বকাবকি নয়, সন্তান যাতে কথা শোনা সে জন্য কথায় বদল দরকার বাবা-মায়েদেরই। ছবি: এআই সহায়তায় প্রণীত।
সন্তান কথা না শুনলে বকে, ধমকে তাদের ‘সোজা’ করাটাই দস্তুর। অন্তত এ ভাবেই বড় হয়েছেন কয়েক প্রজন্ম আগের ছেলেমেয়েরা। কিন্তু সময় বদলেছে। পরিপার্শ্বেও বদল অনেক। আগে বাবা-মায়েরা ধমক দিলে, ছোট ছেলে-মেয়েরা মা, ঠাকুরমা বা বাকি পরিবারের আদর পেত। বাবা-মা বকলে যৌথ পরিবারে অন্যেরা তাদের আগলাতেন।
কিন্তু এখন পরিবার ছোট হয়েছে। বাবা-মায়েদের পক্ষে সব সময় সন্তানকে সামলানো সহজ হয় না। অনেক সময় ঘর-বার সামলাতে গিয়ে দ্রুত ধৈর্য হারিয়ে সন্তানকে ধমক দেন তাঁরা। গায়ে হাতও তোলেন। কিন্তু ছোটদের অভিমান হলে কাকে বলবে তারা? ঠাকুরমা, দাদু, কাকা, কাকিমারা যে এখন এক বাড়িতে থাকেন না।
সেই কারণেই অভিভাবকদের অনেক বেশি সংযত হওয়া দরকার, বলেন মনোবিদেরা। কারণ, ধমক দিলে বা বকলে সব সময় কাজ হয় না। বরং এতে সন্তানের মধ্যে জেদ বাড়তে পারে। না বলা অভিমান পাহাড় ছুঁতে পারে।
‘দ্য জার্নাল অফ ফ্যামিলি সাইকোলজি’-তে ২০২৫ সালে প্রকাশিত সমীক্ষার ফল বলছে, অভিভাবকেরা সন্তানের সঙ্গে কোন ভাষায়, কী ভাবে কথা বলছেন, তা শিশুমনে যথেষ্ট প্রভাব ফেলে।
কোন কথা কী ভাবে বলা যেতে পারে?
১। পার্কে বা কোথাও গেম খেলতে নিয়ে গিয়েছেন সন্তানকে। খেলায় এমন মত্ত যে, সে ফিরতে চাইছে না। এমনটা অনেক সময়েই হয়। সরাসরি সন্তানকে বাড়ি চল বলে না ধমকে, বলা যেতে পারে, ‘‘সন্ধ্যা হয়ে গেল। পার্ক বন্ধ হবে। এ বার কিন্তু আমাদের যাওয়া দরকার।’’ এ ভাবে কথা বললে, সন্তানের উপর নির্দেশ দেওয়া হয় না। অথচ নরম করে কথাটাও বলা যায়। এতে কিন্তু সন্তানের মধ্যে জেদ বাড়তে পারে না।
২। অন্য ভাইবোনের সঙ্গে তুলনা টানা সন্তানের আত্বিশ্বাসে আঘাত করে। এতে হিতে বিপরীত হয়, বলছেন মনোবিদেরা। বরং সন্তানের ভাল গুণগুলিকে উৎসাহ দেওয়া যেতে পারে। অঙ্কে হয়তো সে ভাল নম্বর পায়নি। তুলনা না টেনে এ ভাবেও বলা যায়, ‘‘এত ভাল আঁকতে পার তুমি, অঙ্কটা তো সহজ। সেটাও নিশ্চই পারবে।’’
৩। সন্তান কাঁদলে, ‘‘কেঁদো না’’ বললেই কিন্তু সে থামে না। কোনও কারণে রাগ হলে, তার সঙ্গে সহজ ভাবে সহমর্মিতার সঙ্গে কথা বলা প্রয়োজন। বলা যায়, ‘‘সমস্যাটা আমরা দু’জনে মেটাব।’’
৪। ‘‘তুমি ছোট, বুঝবে না’’— এই জাতীয় কথা বলাও ঠিক নয়। অতীতে শিশু মনস্তত্ত্ব নিয়ে গবেষণায় উঠে এসেছে, শিশুরাও বুদ্ধি দিয়ে বিচার করতে পারে। তাদেরও যুক্তিবোধ রয়েছে। সুতরাং তাদের অগ্রাহ্য না করে কোনও কথা যুক্তি দিয়ে বোঝানো দরকার।
৫। ‘‘ফাঁকিবাজ, অলস, কিছুই হবে না তোমার দ্বারা’’— এমন নেতিবাচক বাক্য প্রয়োগ না করার পরামর্শ দেন মনোবিদেরা। বরং কথায় যেন ইতিবাচক ভাবনা থাকে। ছোটদের আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করাই অভিভাবকদের লক্ষ্য হওয়া দরকার। ছোট ছোট সাফল্যের প্রশংসাও শিশুদের এগিয়ে যেতে সাহায্য করে।