গরমের ছুটিতে বাড়িতে একলা থেকে খুদে বিরক্ত! তার শরীর মন ভাল রাখতে কী ভাবে ছুটির সময় কাজে লাগাতে পারেন? ছবি: সংগৃহীত।
একটা সময় ছিল যখন স্কুলে গরমের ছুটি পড়া মানে খুদে পড়ুয়াদের মন জুড়ে থাকত একরাশ আনন্দ। পড়ার সময়ে পড়া। আর দিনের বেলা, বিকেল বেলা বন্ধুদের সঙ্গে খেলা। আবার ঘণ্টা দুয়েকের জন্য থাকত টিভি দেখাও। কারণ, ছোটদের কথা ভেবেই ছুটির সময়ে দূরদর্শনে সম্প্রচারিত হত বিশেষ অনুষ্ঠান।
স্কুলে গরমের ছুটি এখনও নিয়ম মেনে পড়ে বটে, তবে এখন ছোটদের কাছে অতীতের পরিবেশ আর নেই। আগে যৌথ পরিবারে তুতো ভাইবোনে মিলে আড্ডায় সময় কাটত। এখন ছোট পরিবারে বহু সন্তানই একা বড় হয়। বাড়িতে থাকেন না ঠাকুরমা-ঠাকুরদাও। ফলে গরমের দিনের ছুটি কাটে তাদের নিঃসঙ্গ হয়ে। কখনও টিভির পর্দায় কার্টুন দেখে, নয়তো মোবাইলে চেখে রেখে কিংবা ভিডিয়ো গেম খেলে।
ঘণ্টার পর ঘণ্টা টিভি, মোবাইল, ল্যাপটপের পর্দায় চোখ রাখা মোটেই ভাল নয়। মনোবিদেরা বার বার সাবধান করছেন, এতে শুধু চোখ নয় মানসিক স্বাস্থ্যেরও ক্ষতি হয়। মস্তিষ্কেও এর কুপ্রভাব পড়ে। কিন্তু মোবাইল নিতে বারণ করলেই বা তারা শুনবে কেন? ছুটির দিনে করবেটাই বা কী?
উপযুক্ত পরিকল্পনা করলে এই সময়টাই শিশুদের শারীরিক এবং মানসিকর বিকাশের জন্য কাজে লাগানো যেতে পারে। বাড়িতে বা পাড়ায় তাদের সমবয়সি কেউ না থাকলে বরং তাকে ব্যস্ত রাখে পারেন পছন্দের খেলাধুলোয়। তাকে ব্যস্ত রাখতে পারেন পছন্দের কাজে। এতে যেমন সে আর পাঁচটা বন্ধু পাবে, তেমনই লম্বা ছুটিতে ঘরে বসে বিরক্ত হয়ে যাবে না।
স্কেটিং: গরমের দিনে চড়া রোদে মাঠে খেলাধুলো করলে শরীর খারাপ হতে পারে, তার চেয়ে বরং ভর্তি করিয়ে দিতে পারেন স্কেটিংয়ে। চাকা লাগানো জুতো পরে শরীরের ভারসাম্য রেখে এগিয়ে যাওয়া, কসরতের এই খেলাটি কমবয়সিরা সাধারণত খুবই পছন্দ করে। শহরে বিভিন্ন সংস্থা স্কেটিং শেখায়। কোথাও বাতানুকূল বিশাল ঘরেও স্কেটিং শেখানোর ব্যবস্থা থাকে। ফলে কিছুটা সময় খুদে নতুন খেলা শেখায় ব্যস্ত থাকবে, এতে শরীরচর্চাও হবে।
সাঁতার: খুদের জলে ভীতি থাকলে, সেই ভীতি কাটানোর জন্য, আবার জলে আগ্রহ থাকলে কিছুটা আনন্দ দেওয়ার জন্য সাঁতার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে পারেন। মানসিক এবং শারীরিক স্বাস্থ্য ভাল রাখতে সাঁতার অত্যন্ত উপযোগী। তা ছাড়া সাঁতার শেখা থাকলে জলে বিপদের ভয়ও কম থাকবে।
প্রকৃতি পর্যবেক্ষণ: মনোবিদেরা সব সময়ই বলেন সন্তানকে অভিভাবকদের এমন ভাবে সময় দেওয়া উচিত, যাতে সময়টা দু’জনের কাছেই উপভোগ্য হতে পারে। ভোরের দিকে অথবা বিকেলে খুদেকে নিয়ে কোথাও বেরিয়ে আসতে পারেন। খুদেকে গাছপালা চেনাতে পারেন। সুবিধা থাকলে নদীর ধারে নিয়ে যেতে পারেন। অনেক দল আছে, যারা শিশুদের পাখি দেখতে শেখায়, প্রজাপতি চেনায়। তেমন দলের সন্ধান পেলে সন্তানকে সেই প্রশিক্ষণের সুযোগ করে দিতে পারেন।
গরমে ক্যাম্প: গরমের ছুটিতে কোনও কোনও জায়গায় ক্যাম্প করানো হয়। সেখানে খেলা, হাতের কাজ শেখা, প্রকৃতিপাঠ দেওয়া, খাওয়া-দাওয়া করানো হয়। সমবয়সিদের সঙ্গে এই ধরনের ক্যাম্পও খুদের মনোগ্রাহী হতে পারে।
রান্নাবান্না: খুদেকে ব্যস্ত রাখার আরও একটি উপায় হল তাকে দায়িত্ব দেওয়া। তাদের পছন্দের খাবার করতে শেখানো। তাকে আগুন জ্বালিয়ে রান্না করাতে হবে না, কিন্তু চামচ দিয়ে কী ভাবে নিজে পাউরুটিতে মাখন মাখাবে, আলুকাবলি বা স্যান্ডউইচের উপকরণ হাতের কাছে গুছিয়ে দিলে কী ভাবে খাবারটি তৈরি করতে হবে, হাতে ধরে শেখাতে পারেন। এতে কিছুটা সময় সে অভিভাবকদের সঙ্গে ব্যস্ত থাকবে আবার কিছু কিছু কাজও শিখবে। স্কুলপড়ুয়া শিশুদের বিভিন্ন বিষয়ে আগ্রহ থাকে, এই সময় তারা দ্রুত যে কোনও জিনিস শিখে যায়।
আঁকা: অনেক খুদেই রং করতে ভালবাসে। তারা আঁকতেও চায়। শিশুদের কিছুটা সময় এ ভাবেও ব্যস্ত রাখা যায়। ইচ্ছেমতো আঁকতে দিলে তাদের মনের ভাবও প্রকাশ পায়। মোবাইলে খেলার ছলে আঁকা নয়, বরং আঁকার খাতা, পেন দিয়ে তাদের উদ্বুদ্ধ করা দরকার। মনের মতো কাজ পেলে মোবাইলের কথা ভুলে যাবে তারা।
হাতের কাজ: ছুটির দিনে একটু সময় বার করে সন্তানের সঙ্গে ছোটখাটো হাতের কাজও করতে পারেন। কাগজের পাখি বানানো থেকে বোতল বা বাড়ির অতিরিক্ত জিনিস দিয়ে ঘর সাজানোর রকমারি জিনিস বানানো যায়। সমাজমাধ্যমের দৌলতে খুব সহজেই অনেক কিছু বানানোর পুঙ্খানুপুঙ্খ কৌশল ভিডিয়োতে দেখা যায়। তেমনই কোনও কিছু দেখে খুদেকে সঙ্গে নিয়ে তার বয়সের উপযোগী কিছু বানিয়ে ফেলতে পারেন।