Harmful Booklice

শখের ‘বই’ পোকার খাদ্য! কী ভাবে তাদের শায়েস্তা করে যত্নে রাখবেন গ্রন্থ সংগ্রহ

সংগ্রহে পুরনো বই থাকলে অনেক সময় সেটি খুললে দেখা যায়, পাতা কেটে, খেয়ে নষ্ট করেছে পোকা। অনেক পোকা চোখেও পড়ে না, অথচ বই নষ্ট করে অগোচরে। কী ভাবে গ্রন্থ সংগ্রহ বাঁচাবেন?

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০২৫ ১২:৪৮
Share:

পোকায় কেটেছে শখের বই? কী ভাবে বই বাঁচাবেন? ছবি: আনন্দবাজার ডট কম

আকারে খুদে। কোনওটিকে আবার খালি চোখে চট করে দেখাও যায় না। কিন্তু তাদের কাজের পরিধি দেখলে কান-মাথা ভোঁ ভোঁ করতেই পারে। গ্রন্থভান্ডার নষ্ট করার পক্ষে তাদের অতি ক্ষুদ্র আকৃতিই যথেষ্ট। এরা হল বইপোকা। ‘বইপোকা’-দের শত্রু।

Advertisement

অভিধানে ‘বইপোকা’র দুই অর্থ। এক, যে পতঙ্গ বা পোকামাকড় বইয়ের বাঁধানো বোর্ড, মলাট এবং পাতা খেয়ে ফাঁক করে দেয়। আর অন্য ‘বইপোকা’ হলেন যাঁরা বইপ্রেমী। শখ করে কেনা বই, দুষ্প্রাপ্য নথি যদি কেটে, নষ্ট করে খেয়ে ফাঁক করে দেয় পোকারা— তা হলে কার না মাথাগরম হয়? আরা যারা এই কাজটি করে তারা সংখ্যা বা প্রজাতি, কোনওটিতেই কম নয়। তাদের বই নষ্ট করার ধরনও বিচিত্র। উইপোকা থেকে ছোট আরশোলা, বুক লাইস, বিট্ল‌— এক এক জনের বই এবং পাতা নষ্ট করার ধরন-ধারণ এক এক রকম।

তাদের শায়েস্তা করার পন্থা আছে ঠিকই, তবে তার আগে জানা দরকার, জ্ঞানভান্ডারের এমন ক্ষতি করে চলেছে কারা? কী তাদের উদ্দেশ্য?

Advertisement

বুকলাইস: নামে লাইস হলেও এরা অবশ্য চুলে হওয়া উকুন নয়। এবং বই এদের প্রিয় খাবারও নয়। বইয়ের মলাট বা পাতায় যে ছত্রাকের আক্রমণ হয়, তারই লোভে তাদের আনাগোনা। আকারে ১ মিলিমিটারের চেয়েও ক্ষুদ্র, শরীর নরম। আসলে ঠান্ডা, স্যাঁতসেতে জায়গাই এদের পছন্দ। আলো-হাওয়া আসে না, ভিজে ভাব বেশি, এমন আবহে থাকলে বইয়ে এমন অনেক ছত্রাক হয়, যা সব সময় খালি চোখে দেখা যায় না। তবে তারই সন্ধানে জুটে যায় বুকলাইসের দল। বইয়ের বাঁধানো মলাট, আঠা এ সব এদের পছন্দের খাবার।

পোকা: বইয়ের ভান্ডার নষ্ট করে, এমন পোকার সংখ্যা নেহাত কম নয়। বড় পোকা, তাদের লার্ভারা পাতা নষ্ট করে দিনের পর দিন। কিছু পোকা বইয়ের খাঁজে, বাঁধানো মলাটের পাশে ডিম পাড়ে। তা ফুটে লার্ভা বেরোয়। এই ধরনের পোকার অসংখ্য প্রজাতি এবং ধরন আছে।

উইপোকা: বইয়ের জন্য খুব বিপজ্জনক এটি। কাঠের তাক, দরজা, আলমারিতে প্রথমে তারা হানা দেয়। তার পর ধীরে ধীরে সেই তাকে রাখা বইয়ে ঢুকে পড়ে। পাতা খেয়ে ফেলে। উইপোকার উৎপাত শুরু হলে বই বাঁচানো কঠিন।

পিঁপড়ে: জানলে অবাক হতে হয়, বই নষ্ট করার মতো কাজটি করে পিঁপড়েও। তবে যে ধরনের পিঁপড়ে সচরাচর আমরা দেখি, সেগুলি নয়। বিশেষ ধরনের কিছু পিঁপড়ে আছে যাদের পাতা খেয়ে ফেলার ধরন কিছুটা উইপোকার মতোই। এই তালিকায় পড়ে ‘ব্ল্যাক কার্পেন্টার অ্যান্ট’, ‘হারকিউলিস অ্যান্ট’।

মথ: কোনও কোনও প্রজাতির মথও বইয়ের পাতা নষ্ট করতে পারে। এরা মূলত বইয়ের বাঁধাই করা অংশ, পাতা যে জৈবিক পদার্থ দিয়ে তৈরি হয়, সেগুলি খায়।

খুদে আরশোলা: পুরনো বই ঘাঁটলেই মাঝেমধ্যে ভিতর থেকে খুদে আরশোলার আনাগোনা চোখে পড়ে। বইয়ের মধ্যে ডিমও দেখা যায় আরশোলার।

পোকাদের শায়েস্তা করার উপায়?

পরিবেশ: মূলত ভিজে, স্যাঁতসেঁতে পরিবেশেই থাকতে পছন্দ করে কিছু কিছু পোকা। সুতরাং এই পরিবেশটাই আগে দূর করতে হবে। শুকনো জায়গায় চট করে পোকার আক্রমণ হয় না। তাই যেখানে বই রাখছেন, সেই জায়গার দেওয়ালে কোনও ভিজে ভাব থাকছে কি না, দেখা দরকার।

ছত্রাক পরিষ্কার: বইয়ের মোল্ড বা ছত্রাকের লোভেই আসে পোকামাকড়। তাই বইগুলি যদি মাঝেমধ্যে রোদে রাখা যায়, পাতা পরিষ্কার করা যায় এবং মাঝেমধ্যে আলো-হাওয়া লাগে, তা হলে এই সমস্যা এড়ানো যেতে পারে। বাড়িতে গ্রন্থাগার বা প্রচুর বইয়ের সংগ্রহ থাকলে মাঝেমধ্যেই সেগুলি পরিষ্কার করা প্রয়োজন। ছত্রাক পরিষ্কারের জন্য বোরক্স পাউডার এবং বাজারচলতি রাসায়নিক ব্যবহার করা যেতে পারে।

আলো-হাওয়া: আর্দ্র পরিবেশ বা বা়ড়ির দেওয়ালে জল বসতে থাকলে সমস্যা বাড়ে। তা ছাড়া বদ্ধ ঘরেও এই ধরনের পোকামাকড়ের উৎপাত বাড়ে। তাই ঘরে যথেষ্ট আলো-হাওয়ার চলাচল প্রয়োজন। সমস্যা দূর করতে ডি-হিউমিডিফায়ার বা এসি লাগানো যেতে পারে। এতে কিছুটা হলেও স্যাঁতসেতে আবহ থেকে মুক্তি মিলবে।

সিলিকা জেল: বই রাখার আলমারিতে ন্যাপথলিন, সিলিকা জেল, বোরিক অ্যাসিড পাউডার ছড়িয়ে রাখতে পারেন। এতেও বইয়ের পোকা কিছুটা ঠেকানো সম্ভব। সিলিকা জেল কোনও জায়গায় রাখলে সেই স্থানের আর্দ্রতা টেনে নেয়। বিশেষত বর্ষার দিনে এটি ভিজে ভাব দূর করতে সাহায্য করে।

ফ্রিজে রাখুন: শুনতে অদ্ভুত, অবাস্তব লাগলেও পোকাযুক্ত বই ঝেড়ে নিয়ে প্যাকেটবন্দি করে বেশ কিছু ক্ষণ ফ্রিজে রাখলেও লাভ হতে পারে। ফ্রিজের তাপমাত্রায় পোকা বাঁচবে না।

পোকানাশক: ঘরে প্রচুর পরিমাণে বই থাকলে আর পোকার আক্রমণ বেশি হলে পেশাদার কারও সাহায্য নেওয়া যেতে পারে। রাসায়নিকের সাহায্যে পোকা দূর করাই হবে উপায়। তবে এ ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যের বিষয়টিও খেয়াল রাখা প্রয়োজন। বইয়ের রাসায়নিকের অংশবিশেষ লেগে থাকলে এবং হাতের মাধ্যমে তা চোখেমুখে গেলে শরীরের ক্ষতি হতে পারে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement