, তাদের মনে হয়, সেই মুহূর্তে তারা বন্দি। পালাবার পথ নেই যেন। যদি ভয়ও করে কোনও বিষয়ে, সেখান থেকে পালাতে পারে না। তাতে অস্বস্তি বাড়তে থাকে। বেশির ভাগ সময়েই আলিঙ্গনের সময়ে দু’জনের মুখ দু’দিকে থাকে, সরাসরি চোখের দিকে তাকানো সম্ভব হয় না, তাই পোষ্য কী ভাবছে, আপনি জানেন না। আর আপনার আচরণকে আক্রমণাত্মক বা হুমকি হিসেবেও দেখতে পারে তারা। যদিও সব পোষ্যের ক্ষেত্রে এই তত্ত্ব কার্যকর নয়। কিছু সারমেয় আবার মালিকদের আলিঙ্গন পছন্দ করে।
আলিঙ্গনের ফলে বিরক্তি চরমে পৌঁছে গেলে শিশুদেরও হঠাৎ কামড়ে দিতে পারে সে। ছবি: সংগৃহীত।
আপনি হয়তো মনে করেন, আপনার পোষ্য আপনার আলিঙ্গন পছন্দ করে। কারণ, আপনি মাঝেমধ্যেই পোষ্যকে জড়়িয়ে ধরেন আর সে আপত্তি জানায় না। কিন্তু আসলে, পোষ্য আপনার এই আচরণ সহ্য করে চলেছে। ইউনিভার্সিটি অফ ব্রিটিশ কলোম্বিয়ার মনোবিজ্ঞানের অধ্যাপক স্ট্যানলি কোরেন একটি গবেষণার জন্য সমীক্ষা করেন। সারমেয়দের উপর একাধিক বই লিখেছেন তিনি। সমীক্ষায় ২৫০টি ছবি খতিয়ে দেখেন অধ্যাপক। প্রত্যেক ছবিতেই দেখা যাচ্ছে, সারমেয়কে আলিঙ্গন করে রয়েছে মানুষ। মানুষের মুখে হাসি। বিরক্তি, রাগ বা হতবাক হয়ে থাকার প্রতিক্রিয়া সারমেয়দের মুখে। ৮১ শতাংশ সারমেয়র শরীরী ভাষায় চাপের লক্ষণ দেখা গিয়েছে। আলিঙ্গনের চাপের মাত্রা বেশি হয়ে গেলে, সে হঠাৎ কামড়ে দিতে পারে। আর আলিঙ্গনকারীর মুখ ঠিক তার পাশে থাকে। সতর্ক না থাকলে গুরুতর আঘাত পাওয়ার ঝুঁকি থেকে যায়।
আপনার পোষ্য কখন অস্বস্তিতে রয়েছে, কী ভাবে বুঝবেন?
আলিঙ্গন আদৌ উপভোগ করছে কি না, কোনও অস্বস্তিতে রয়েছে কি না, সেগুলি বোঝার জন্য সারমেয়র শারীরিক ভাষা বুঝতে শিখুন। যাতে পোষ্যের মানসিক অবস্থা বুঝে পদক্ষেপ করতে পারেন।
আপনার পোষ্যের অস্বস্তিতে বুঝবেন কী ভাবে? ছবি: সংগৃহীত।
১। যদি জড়িয়ে ধরার সময়ে পোষ্য শক্ত হয়ে যায় বা স্থির হয়ে যায়, তা হলে তার আলিঙ্গন ভাল লাগছে না। সুখী বা আনন্দে থাকলে সে নিজেকে আলগা করে দেয়।
২। আলিঙ্গন পছন্দ না হলে চোখ সরিয়ে নেয় মালিকের থেকে। আপনার দিক থেকে মাথা ঘুরিয়ে নিলে, অথবা চোখ বন্ধ করে ফেললে বুঝবেন, সে বিরক্ত হচ্ছে।
৩। বিরক্তি বাড়তে থাকলে আপনি পোষ্যের চোখের সাদা অংশটি স্পষ্ট দেখতে পাবেন।
৪। অস্বস্তি হলে সারমেয় কান নামিয়ে ফেলে এক পাশে মাথা করে রাখবে।
৫। বিরক্ত সারমেয় লেজ নামিয়ে রাখবে বা পেটের নীচে গুটিয়ে ফেলবে।
৬। সারমেয় হাই তুলছে মানে সে ক্লান্ত নয়, বরং মানসিক চাপে আছে।
৭। অস্বস্তিতে রয়েছে, এটা বোঝাতে অনেক সময়ে সারমেয়রা সামনের থাবা মাটি থেকে তুলে নেয়।
তা হলে কী ভাবে আদর করবেন নিজের পোষ্যকে?
অন্যান্য উপায় খুঁজে বার করে ভালবাসা প্রকাশ করতে হবে। যেমন, সারমেয়র পেটে হাত বুলিয়ে দিলে তারা খুশি হয়। তা ছাড়া পিঠ, কানের পিছন, গলার নীচে হাত দিয়ে আদর করে দিলেও তারা স্বস্তি পায়। এমনি খেলাধুলো করা, কোনও কিছু করে দিলে ডগ ট্রিট দেওয়া, মুখের কাছে মুখ নিয়ে এসে আলতো গলায় কথা বলা, এগুলিতে খুশি হয় পোষ্য।