কাজ করছে না চেনা অ্যান্টিবায়োটিকও, এই বিপদ কাটানোর উপায় আসছে। ছবি: ফ্রিপিক।
অ্যান্টিবায়োটিক খেয়েও মরবে না, এমন সব ভয়ঙ্কর জীবাণু নাশ করতে নতুন ওষুধ তৈরি করার পথে আইআইটি রুড়কী। দিন কয়েক আগেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) আশঙ্কা প্রকাশ করে জানিয়েছিল, দ্রুত গতিতে ‘অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজ়িস্ট্যান্স’ (এএমআর) তৈরি হচ্ছে। অ্যান্টিবায়োটিকে মরবে না, এমন প্রাণঘাতী ব্যাক্টেরিয়ার সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। এমনিতেই নতুন ওষুধের অভাব, তার মধ্যে পুরনো অ্যান্টিবায়োটিকগুলিও আর কাজ দিচ্ছে না। পরিস্থিতি জটিল। এমন অবস্থায় নতুন কী ওষুধ আনা যেতে পারে, সে নিয়ে বিশ্ব জুড়েই মাথা ঘামাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। রুড়কী আইআইটির গবেষকেরা দাবি করেছেন, এমন উপাদানের খোঁজ পাওয়া গিয়েছে যা অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী জীবাণু নাশ করতে সক্ষম।
অ্যান্টিবায়োটিক কেন কাজ করছে না, তার কারণ অনেক। দু’দিনের জ্বর সারাতেও দোকান থেকে চেনা অ্যান্টিবায়োটিক কিনে খেয়ে ফেলছেন কমবেশি সকলেই। পেটের অসুখ হলেই যথেচ্ছ ব্যবহার হচ্ছে জনপ্রিয় মেট্রোনিডাজ়োল গোত্রের ওষুধ। সাধারণ অসুখের সঙ্গে লড়তেও অ্যান্টিবায়োটিক কিনে খাওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। আবার রোগ যখন সারার মুখে, তখন নিজে থেকেই ওষুধটি খাওয়া বন্ধ করে দিচ্ছেন। ফলে অ্যান্টিবায়োটিকের নির্ধারিত কোর্স শেষই হচ্ছে না। তাতে জ্বর বা অসুখ সারছে ঠিকই, কিন্তু অন্য বিপত্তিও বাধছে। জীবাণুরা সেই সব অ্যান্টিবায়োটিককে চিনে নিয়ে তার বিরুদ্ধে নিজেদের রক্ষাকবচ তৈরি করে ফেলছে। ফলে চেনা ওষুধ খেলেও তা আর কাজই করছে না। উল্টে ব্যাক্টেরিয়ারই পোয়াবারো। তারা আরও বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠছে। রূপ বদলে জন্ম হচ্ছে অ্যান্টিবায়োটিক-প্রতিরোধী সুপারবাগের। এই সব সুপারবাগ এতটাই কঠিন বর্ম তৈরি করছে তাদের চারপাশে, যা ভেদ করে অ্যান্টিবায়োটিক আর কাজই করতে পারছে না।
দিন দিন বিশ্ব জুড়ে এই সুপারবাগই বড় সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা, সাবধান না হলে এমন একটা সময় আসতে পারে, যখন অধিকাংশ সুপারবাগের সঙ্গে লড়ার মতো কোনও ওষুধই পাওয়া যাবে না। ফলে বহু রোগের চিকিৎসা করাই সম্ভব হবে না।
সুপারবাগকে কী ভাবে জব্দ করা যায়, কোন ধরনের ওষুধে তারা ধ্বংস হবে, তা খুঁজতেই মাথার ঘাম পায়ে ফেলছেন বিজ্ঞানীরা। রুড়কী আইআইটির বায়োসায়েন্স ও বায়োইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের গবেষকেরা তেমন ওষুধের খোঁজ পেয়ে গিয়েছেন বলে দাবি করেছেন। তাঁরা জানিয়েছেন, ওষুধ নয়, বরং ওষুধ যে উপাদানে তৈরি হবে সেটি আবিষ্কার করা গিয়েছে। সেই উপাদানটির নাম ‘কম্পাউন্ড ৩বি’। এর সঙ্গে মেরোপেনেম নামে এক ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক মিশিয়ে ‘কম্বিনেশন’ ওষুধ তৈরি হচ্ছে। অর্থাৎ, ওষুধটি এমন, যা শরীরে গেলে ব্যাক্টিরিয়ার বংশবৃদ্ধি হওয়া আটকাবে। সহজ করে বললে, অ্যান্টিবায়োটিকেও মরে না এমন সব ব্যাক্টেরিয়াকেই মারবে এই ওষুধ।
তবে ওষুধ আজ বললেই যে কাল চলে আসবে, তা নয়। প্রক্রিয়াটি লম্বা। গবেষণা চলছে। গবেষকেরা আশা করছেন, নতুন যে উপাদানটির খোঁজ পাওয়া গিয়েছে, তা দিয়ে তৈরি ওষুধ আসন্ন বিপদ থেকে রক্ষা করতে পারবে।