child

সন্তান পরনির্ভর? এ সব উপায়ে তার এই বদভ্যাস দূর করুন

শুধু নিজেরাই নয়, সন্তানদের মধ্যেও পরনির্ভরতার একটা বীজ বুনে দিই আমরা। নানা ভাবে, কখনও জেনে, কখনও না জেনে।

Advertisement

সুজাতা মুখোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ মে ২০১৯ ১৪:০৭
Share:

যে কাজ সন্তান করতে পারে, তার দায়িত্ব তার হাতেই রাখুন।

অন্যের ঘাড়ে বন্দুক রেখে জীবন কাটিয়ে দিতে পারলে তার চেয়ে আরামের আর কী হতে পারে! কিন্তু সব সময় কি আর তা সম্ভব হয়? তখন কী করবেন? হন্যে হয়ে অন্য আর একটা ঘাড় খুঁজবেন? না কি একটু চেষ্টা–চরিত্র করে নিজেকে পাল্টাবেন, স্বনির্ভর হওয়ার পথে হাঁটবেন? শুধু নিজেরাই নয়, সন্তানদের মধ্যেও পরনির্ভরতার একটা বীজ বুনে দিই আমরা। নানা ভাবে, কখনও জেনে, কখনও না জেনে।

Advertisement

পরনির্ভরতার কারণ

ছোট থেকে সন্তানকে অতিরিক্ত আগলে রাখলে, সে পারবে না ভেবে সব কাজ করে দিলে, তার হয়ে সব সিদ্ধান্ত নিতে শুরু করলে, কোনও দিনই আর তার ‘কিছু পারা’ হয়ে ওঠে না৷ জলে ফেলে না দিলে যেমন মানুষ সাঁতার শেখে না, এও তেমন একটা ব্যাপার৷ ছোট থেকে স্বনির্ভরতার প্রশিক্ষণ না দিলে সারা জীবন পরমুখাপেক্ষী হয়ে দুর্বিসহ জীবন কাটাতে হয়৷

Advertisement

বিপদ হয়, সন্তানকে অতিরিক্ত চাপে রাখলেও। এতে তার ব্যক্তিত্ব বিকশিত হতে পারে না বলে সব কাজেই পরের মুখ চেয়ে জীবন কাটায় এরা৷

আরও পড়ুন: গরমে যখন তখন স্নান ডেকে আনছে ভাইরাল ফ্লু, কী ভাবে রুখবেন?

কিছু মানুষের আবার সমস্যা অন্য রকম৷ স্বভাবগত দিক থেকেই ব্যক্তিত্বহীন হন তাঁরা৷ ফ্রয়েডিয়ান মতে, এর প্রধান কারণ ‘ফ্লিক্সেশন ইন ওরাল ফেজ’৷ অর্থাৎ জন্মের পর বাচ্চা যদি বুকের দুধ না পায় বা তার এতে অতিরিক্ত আসক্তি থাকে, বড় হয়েও তার মনের গভীরে এই নির্ভরতা থেকে যায়, যা অনেক সময় প্রকাশিত হয় পরনির্ভরতার মাধ্যমে৷

কখনও আবার সমস্যার মূলে থাকে পরিবার৷ কিছু পারিবারিক সংস্কারে স্বাধীনতার চলই নেই৷ মেয়ে হলে তো বিশেষ করে৷ এ রকম পরিবারে বড় হলে বাচ্চার পক্ষে স্বাধীনচেতা হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম৷ আবার এমন কিছু পরিবারের পুত্রসন্তান অতিরিক্ত আশকারা পেয়ে স্বেচ্ছাচারী হয়ে ওঠে। অন্যকে স্বাধীনতা দেওয়ার কোনও বোধই তৈরি হয় না তাদের।

আরও পড়ুন: গরম থেকে বাঁচতে ঘন ঘন ওয়েট টিস্যু? অজান্তেই ডেকে আনছেন মারণ রোগ!

সমাধান

কী ভাবে পরনির্ভরতার মূলোচ্ছেদ করা যায় সে ব্যাপারে দিশা দেখিয়েছেন মনোচিকিৎসক পায়েল দাশ৷ তাঁর মতে,

সমস্যা এড়াতে ছোট থেকেই সন্তানের দিকে নজর রাখুন৷ তাকে সব সময় আগলে বা দমিয়ে রাখবেন না৷ যে কোনও কাজে তাকে এগিয়ে দিয়ে লক্ষ্য রাখুন, সাহায্য করুন৷ কিন্তু আগ বাড়িয়ে করে দেবেন না৷ বা কেন সে করতে পারল না তা নিয়ে চূড়ান্ত শাসন করবেন না৷ বরং তার মতকে গুরুত্ব দিন৷ কিছু বলতে চাইলে তা শুনুন৷ তার সঙ্গে বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করুন৷ তা হলে ভাল–মন্দের ফারাক বুঝে সে সিদ্ধান্ত নিতে শিখবে৷ মনে রাখবেন, বাচ্চার মন কিন্তু ফুলের মতো৷ সে ধীরে ধীরে বিকশিত হচ্ছে৷ আপনার কাজ সারে–জলে গাছটাকে বাঁচানো, পুষ্টি যোগানো৷ মেয়েদের মানুষ করার সময় কোনও বিভেদমূলক আচরণ করবেন না৷ তাকে যে নিজের ভরসায় জীবন কাটাতে হবে তা শেখান প্রতি পদক্ষেপে৷ সে যে কারও থেকে কোথাও কম কোনও দিনই ছিল না, ও সব ভাবনা যে আমাদের সমাজের ভুল ধারণা, তা বুঝিয়ে দিন প্রতি ক্ষেত্রেই। ‘পরনির্ভরতা কাটাতে সাইকোডায়নামিক সাইকোথেরাপি, কগনিটিভ বিহেভিয়ার থেরাপি, ইন্টারপার্সোনাল থেরাপি নামের বিভিন্ন ধরনের থেরাপি করা যেতে পারে৷ করলে ভাল কাজ হয়৷ তবে সমস্যা হল, খুব বিপদে না পড়লে সচরাচর এ সব কেউ করাতে আসেন না৷ থেরাপিতে সমস্যার মূল ক্ষেত্রটিকে চিহ্নিত করা হয়৷ পরনির্ভরতার মূল কারণ হীনমন্যতা৷ মনের গভীরে নিজেকে ছোট ভাবা, অযোগ্য ভাবা৷ এই জায়গাটিকে টার্গেট করেন থেরাপিস্ট৷ তাঁর জীবনের সাফল্যের ক্ষেত্রগুলিকে একে একে তুলে এনে দেখান যে তিনি যা ভাবছেন, তার সবটা ঠিক নয়৷ গুণ বা যোগ্যতার অভাব নেই তাঁর৷ অভাব আত্মবিশ্বাসের৷ এবং সেই অভাবের কারণ তার বেড়ে ওঠার পরিবেশ৷ আত্মশক্তিতে বিশ্বাস রেখে কোনও কিছু করার সুযোগই হয়তো তিনি পাননি৷ ফলে তাতে মরচে ধরে গিয়েছে৷ তবে ভয়ের কিছু নেই, সুযোগ পেলে এই মরচে সাফ করে তাকে ঝকঝকে ইস্পাত করে তোলা এমন কোনও বড় ব্যাপার নয়৷ থেরাপির ধাপে ধাপে ছোটখাটো কাজ তাঁকে দায়িত্ব নিয়ে করতে বলা হয়৷ সাফল্য এলে চোখে আঙুল দিয়ে দেখানো হয় যে কী ভাবে যোগ্যতার পাশাপাশি তাঁর সুপ্ত আত্মবিশ্বাস বাড়ছে দিনে দিনে৷ চাইলে তাকে আরও বাড়িয়ে তোলা যায়৷

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন