শিশুকে হোমওয়ার্ক করানোর সহজ ৫ উপায়। ছবি: ফ্রিপিক।
শিশুদের মন স্বভাবতই চঞ্চল। এক জায়গায় বেশি ক্ষণ স্থির হয়ে বসেই না। পড়তে বসালে টিভির দিকে মন পড়ে থাকে। দেখবেন, কোনও একটি বিষয়ের প্রতি বেশি ক্ষণ আগ্রহ দেখাবে না। তা সে পড়াশোনা হোক, ধেলাধুলা, গানবাজনা বা ছবি আঁকা। ধরেবেঁধে বসিয়ে রাখাই সবচেয়ে বড় সমস্যা। যদি বা বসল, কিছু ক্ষণ পর পরই বিভিন্ন অজুহাতে উঠে যাবে। অনেক বাবা-মা অভিযোগ করেন, স্কুল থেকে ফিরে আর পড়তে বসতে চায় না শিশু। হোমওয়ার্ক শেষ করতেও ঘোর অনীহা। জোর করে পড়তে বসালেও বিপদ। বেশি বকাঝকা করলে চিৎকার, কান্নাকাটি শুরু হবে। তখন জেদ করে আর পড়তে বসতেই চাইবে না। তা হলে উপায়?
জোর করে বা বকাঝকা করে কোনও কাজই হবে না। তার চেয়ে কৌশলে কাজ হবে বেশি। শিশু পড়তেও বসবে, নিজে থেকে হোমওয়ার্কও শেষ করবে, যদি মেনে চলেন পাঁচ টোটকা।
শিশুকে হোমওয়ার্ক করানোর সহজ উপায়
১) পড়াশোনার রুটিন থাকা জরুরি। মনোবিদ অনিন্দিতা মুখোপাধ্যায়ের মতে, শিশুদের মনস্তত্ত্ব বুঝতে হবে। পড়তে বসানোর আগে খেলতে দিন। স্কুল থেকে ফিরে ঘণ্টাখানেক খেলাধূলা বা শরীরচর্চার পরে পড়তে বসান। এতে সারা দিনের ক্লান্তি কাটবে, মনোযোগও বাড়বে। স্কুল থেকে ফিরেই পড়তে বসালে কিছু ক্ষণ পরেই একঘেয়েমি এসে যাবে। তখন শিশু মোবাইল চাইবে বা টিভি দেখতে চাইবে। টিভি, মোবাইলে কার্টুন, রিলস, গেম্স এক বার দেখতে শুরু করলে পড়ার বইয়ে আর মন দেবে না।
২) কোনও কিছু মুখস্থ করার বদলে সেটিকে বাস্তব জীবনের কোনও ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কিত করে বোঝান। এতে সে বিষয়টি সহজে বুঝতে পারবে এবং দীর্ঘ দিন মনে রাখতে পারবে। যেমন পড়াশোনার ছোট ছোট বিষয় ছবি এঁকে বা গল্পের ছলে বোঝান। পড়াশোনা যেন আনন্দের হয়। তা হলেই আগ্রহ বাড়বে। পরে দেখবেন, নিজেই পড়ার বই নিয়ে বসছে।
৩) একই বিষয় একটানা না পড়িয়ে, নানা রকম বিষয় নিয়ে চর্চা করুন। যেমন, অঙ্কের হোমওয়ার্ক শেষ করার পরেই কঠিন কোনও বিষয়ের বই খুলে বসবেন না। মিনিট দশেকের বিরতি দিন ও সেই সময়ে ছবি আঁকতে দিন। সন্তান যদি আঁকতে ভালবাসে, তা হলে কিছু সময় ওর ইচ্ছেমতো আঁকিবুঁকি কাটতে দিন। ওর কোনও একরঙা টিশার্ট বা জামা ওকে দিন। আর কিনে দিন নানা রঙের ফেব্রিক কালারের কৌটো। যা ইচ্ছে আঁকুক। অপটু হাতের আঁকিবুঁকি চমৎকার দেখতে লাগে। নিজের হাতে রং করা জামা পরতে ওদেরও মজা লাগবে। এমন কাজে সৃজনশীলতা বাড়বে, মোবাইলের প্রতি আকর্ষণ কমবে।
৪) সন্তান যা পড়ছে বা আপনি যা বোঝাচ্ছেন, তা আপনাকে পাল্টা বোঝাতে বলুন। এটা করতে সক্ষম হলে বুঝবেন, পড়া বুঝতে বা মনে রাখতে তার আর সমস্যা হবে না। যতটুকু পড়াচ্ছেন, তা লিখে ফেলতে বলুন। লিখে ফেললে পড়া সহজেই মনে রাখতে পারবে। পড়া পারলে এটা-ওটা কিনে দেওয়ার লোভ দেখাবেন না। বরং প্রশংসা করুন। যতটুকু পারছে, তাতেই উৎসাহ দিন।
৫) পড়াশোনার মাঝে যদি দেখেন, শিশু অস্থির হয়ে উঠছে বা ঝিমিয়ে পড়ছে, তা হলে বিভিন্ন ধরনের ‘ব্রেন গেম’ খেলতে দিন। বিল্ডিং ব্লকস, পাজ়লস ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের খেলা আছে শিশুদের জন্য। স্মার্টফোনের বদলে এই ধরনের খেলা বা বই ওর হাতে তুলে দিলে ওর ক্লান্তি নিমেষে দূর হবে। একঘেয়েমিও কাটবে।