মুমূর্ষুদের মুখে হাসি ফোটাতে পদক্ষেপ জেলা প্রশাসনের

বেঁচে থাকার স্বপ্নটুকু ক্রমশ ফুরিয়ে আসছে। মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে হাসপাতালও। এমনই মুমূর্ষু রোগীদের পাশে থাকতে এক নতুন প্রকল্পের সূচনা করল নদিয়া জেলা প্রশাসন। আইএমএ কৃষ্ণনগর শাখা ও জেলা প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে শুরু হওয়া ওই প্রকল্পের নাম ‘সঞ্জীবনী প্যালিয়েটিভ কেয়ার সোসাইটি’। ক্যানসার বা এডসের মতো দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত বা জীবনের শেষ দিনগুলি খুবই কষ্টের মধ্যে কাটাচ্ছেন এমন রোগীদের মানসিক ভাবে ভরসা জোগাতে ওই প্রকল্প বলে জানিয়েছেন উদ্যোক্তারা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০০:৩৭
Share:

রোগীর বাড়িতে সঞ্জীবনীর চিকিৎসক দল। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য।

বেঁচে থাকার স্বপ্নটুকু ক্রমশ ফুরিয়ে আসছে। মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে হাসপাতালও। এমনই মুমূর্ষু রোগীদের পাশে থাকতে এক নতুন প্রকল্পের সূচনা করল নদিয়া জেলা প্রশাসন। আইএমএ কৃষ্ণনগর শাখা ও জেলা প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে শুরু হওয়া ওই প্রকল্পের নাম ‘সঞ্জীবনী প্যালিয়েটিভ কেয়ার সোসাইটি’। ক্যানসার বা এডসের মতো দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত বা জীবনের শেষ দিনগুলি খুবই কষ্টের মধ্যে কাটাচ্ছেন এমন রোগীদের মানসিক ভাবে ভরসা জোগাতে ওই প্রকল্প বলে জানিয়েছেন উদ্যোক্তারা।

Advertisement

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এই মুহূর্তে জেলায় দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত বা মরণাপন্ন রোগীর সংখ্যা প্রায় ২০ হাজার। যাদের ওষুধের খুব একটা প্রয়োজন নেই। শুধু মানসিক বা সামাজিক ভাবে পাশে থাকাটা ভীষণ ভাবে দরকার। মূলত তাঁদের কষ্টের ভার লাঘব করার জন্যই ওই প্রকল্পের সূচনা। প্রকল্পের সহযোগী হিসাবে থাকছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদিত কেরলের এক সংস্থা। জেলাশাসক পিবি সালিম বলেন, “প্রকল্পটি রোগ কেন্দ্রিক নয়, রোগী কেন্দ্রিক। সেই সব দুরারোগ্য রোগী যাদের ওষুধের খুব একটা প্রয়োজন নেই। সামাজিক ও মানসিক ভাবে যাদের পাশে এখন ভীষণ ভাবে থাকার প্রয়োজন তাদের জন্যই এই প্রকল্প। জীবনের শেষ দিনগুলোতে আমরা তাঁদের পাশে থাকতে চাই। আসলে আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য হল মৃত্যুর আগে মৃত্যুযন্ত্রণা লাঘব করার চেষ্টা।”

রবিবার এই প্রকল্পের সূচনা হয়। এ দিন ‘ব্রেন স্ট্রোকে’ আক্রান্ত হয়ে শয্যাশায়ী কৃষ্ণনগরের কলেজ স্ট্রিট এলাকার বাসিন্দা সত্যনারায়ণ মুখোপাধ্যায়কে দেখতে যান জেলা শাসক-সহ এক দল চিকিৎসক ও সঞ্জীবনী স্বেচ্ছাসেবকরা। এ দিন একই ভাবে কৃষ্ণনগর শহরের আরও দুই শয্যশায়ী রোগীর বাড়িতে যান জেলা শাসক।

Advertisement

কৃষ্ণনগর পুরসভার পাশাপাশি দিগনগর, দোগাছি, চাপড়া-২, বাদকুল্লা-১ ও বাহাদুরপুর, বগুলা ও চাপড়া-১ ও ২ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় ‘পাইলট প্রজেক্ট’ হিসাবে ওই প্রকল্পটি শুরু হচ্ছে। তিনটি স্তরে এই স্বেচ্ছাসেবামূলক প্রকল্পটি চালু করা হবে। পুরসভা এলাকায় ২৫০ জন ও গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় ১০০ জন করে স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করা হয়েছে। স্থানীয় স্তরে এই স্বেচ্ছাসেবকরা সমীক্ষা চালিয়ে রোগাক্রান্ত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করবেন। সপ্তাহে অন্তত তিন দিন করে তাঁরা রোগীর বাড়িতে গিয়ে তাদের মানসিক শক্তি যোগাবেন। যাতে ওই রোগী বেঁচে থাকার জন্য সামাজিক ও পারিবারিক পরিবেশ পান তার জন্য পরিবারের লোকদের পাশাপাশি‌ এলাকার মানুষদের সচেতন করবেন। সেই সঙ্গে তাঁরা চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলির সঙ্গে যোগাযোগ রাখবেন। বাড়িতে বসেই যাতে রোগীরা সরকারি প্রকল্পের সুবিধা ও সহায়তা পান তারও ব্যবস্থা করবেন। একই সঙ্গে প্রতিটি ইউনিটে সর্বক্ষণের জন্য একজন করে নার্স থাকবেন। তিনি স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে শয্যাশায়ী ব্যক্তিদের বাড়ি গিয়ে তাঁদের সেবা প্রদান করার পাশাপাশি বাড়ির লোককে ও প্রাথমিক ভাবে প্রয়োজনীয় পরিচর্যা পদ্ধতির প্রশিক্ষণ দিয়ে আসবেন। পুরসভা এলাকায় ১৫ জন করে চিকিৎসক ও গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় ৫ জন করে চিকিৎসক যন্ত্রণা দূর করার পাশাপাশি অন্যান্য চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয়ের তদারকি করবেন।

প্রাথমিক ভাবে ১০০ জন স্বেচ্ছাসেবককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার পাশাপাশি চিকিৎসকদের সংগঠনকেও এই প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। সমাজের বিভিন্ন বিশিষ্ট ব্যক্তি ও জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement