অনুষ্ঠানে একটি মুহূর্তে (বাঁ দিক থেকে) প্রতীক দে সরকার, তনুশ্রী গুহ এবং স্বরূপা ঘোষ। ছবি: সংগৃহীত।
যে স্বপ্নকে সামনে রেখে দেশে স্বাধীনতা এসেছিল, তা আজকে বদলে গিয়েছে। সমাজ বিবর্তনের পথে মানব জীবনের পটপরিবর্তন ঘটেছে। শ্রেণি বৈষম্য থেকে শুরু করে ধর্মান্ধতা— এক ‘অন্ধকার’ গ্রাস করেছে বিপুল সংখ্যক মানুষকে। কিন্তু অন্ধকারের বিপরীতেই থাকে আলো। স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে এবং পরবর্তী সময়ে স্বাধীন ভারতে কিছু গান, কবিতা এবং গদ্য সে কথাই বার বার বলেছে। সম্প্রতি দক্ষিণ কলকাতার এক কাফেতে বিপ্লবের সেই ফল্গুধারাকেই ফিরে দেখার প্রয়াস লক্ষ করা গেল। পাঠে, গানে, কবিতায় এক মনোজ্ঞ সন্ধ্যার সাক্ষী থাকলেন শ্রোতারা। উদ্যোগের পোশাকি নাম ‘সংস অফ রেবেলিয়ন: দ্য মিউজ়িক দে কুড নট সাইলেন্স’।
দুই পর্বে বিভক্ত অনুষ্ঠানটির শুরুতে ভাষ্যপাঠ করেন শম্পা মুখোপাধ্যায়। অনুষ্ঠানের চলন ইংরেজিতে। প্রথমেই কবিতা পাঠ করে শোনান বলিউডের বাঙালি অভিনেত্রী স্বরূপা ঘোষ। তিনি বলেন, ‘‘বহু বছর কলকাতার বাইরে রয়েছি। তাই ভেবে দেখলাম, শহরের বাঙালিদের সামনে একটা কবিতা পড়া যেতে পারে।’’ পুষ্যমিত্র উপাধ্যায়ের লেখা কবিতা ‘সুনো দ্রৌপদী, শস্ত্র উঠা লো’ থেকে পাঠ করেন স্বরূপা। ‘ওরে কাহারোঁ’ গানটি গেয়ে শোনান তনুশ্রী গুহ।
অনুষ্ঠানে পাঠ করছেন সুজয়প্রসাদ চট্টোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বের বিষয়ভাবনায় দেশত্যাগ, নিপীড়ন এবং ধর্মান্ধতার রাজনীতির প্রসঙ্গ উঠে আসে। সেই সঙ্গে উঠে আসে উপমহাদেশের বেশ কিছু শিল্পীর দর্শনের কথা। পাঠে এবং গানে ছিলেন যথাক্রমে সুজয়প্রসাদ চট্টোপাধ্যায়, দীপাঞ্জন পাল এবং সায়ন মিত্র। সুজয়প্রসাদের কথায়, ‘‘মানুষের অস্তিত্বের নির্ণায়ক কী, সে কতটা স্বাধীন, তার উত্তরের সন্ধানে প্রাক্-স্বাধীনতা এবং স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে দুর্নীতি এবং অমানবিকতার বিরুদ্ধে যে সমস্ত কণ্ঠস্বর গর্জে উঠেছিল, তাদের স্মরণ করতেই হয়।’’
ফয়েজ় আহমেদ ফয়েজ়-এর ‘দ্য ডন অফ ফ্রিডম’ কবিতা, সাদাত হাসান মান্টোর ‘টোবা টেক সিংহ’ এবং গুলজ়ারের ‘ক্রসিং দ্য রাভি’ গল্প থেকে পাঠ করেন সুজয়। দীপাঞ্জন এবং সায়নের যৌথ নিবেদনে ‘দুর্গম গিরি কান্তার মরু’, ‘ও গঙ্গা বইছ কেন’, ‘ধিতাং ধিতাং বোলে’ শ্রোতাদের আবিষ্ট করে।
সুজয়প্রসাদের কণ্ঠে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘কাবুলিওয়ালা’, কমলা দাসের কবিতা ‘মাই গ্র্যান্ড মাদার্স হাউস’, অমৃতা প্রীতমের গল্প ‘দ্য স্টেঞ্চ অফ কেরোসিন’ এবং অমিতাভ দাশগুপ্তের ‘আমার নাম ভারতবর্ষ’ কবিতার পাঠ অনুষ্ঠানের আমেজ তৈরি করে দেয়।
দীপাঞ্জনের কণ্ঠে ‘ও আমার দেশের মাটি’ ভাল লাগে। অন্য দিকে, সায়ন তাঁর নিবেদন সাজান ‘হম দেখেঙ্গে’, ‘আমি অপার হয়ে বসে আছি’, ‘থোড়ি সি জ়মিন’, ‘ওয়াতান ভে’ বা ‘আজ়াদিয়াঁ’র মতো গানে। অনুষ্ঠানে শিল্পীদের কিবোর্ডে সঙ্গত করেন প্রতীক দে সরকার।