নতুন ফ্ল্যাট বুক করে ফেলার পরেই চিন্তা শুরু, কী করে সাজিয়ে তুলবেন আপনার ‘সুইট হোম’কে। দিনের শেষে ঘরে ফিরেই প্রথমে চোখ পড়বে যে দিকে, তা হল ঘরের দেওয়াল এবং মেঝে। ফ্লোর এবং ওয়াল মুড়ে ফেলুন এমন টাইল্স বা মার্বেল দিয়ে, যাতে ঘরে পা রাখতেই ভাল হয়ে যাবে মুড!
কোনটা ছেড়ে কোনটা বাছি
অনেকের ধারণা, গ্রানাইট মোজ়াইক কিংবা টাইলসের ফ্লোরিংয়ের তুলনায় মার্বেলের খরচ বেশি। তাই অনেক সময়ে মার্বেল-ফিনিশ টাইল দিয়ে ফ্লোর ডিজ়াইন বিকল্প হিসেবে বেছে নেন। ভাল মানের ভিট্রিফায়েড টাইলস কিন্তু দামে টেক্কা দিতে পারে স্থানীয় মার্বেলকেও। তবে সেরা কোয়ালিটির মার্বেলের খরচ অবশ্যই সর্বাধিক। কারণ মার্বেলের দাম নির্ভর করে মূলত তা কোথা থেকে আনানো হচ্ছে, তার উপরে। এ ছাড়া কত বড় স্লাইড, কী ধরনের পালিশ, সেই অনুযায়ীও একটা খরচ রয়েছে। যত বড় স্লাইড, তত জয়েনিং কম, অর্থাৎ দেখতে ভাল লাগবে। আর পালিশ একবার করিয়ে নিলে মোটামুটি অনেক বছরের জন্য নিশ্চিন্ত হওয়া যায়। হোয়াইট মার্বেল বাছলে যত্নবান হতে হবে আরও।
মেনটেন করার দিক থেকে অনেকের কাছে টাইলস ফ্লোরিং বেশি সুবিধেজনক। কারণ তা পরিষ্কার করানো তেমন খরচসাপেক্ষ নয়। ফ্লোরের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পিলার কিংবা দেওয়াল মুড়ে ফেলা যায় পছন্দের টাইলসে। ওয়াল টাইল এবং ফ্লোর টাইলের আলাদা অপশনও পাবেন দোকানে গেলেই। বাজেট বেশি হলে পেয়ে যাবেন ডিজ়াইনার টাইলসও। তবে ঘরের মেঝে, বারান্দা (বা তুলনায় বেশি উন্মুক্ত অংশ), রান্নাঘর ও স্নানঘরের ক্ষেত্রে বাছাই হবে আলাদা।
প্রতি পদে আনন্দ
শুধু টাইলস বা মার্বেল নয়, অন্য ধরনের ফ্লোরিংয়ের প্ল্যানও করতে পারেন। উড ফিনিশ কিংবা রেজ়িন ফ্লোরের খরচ কিন্তু অনেকটাই বেশি। প্রথম ক্ষেত্রে টাইলস নয়, ব্যবহৃত হয় সিন্থেটিক পিভিসি প্ল্যাঙ্ক, যা এনে দেয় উডেন ফিনিশ। আবার ঘরের কোনও ছোট অংশে ইপক্সি রেজ়িন ফ্লোরিংয়ের কথা ভাবতে পারেন, একটা ট্রান্সপারেন্ট লুক আসবে সেখানে। যদিও এখানে এ ধরনের ফ্লোরিংয়ের চল ততটা প্রচলিত হয়নি এখনও। খরচও অনেক। সাধারণত কমার্শিয়াল স্পেসে এই ধরনের বিশেষ ফ্লোরিং চোখে পড়ে। তবে আপনার বাজেট অনুমতি দিলে ঘরের কোনও একটি অংশে এ ধরনের ফ্লোরিং করতে পারেন।
মেঝের দোসর যখন মার্বেল
মার্বেলের মেঝে যে কোনও ঘরেই এনে দেয় আলাদা আভিজাত্য। তবে অরিজিন্যাল ইতালিয়ান মার্বেল দিয়ে ফ্লোর ডিজ়াইন এখন দুর্লভ এবং অত্যন্ত ব্যয়বহুল। সাধারণত রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশের মতো রুক্ষ এলাকা থেকে আনানো মার্বেলের কোয়ালিটি, গ্রেনস, লুক সবই চলে ফ্লোরিংয়ের জন্য। মেঝেয় যত দামি মার্বেল লাগানো হবে, তা নিয়মিত পালিশ করিয়ে ঝকঝকে রাখা দরকার। শুরুতেই বেসিক ওয়্যাক্স পলিশিং করিয়ে নেন অনেকে। আবার কেউ কেউ চকচকে লুকের পরিবর্তে পছন্দ করেন আনপলিশড মার্বেলের রাগেড লুকই। শহরে বিভিন্ন মার্বেল পলিশিং সার্ভিস সেন্টার রয়েছে, যাঁরা বাজেট অনুযায়ী ফ্লোর পালিশ করে দেন।
টাইলসের সহজ বাছাই
নিয়মিত পরিষ্কার করার ক্ষেত্রেও টাইলস অনেক বেশি ব্যবহারের উপযোগী। দীর্ঘ দিন ব্যবহারের পরে মার্বেলের মতোই টাইলসের জয়েনিংও পাউডার দিয়ে স্মুদ করানো যায়। তবে সে ক্ষেত্রে মার্বেলের মতো ভারী মেশিনের প্রয়োজন পড়ে না। ইদানীং টেক্সচার্ড গ্রানাইটের বদলে অনেকে কোরিয়ান কিচেন টপ লাগান। ওয়াশ বেসিনের ক্ষেত্রেও তাই। তার সঙ্গে মানানসই টাইলস বেছে নিন। পা হড়কানো এড়াতে অ্যান্টি-স্কিড টাইলস লাগানো হয় বাথরুমের মেঝেয়। আবার এ ধরনের টাইলসে গ্রেনস থাকায় ময়লা জমার সম্ভাবনা বেশি। তাই নিয়মিত পরিষ্কার করা প্রয়োজন। তবে ফ্লোরে বেশি চকচকে টাইলস না লাগানোই বাঞ্ছনীয়। কারণ তাতে জল পড়লে অসম্ভব স্লিপারি হয়ে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে একটু দাম দিয়ে ম্যাট ফিনিশ টাইলস বেছে নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।
পোর্সেলিন, গ্লাস, সিমেন্ট, মোজ়াইক, লাইমস্টোন— টাইলসের অপশন অনেক। এখন মার্বেল ফিনিশড টাইলসের চাহিদা বেশি। নামী ব্র্যান্ডের ডিজ়াইনার টাইলস লাগাতে পারেন কোনও ঘরের দেওয়ালের বাছাই করা অংশে। বারান্দা বা ঘর লাগোয়া অন্যান্য খোলা অংশে একটু মজবুত, ভারী টাইলস লাগাতে পারেন। যাতে স্ক্র্যাচ কম লাগে। দাবার ছকের মতো সাদা-কালো খোপকাটা টাইলস দেখতে ভাল লাগে এ সব জায়গায়। আবার অনেকে পুরনো লাল মেঝের লুক ও ফিল পেতে লাল-কালো বর্ডার দেওয়া ডিজ়াইনও বেছে নেন।