প্র: ইদানিং দেখছি ভীষণ চুল উঠছে। কিছুতেই চুল পড়া কমছে না। কী করব?
উ: দিনে একশোটা পর্যন্ত চুল পড়তেই পারে। তা নিয়ে অত চিন্তার কী আছে!
প্র: একশোটা চুল! গুনব কী করে?
উ: গুনতে হবে না। খেয়াল রাখুন সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর বালিশে চুল পড়ছে কি না। আঁচড়ালে চিরুনিতে মুঠো মুঠো চুল উঠছে কি না।
প্র: এ দিকে মাথার সামনেটা তো প্রায় ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে? কিছু উপায় বলুন।
উ: কেন চুল পড়ছে সেটা আগে দেখতে হবে। অনেক সময় চুল পড়ার পেছনে থাকে এখনকার জীবনযাপন পদ্ধতি। যেমন ধরুন, খুব বেশি স্ট্রেস চলছে। চুল পড়তে শুরু করল।
প্র: সে তো রোজকার স্ট্রেস আছেই...
উ: স্ট্রেস কমাতে হবে। দরকারে মেডিটেশন করুন। মোদ্দা কথা, চুল পড়ার কারণটা আগে ঠিক করতে হবে।
প্র: কারণ শুধু কি স্ট্রেস?
উ: পিরিয়ডের সমস্যা থাকলেও চুল পড়তে পারে। ব্লিডিং বেশি হলে শরীরে আয়রনের পরিমাণ কমে গিয়ে চুল পড়ে। এখন মেয়েদের প্রায়ই পলিসিস্টিক ওভারির সমস্যা দেখা যায়। তার জন্যও চুল পড়ে। ফাস্ট ফুড, তৈলাক্ত খাবার বেশি খাওয়ার জন্য ওজন বাড়ে। ওজন বাড়লে পলিসিস্টিক ওভারির সমস্যাও বাড়ে। মানে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে সেই লাইফস্টাইল।
প্র: সে তো বুঝলাম। কিন্তু চুল পড়া কমানোর জন্য কিছু বলুন।
উ: প্রোটিন বেশি করে খাবেন। খুশকি থাকলে চুলে তেল বা সিরাম জাতীয় কিছু লাগাবেন না। নিয়মিত শ্যাম্পু করবেন। কন্ডিশনার লাগাতে পারেন। তবে সামনের দিকের চুল বেশি পাতলা হতে থাকলে তাড়াতাড়ি ডাক্তার দেখাবেন। তা ছাড়া দরকার মতো লাইফস্টাইল বদলাতে হবে।
প্র: লাইফস্টাইলের জন্য এত সমস্যা?
উ: আজকাল প্রচুর হচ্ছে। খাওয়াদাওয়ার ধরনটাই যে বদলে গেছে। পাশাপাশি ব্যস্ততা আর মানসিক চাপ বাড়ছে। তার থেকেই হচ্ছে ত্বক আর চুলের সমস্যা। তা ছাড়া অনেক সময় প্রসাধন সামগ্রী থেকেও ত্বকের সমস্যা হতে পারে। বেশি বয়সে ব্রণ হয় এই কারণেই।
প্র: একটু খুলে বলুন...
উ: ধরুন তৈলাক্ত ত্বক। অথচ অয়েলি প্রসাধন সামগ্রী ব্যবহার করে চলেছেন। তার ওপর ফাস্টফুড খাওয়া হচ্ছে। এর থেকে আজকাল অ্যাডাল্ট অ্যাকনের সমস্যা খুব বেশি হচ্ছে। আবার আয়েশি জীবনযাপন, আর তৈলাক্ত খাবার বেশি খাওয়ার জন্য ওজন বাড়ছে। তার থেকেও পলিসিস্টিক ওভারির সমস্যা হচ্ছে। তার থেকে ব্রণর সমস্যা বাড়ছে।
প্র: কিন্তু কসমেটিক্স ব্যবহার তো করতেই হবে...
উ: অয়েল ফ্রি ময়েশ্চারাইজার আর ক্লেনজার ব্যবহার করবেন। ওষুধের দোকানে যে সব ময়েশ্চারাইজার ও ক্লেনজার পাওয়া যায়, সেগুলো ব্যবহার করতে পারেন। প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ মতো নিতে পারেন। আর বার বার ব্র্যান্ড পরিবর্তন করবেন না। যে ব্র্যান্ডের প্রসাধনে অভ্যস্ত, তাই-ই ব্যবহার করবেন। আর অন্যকে দেখে কোনও প্রসাধন সামগ্রী ব্যবহার করবেন না। হয়তো দেখলেন স্টেরয়েড জাতীয় কোনও ক্রিম মেখে কারও মুখে ঝকঝকে একটা ব্যাপার এসে গেছে। আপনিও লাগাতে শুরু করলেন। এই জাতীয় ক্রিম যেমন মুখে ঝকঝকে ভাব আনে, তেমনই ত্বকের বারোটা বাজায়। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কখনও স্টেরয়েড জাতীয় ক্রিম লাগাবেন না। প্রসাধন সামগ্রী থেকেও আর্টিকেরিয়া খুব হয়।
প্র: সেটা কী?
উ: এতে গা হাত-পা ফুলে যায়, চুলকায়, ঠোঁট ফুলে যায়, চোখের পাতা ফুলে যায়, শ্বাসকষ্ট হয়, পেট ব্যথা, বমি হতে পারে। ডিম আর চিংড়ি খেলে যে রকম অ্যালার্জি হয়, সে রকম। ফাস্টফুড বা রঙিন খাবার খেলেও এমনটা আকছার হয়। পেনকিলার খেয়েও হতে পারে।
প্র: কিন্তু ব্যথার জন্য পেনকিলার তো খেতে হতেই পারে?
উ: সেটা দরকার মতো ডাক্তার দেবেন। নিজে নিজে পেনকিলার খাবেন না।
প্র: সামান্য মাথাব্যথার জন্যও কি তবে ডাক্তার দেখাতে হবে?
উ: সে ক্ষেত্রে প্যারাসিটামল খান। এটা নিরাপদ। দরকার হলে বেশি মাত্রায়। কিন্তু অন্য কোনও ওষুধ খাবেন না।
প্র: খাবার থেকে যদি এ রকম হয়, তবে কী করব?
উ: অ্যান্টি অ্যালার্জিক ওষুধ খেতে হবে। তবে শরীরে খুব বেশি অসুবিধে হলে, যেমন ধরুন শ্বাসকষ্ট হল, সে ক্ষেত্রে তাড়াতাড়ি ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। বাইরের ফাস্টফুড, রঙিন খাবার বা প্যাকেট বন্দি খাবার খাবেন না।
প্র: সে তো মাঝেসাঝে খাওয়া হয়ে যায়।
উ: আসলে খাবারে যে সব রং বা প্রিজারভেটিভ মেশানো হয়, তার থেকেই হয় যাবতীয় সমস্যা। যেমন বিরিয়ানিতে জাফরানের পরিবর্তে রং মেশানো হয়। বিভিন্ন ধরনের সস বা রঙিন মিষ্টিতেও তাই। খাওয়ার সময় এগুলো মাথায় রাখবেন। চুল আর ত্বক দুয়ের জন্যই লাইফস্টাইল খুব গুরুত্বপূণর্। তাই ওটা দরকার মতো পরিবর্তন করতে হবে।
প্র: কী রকম?
উ: যেমন ধরুন ত্বকে সোরিয়াসিস নামে এক রকমের সমস্যা হয়। এতে শরীরের নানা জায়গায় চাকা চাকা লাল দাগ হয়ে থাকে। মাঝে মাঝে তার থেকে আঁশের মতো উঠতে পারে। অনেক ক্ষণ এসি-তে কাজ করার ফলে ত্বক শুকিয়ে গিয়ে এ ধরনের সমস্যা হতে পারে। বেশি ক্যালোরি যুক্ত খাবার বেশি খেলেও এমনটা হয়। আঁটোসাঁটো জুতো-মোজা পরার জন্য অনেকের পায়ে সোরিয়াসিস হয়। আবার একটানা টাইপ করতে করতে ঘর্ষণ থেকে আঙুলে সোরিয়াসিস হতে পারে। সমস্যা হল, সোরিয়াসিস হলে অনেকেই অবসাদে ভোগেন। সারতে সময় লাগে।
প্র: এর চিকিৎসা?
উ: প্রথমত, কেন হচ্ছে সেই কারণটা খুঁজে বের করতে হবে। পাশাপাশি, সমস্যার জায়গায় লাগানোর জন্যও ওষুধ দেওয়া হয়। তাতে না কমলে আলট্রা ভায়োলেট থেরাপি করতে হয়। সঙ্গে কড়া ওষুধ দেওয়া হয়।
প্র: ত্বককে ভাল রাখতে কী করব?
উ: স্ট্রেসকে দূরে রাখতে হবে। প্রয়োজনে স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট শিখতে হবে। আয়েসি জীবনযাপন ছাড়তে হবে। নিয়মিত ব্যায়াম দরকার। তৈলাক্ত খাবার, ফাস্টফুড যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে। ওজন বাড়তে দেবেন না।