ছবি : সংগৃহীত।
এক সময় মদ্যপান বিষয়টিকে যে ভাবে দেখা হত, এ যুগে সেই ধারণা অনেকখানি বদলেছে। ব্যস্ত দিনের শেষে পাবে গিয়ে বন্ধু বা সহকর্মীদের সঙ্গে এক পাত্র ‘চিল আউট’ করাকে অনেকেই আর ধর্তব্যের মধ্যে আনেন না। কাজের জগৎ যত বদলেছে, নেটওয়ার্কিং বা জনসংযোগের গুরুত্ব যত বেড়েছে, ততই পাব-বার-ক্লাব সংস্কৃতিকে বুঝতে শিখেছে মানুষ। এ-ও বুঝেছে যে, মদ্যপানের সঙ্গে নৈতিক অবনতির তেমন কোনও সম্পর্ক নেই। স্বাস্থ্যের ক্ষতির বিষয়টি আলাদা, তবে এ ব্যাপারে কোনও সন্দেহ নেই যে, ওয়াইনের পাত্রে একটি চুমুক মেজাজকে হালকা করতে পারে। দু’-তিন চুমুকের পরে সত্যিই সারা দিনের চাপা রাগ, দুঃখ, অভিমানকে খানিক দূরের মনে হয়! কিন্তু কেন এমন হয়?
মদ, সুরা বা অ্যালকোহলে কী এমন আছে, যা ক্ষণিকের আরাম দিতে পারে মনকে? বিজ্ঞান বলছে, এ প্রশ্নের জবাব লুকিয়ে রয়েছে মানুষের প্রাচীনতম পূর্বপুরুষের স্বভাবে, অর্থাৎ যে পূর্বপুরুষেরা ৫ কোটি বছর আগে হেঁটে চলে বেড়াত এই পৃথিবীর মাটিতে।
‘বায়োসায়েন্স’ পত্রিকায় প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে এ ব্যাপারে বিশদ আলোচনা করা হয়েছে। সেখানে ব্রিটেনের ডার্টমাউথ কলেজের নৃতত্ত্বের অধ্যাপক ন্যাথানিয়েল ডোমিনি, লিখেছেন, ‘‘কয়েক কোটি বছর আগে গরিলা, শিম্পাঞ্জি বা এপ জাতীয় প্রাণীরা মজে যাওয়া ফলের প্রতি আসক্ত হয়েছিল। ওই ধরনের ফলে যে ইথানল তৈরি হত, তা অন্যান্য প্রাণীর তুলনায় হজম করার ক্ষমতাও অন্তত ৪০ শতাংশ বেড়েছিল এই বর্গের প্রাণীদের, যাদের মানুষের পূর্বসূরি বলে মনে করা হয়।’’
ন্যাথানিয়েলের বক্তব্য, ওই ধরনের স্বাদের প্রতি আকর্ষণ সম্ভবত সেই সময় থেকেই তৈরি হয়েছিল মানুষের পূর্বসুরিদের মস্তিষ্কে। তা না হলে মানুষ চাষাবাদ শুরু করার পর ফলকে মজিয়ে সুরা বানাবে কেন?
এ ব্যাপারে আরও একটি তত্ত্ব দিয়েছেন ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা। ‘সায়েন্স অ্যাডভান্স’ নামে এক জার্নালে তাঁরা লিখেছেন, ‘‘সুরার পাত্র হাতে আড্ডা দেওয়ার যে প্রবণতা মানুষের মধ্যে রয়েছে, সেই একই স্বভাব দেখা গিয়েছে মজে যাওয়া ফল খাওয়া আফ্রিকার বানরজাতীয় প্রাণীদের মধ্যে।’’ গবেষকেরা জানাচ্ছেন, আফ্রিকার জঙ্গলে থাকা শিম্পাঞ্জিরা দিনে অন্তত ১০ পাউন্ড পাকা ফল খায়, যার মধ্যে অধিকাংশই মজে যাওয়া। এর থেকে দিনে দেড় পাত্র সুরার সমান অ্যালকোহল শরীরে যেতেই পারে। গবেষকেরা জানিয়েছেন, ওই ধরনের ফল খাওয়ার সময় শিম্পাঞ্জিদের মধ্যেও বন্ধুত্বমূলক আচরণ লক্ষ করা গিয়েছে।