সন্তান খাওয়া নিয়ে কান্নাকাটি করবে না, কিছু কৌশল শিখে নিন বাবা-মায়েরা। ছবি: ফ্রিপিক।
স্কুলে যাওয়ার সময় কিংবা রাতে খাবার খাওয়ার সময়, খাওয়ার টেবিলে বসে রীতিমতো যুদ্ধ বাধে অনেক বাড়িতেই। কারণ আর কিছুই নয়, খাবারের প্রতি সন্তানের অনীহা। কেউ বকাঝকা করেন খুদেকে, কেউ আবার গল্পের ছলে খাবার খাওয়ানোর চেষ্টা করেন সন্তানকে। অনেক বাবা-মায়েরই অভিযোগ, সন্তান কিছু খেতেই চায় না। জোর করে খাওয়াতে গেলে কান্নাকাটি করে। অথচ শিশু যদি ঠিকমতো খাবার না খায়, তা হলে পুষ্টির ঘাটতি থেকেই যাবে। তাই জোর করে নয়, কিছু কৌশল জানা থাকলে সমস্যার সমাধান হবে সহজেই।
জোর করে খাওয়াতে চাইলে শিশুর খাবারের প্রতি অনীহা তৈরি হবে, এমনটাই মত শিশুরোগ চিকিৎসক প্রিয়ঙ্কর পালের। তাঁর পরামর্শ, বাবা-মাকে বুঝতে হবে, সব শিশু সমান নয়। প্রত্যেকের হজমশক্তি আলাদা। খাবার খাওয়ার পরিমাণও ভিন্ন। অনেক সময়ে বেশি খাওয়ানোর চেষ্টা করলে ছোটরা খেতে চায় না। অনেকেই বড়দের মতো ২-৩ ঘণ্টা অন্তর শিশুকে খাওয়ানোর চেষ্টা করেন। এই অভ্যাসও স্বাস্থ্যকর নয়। শিশুকে খাওয়াতে হবে পরিমিত ও সময় বুঝে। এই পরিমাণ ঠিক করতে হবে চিকিৎসককে জিজ্ঞাসা করে।
বাবা-মায়েদের জন্য কিছু পরামর্শ
১) একই খাবার রোজ দেবেন না। ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে খাওয়াতে হবে শিশুকে। খাবারে বৈচিত্র আনলেই দেখবেন শিশুর অনীহা দূর হবে। ভাত, ডাল বা তরকারি খেতে না চাইলে চিকেন স্ট্যু, নানা রকম মরসুমি ফল দিয়ে ফ্রুট স্যালাড অথবা সব্জি-চিকেন দিয়ে স্যান্ডউইচ বানিয়ে খাওয়াতে পারেন। ডালিয়ার খিচুড়ি সব্জি দিয়ে খাওয়াতে পারেন।
২) খাবার ঠিকমতো সাজিয়ে ছোটদের পরিবেশন করুন। সব খাবার একসঙ্গে মেখে একটা বাটিতে দিলে অনেক সময়েই ছোটরা খেতে চায় না। তাই যা-ই দিন, তা থালায় সুন্দর করে সাজিয়ে দিন। যেমন, রুটি যদি দেন, তার উপরে গাজর, শসা বা টম্যাটো দিয়ে চোখ-মুখ-নাকের মতো করে দিন। পাশে ছোট ছোট ফল কেটে সুন্দর করে সাজিয়ে দিন। সেই ভাবে থালায় সাজিয়ে দিলে সেই খাবারটি খুশিমনেই খাবে শিশু।
৩) খাওয়ার ব্যাপারে সন্তানের পছন্দকে গুরুত্ব দিন। আপনি ডিম খেতে ভালবাসেন মানেই যে আপনার সন্তানও ডিম খাবে, এমন যুক্তি নেই। তার মাছ, মাংস, ডিম পছন্দ না-ই হতে পারে। তার পছন্দ মেনে নিন। বরং খাবারে প্রোটিন বজায় থাকে, এমন কিছু খাবার তার পছন্দের খাবারের তালিকা থেকে বেছে নিন। সে ক্ষেত্রে নিজেই ওর সঙ্গে কথা বলে নিন। তাকে জিজ্ঞাসা করুন, সে ডিম বা মাছ না খেলে, সেই জায়গায় কী খাবে। তার মত চাইলে সে-ও খুশি হবে।
৪) শিশুকে নিয়ে খাবার খাওয়াতে বসুন। অনেকে বাড়ির খুদে সদস্যকে আগে খাইয়ে দেন। একা খেতে বসলেই শিশু টিভি দেখতে চাইবে বা মোবাইল চাইবে। এতে খাবার খাওয়ার চেয়ে অন্য দিকে মন থাকবে বেশি। তাই বাড়ির সকলের সঙ্গে বসিয়ে গল্প করতে করতে শিশুকে খাওয়ান। বাকিদের খাওয়া দেখলে ওর খাবারের প্রতি অনীহা দূর হবে।
৫) শিশুকে তাড়াতাড়ি খাওয়াতে গিয়ে অনেকেই একসঙ্গে বেশি ভাত মেখে ফেলেন। কিছু ক্ষণ পরই সেই ভাত থেকে জল কাটতে শুরু করে। ফলে তা বিস্বাদ হয়ে যায়। সন্তানের খেতে ভাল লাগে না। তাই একবারে বেশি খাবার না দিয়ে অল্প পরিমাণে খেতে দিন। একই খাবার বেশি পরিমাণে না দিয়ে, নানা রকম খাবার দিয়ে থালা সাজিয়ে দিন। ধরুন, অল্প ভাত, একটা রুটি, অল্প স্যালাড, সব্জি, মাছ বা মাংসের পদ ও দই— এই ভাবে দিলে নানা রকম খাবার দেখে খাওয়ার ইচ্ছা বাড়বে শিশুর।