Ego management

‘অহঙ্কারী’ বলছে লোকে? সময়ে সাবধান না হলে ছিন্ন হতে পারে বহু সম্পর্ক, মনে রাখুন বিশেষ পরামর্শ

আত্মবিশ্বাস পোষণ করা ভাল। কিন্তু তা মাত্রা অতিক্রম করে অহঙ্কারে পরিণত হলে বিপত্তি ঘটতে পারে। ব্যক্তিগত এবং পেশাগত জীবনে জটিলতা এড়াতে এই ধরনের মনোভাব থেকে দূরে থাকা উচিত।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০২৫ ১১:৩৭
Share:

— প্রতীকী চিত্র। ছবি: ফ্রিপিক।

জীবনে সাফল্য কে না চায়! আর সাফল্য থেকেই জন্ম নেয় আত্মবিশ্বাস। বিষয়টা খারাপ নয়। কিন্তু অনেক সময়েই এই বিশেষ অনুভূতিকে মানুষ উপলব্ধি করতে পারে না। তার ফলে আত্মবিশ্বাস পরিণতি পায় অহঙ্কারে, যা ব্যক্তিগত এবং পেশাগত জীবনেও প্রভাব ফেলতে শুরু করে। সুতরাং, সময় থাকতে সাবধান হওয়া উচিত। অহঙ্কারকে নিয়ন্ত্রণ করা একান্ত প্রয়োজন। সে ক্ষেত্রে কয়েকটি লক্ষণের প্রতি নজর দেওয়া যেতে পারে—

Advertisement

১) কারও প্রতি ব্যবহারে কোনও পরিবর্তন হচ্ছে কি না, খেয়াল রাখুন। ধরা যাক, অফিসে কোনও সহকর্মী আপনার কাজের প্রশংসা করেছেন। কিন্তু আপনি তাঁকে যোগ্য উত্তর দিলেন না। কারণ আপনি ধরেই নিয়েছেন, এটা তো হওয়ারই ছিল। এই ধরনের মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। নিজেকে প্রশ্ন করতে হবে যে, আপনি কেন গর্বিত বোধ করছেন।

২) মাথায় রাখা উচিত, চারপাশের সমস্ত বিষয় নিয়ে কারও জ্ঞান না-ই থাকতে পারে। তাই শেখার মধ্যে কোনও দোষ নেই। নিজেকে ফাঁকা স্লেটের মতো মনে করুন। নিজে মাটিতে পা রেখে চলতে পারলে অনেক কঠিন সমস্যাও সহজ হয়ে যেতে পারে।

Advertisement

৩) অহঙ্কারকে কাবু করতে হিংসার মতো আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করা উচিত। জীবনে চড়াই-উতরাই থাকবেই। ‘ইঁদুরদৌড়’-এ আপনাকে অতিক্রম করে কেউ এগিয়ে যেতেই পারেন। সে ক্ষেত্রে অন্যের সাফল্যকে উদ্‌যাপন করা উচিত। তা হলে অন্তত আশা করা যায়, অন্যেরাও ভবিষ্যতে আপনার সাফল্যকে উদ্‌যাপন করতে এগিয়ে আসবেন।

৪) অনেকেই ‘সমালোচনা’ সহ্য করতে পারেন না। তার নেপথ্যেও রয়েছে অহঙ্কারী মানসিকতা। ‘আমিই সেরা’— এই ভাবনা তৈরি করে অহঙ্কার। ভুল স্বীকার করার মাধ্যমেও শিক্ষা নেওয়া যায়। তাই গঠনমূলক সমালোচনাকে সাদরে গ্রহণ করা উচিত। তার থেকে পাওয়া শিক্ষা ভবিষ্যতে নানা সম্পর্কের ভিত মজবুত করে দিতে পারে।

৫) জেতার লক্ষ্য নিয়ে জীবনযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন সকলেই। কিন্তু মাথায় রাখা উচিত, সব সময় জেতাই একমাত্র লক্ষ্য হতে পারে না। ইতিহাস সাক্ষী, ধারাবাহিক সাফল্য মানুষকে অহঙ্কারী করে তোলে এবং এক সময়ে সেটি নেতিবাচক পরিণতিরও অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই অহঙ্কারকে নিয়ন্ত্রণ করতে হার থেকেও শিক্ষা নেওয়া উচিত।

কোনও দুর্বলতাকে আড়াল করতেই অহঙ্কারের জন্ম হয়। ছবি: সংগৃহীত।

কী ভাবে নিয়ন্ত্রণ

চাইলে নিজের অহঙ্কারী মনোভাবকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। আবার অন্য কেউ যদি অহঙ্কারী মনোভাব প্রদর্শন করেন, তাঁকেও সময়ের সঙ্গে বদলানো সম্ভব। মনোবিদ দিলীপ মণ্ডল জানালেন, অহঙ্কারের নেপথ্যে থাকে কোনও দুর্বলতা। সেই দুর্বলতা বা আত্মতুষ্টির অভাবকে আড়াল করতেই অহঙ্কারী হয়ে উঠতে পারেন কেউ কেউ। মনোবিদ বললেন, ‘‘এই মুহূর্তে শহরে যোগ্য-অযোগ্য চাকরিপ্রার্থীদের একাধিক ভিডিয়োয় দেখা যাচ্ছে, তাঁদের রাগ, ক্রোধ এবং অহঙ্কার ফুটে উঠেছে। কিন্তু তাঁরা তো অহঙ্কারী নন! বর্তমান পরিস্থিতিতে তাঁরা অত্যন্ত অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছেন। তা থেকেই অহঙ্কারের বহিঃপ্রকাশ ঘটছে।’’

অহঙ্কারী মনোভাব রাতারাতি পরিবর্তন সম্ভব নয় বলেই মনে করছেন দিলীপ। বললেন, ‘‘বড়দের মতো কৈশোরকালেও সন্তানেরা বাবা-মায়েদের প্রতি অহঙ্কার প্রদর্শন করে থাকে। আমরা বলি একটু সময় দিতে।’’ অনেক সময়ে বাইরে থেকে যাঁকে ‘কঠিন’ মনে হয়, ভিতরে উঁকি দিলে অন্য মানুষকে আবিষ্কার করা সম্ভব। দিলীপের কথায়, ‘‘প্রকারান্তরে দেখা যাবে, তিনি হয়তো কষ্ট পাচ্ছেন। সেটা বুঝতে পারলে তাঁরও কষ্ট লাঘব হতে পারে। ফলে তিনিও সময়ের সঙ্গে নিজেকে বদলানোর পথে অগ্রসর হবেন।’’

দিলীপ জানালেন, বাড়িতে বা কর্মক্ষেত্রে কেউ যদি অহঙ্কারী মনোভাব পোষণ করেন, তা হলে তাঁর সঙ্গে বিতর্কে জড়ালে সমস্যা আরও বাড়তে পারে। তাঁর কথায়, ‘‘এই ভাবে নিজের কৃতকর্ম সম্পর্কে তাঁর মনে কোনও গভীর প্রভাব পড়ে না। তাই আমরা সব সময়েই এ রকম ক্ষেত্রে দূরত্ব বজায় রাখার পরামর্শ দিই।’’ দিলীপের মতে, কেউ খারাপ আচরণ করলে চুপ করে থাকা উচিত। কয়েক দিন পরেই সেই ব্যক্তি নিজের ভুল উপলব্ধি করে ক্ষমা চেয়ে নেবেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement