হৃদ‌্‌রোগের ঝুঁকি এখন তরুণীদের মধ্যেও

বছর ছাব্বিশের ঝকঝকে তরুণী সোমঋতা। সম্প্রতি একটি বহুজাতিক সংস্থায় চাকরি পেয়েছে। চাকরির আগে ডাক্তারি পরীক্ষায় সব স্বাভাবিকই ছিল। অথচ ছ’মাসেই তাকে হার্ট অ্যাটাক নিয়ে ভর্তি হতে হল হাসপাতালে।

Advertisement

সৌভিক চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ অগস্ট ২০১৫ ০৩:৩০
Share:

বছর ছাব্বিশের ঝকঝকে তরুণী সোমঋতা। সম্প্রতি একটি বহুজাতিক সংস্থায় চাকরি পেয়েছে। চাকরির আগে ডাক্তারি পরীক্ষায় সব স্বাভাবিকই ছিল। অথচ ছ’মাসেই তাকে হার্ট অ্যাটাক নিয়ে ভর্তি হতে হল হাসপাতালে।

Advertisement

স্কুল শিক্ষিকা অনুরাধা সেন। বয়স তিরিশ। একদিন ক্লাস নিতে নিতে হঠাৎ অসুস্থ বোধ করলেন। হাসপাতালে আনা হলে বোঝা গেল হার্ট অ্যাটাক।

এ রকম উদাহরণ রয়েছে ভূরি ভূরি। একটা সময় পর্যন্ত ধারণা ছিল, হার্ট অ্যাটাক মূলত পুরুষের এবং বয়স্কদের অসুখ। কিন্তু গত কয়েক বছরে এ ধারণা বদলেছে। ইদানীং হার্ট অ্যাটাক নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন যাঁরা, তাঁদের একটা বড় অংশই কমবয়সি ও মহিলা। আগামী ২৯ সেপ্টেম্বর ওয়ার্ল্ড হার্ট ডে। তার আগে চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, জিনগত কারণে বা জন্মগত ভাবে পুরুষ-মহিলা নির্বিশেষে হার্টের অসুখ থাকতে পারে। তবে যাঁদের কিছুটা পরের দিকে হার্টের অসুখ দেখা দিচ্ছে, তাঁদের মধ্যে মহিলার সংখ্যাবৃদ্ধি যথেষ্ট আশঙ্কাজনক।

Advertisement

ইদানীং মহিলাদের মধ্যে হার্ট অ্যাটাকের সংখ্যা বাড়ছে কেন?

চিকিৎসকদের মতে, আজকের এই গতিময় জীবনে কর্মক্ষেত্রের টেনশন, বাতানুকূল পরিবেশে বসে কাজ করার অভ্যাস, কম পরিশ্রম, অতিরিক্ত ফাস্টফুড খাওয়া এবং ধূমপান— পুরুষ-মহিলা নির্বিশেষে সকলকেই ঠেলে দিচ্ছে বিপদের মুখে। তা ছাড়াও এঁদের মধ্যে অনেকেরই কমবেশি ডায়াবেটিস, স্থূলতা, উচ্চ রক্তচাপ এবং প্রবল উদ্বেগজনিত সমস্যার শিকার। হৃদ্‌রোগ চিকিৎসক বিশ্বকেশ মজুমদার বলেন, ‘‘আগে দিনে আট থেকে দশ জন হার্ট অ্যাটাক নিয়ে আসতেন হাসপাতালে। আর এখন সংখ্যাটা প্রায় দ্বিগুণ। যে সব রোগী আসছেন, তাঁদের আশি শতাংশই আবার ডায়াবেটিসে ভুগছেন।’’

হৃদ্‌রোগ চিকিৎসক অমিতাভ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘মেয়েদের শরীরে থাকা ইস্ট্রোজেন এবং প্রোজেস্টেরন হরমোন হার্টের অসুখ রুখে দিতে সাহায্য করে। তাই হিসেবমতো মেয়েদের ক্ষেত্রে মেনোপজের আগে হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা কম। তবে এখন এই তত্ত্ব বহু সময়েই খাটছে না। আর হার্ট অ্যাটাক হলে পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের বিপদ বেশি।’’ এ বিষয়ে একমত হৃদ্‌রোগ চিকিৎসক সত্যজিৎ বসুও। তিনি বলেন, ‘‘যে হেতু মেয়েদের শরীরের আকার ছেলেদের তুলনায় কিছুটা ছোট, তাই তাদের ধমনীগুলিও তুলনায় কিছুটা সরু। সে কারণেই হার্ট অ্যাটাক হলে মেয়েদের ক্ষেত্রে বিপদটা অনেক বেশি।’’

বিশ্বকেশবাবু বলেন, ‘‘আজকাল মেয়েরা ছেলেদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ যেমন করছে তেমনই ছেলেদের বদভ্যাসগুলোও ধরে ফেলছে। আমাদের দেশে মেয়েরা আগে এত ধূমপান করত না। এ কারণেই কিন্তু বাড়ছে হাইপার টেনশন। এ ছাড়াও অনেক মেয়েই আজকাল জীবিকার প্রয়োজনে মা হতে অনেক দেরি করছেন। এতে শরীরে হরমোনের ভারসাম্য ব্যাহত হচ্ছে। তা থেকেই বাড়ছে মহিলাদের হার্ট অ্যাটাক।’’

তবে চিকিৎসকেরা মনে করেন, একটু সচেতন হলেই মহিলারা হার্ট অ্যাটাকের মতো সমস্যা এড়াতে পারবেন। তাঁদের মতে, মহিলাদের ক্ষেত্রে হার্টের অসুখের উপসর্গগুলি হল— হঠাৎ ক্লান্ত বোধ করা, ঘুমে ব্যাঘাত, নিঃশ্বাসের সমস্যা, হজমের গোলমাল এবং অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা।

এ রকম কিছু লক্ষ্য করলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। এর পাশাপাশি ধূমপান ত্যাগ, পরিমিত আহার (কম ফ্যাট এবং মাপমতো কার্বোহাইড্রেট যুক্ত খাবার খাওয়া), এবং নিয়মিত ব্যায়াম দূরে রাখবে হার্ট অ্যাটাককে। এ ছাড়াও বিয়ের তিন বছরের মধ্যে সন্তান এবং যতটা কম সম্ভব গর্ভনিরোধক ওষুধের ব্যবহার মহিলাদের হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা কমাবে বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন