অবশেষে জমি পেল প্রসূতি-শিশুদের বিশেষ ভবন

অবশেষে জমিসঙ্কট কাটতে চলেছে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আওতাধীন মাদার অ্যান্ড চাইল্ড হাবের। বেশ কয়েকমাস আগে জমি ঠিক করে ভবনের শিল্যানাস হওয়ার পরেও বিশ্ববিদ্যালয় ওই জমিটিকে নিজেদের জমি বলায় হাবের কাজ থমকে ছিল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বর্ধমান শেষ আপডেট: ০৪ অগস্ট ২০১৪ ০৩:১২
Share:

ঘুড়ির মাঠের এই জমিতেই হাব তৈরির কথা। নিজস্ব চিত্র।

অবশেষে জমিসঙ্কট কাটতে চলেছে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আওতাধীন মাদার অ্যান্ড চাইল্ড হাবের।

Advertisement

বেশ কয়েকমাস আগে জমি ঠিক করে ভবনের শিল্যানাস হওয়ার পরেও বিশ্ববিদ্যালয় ওই জমিটিকে নিজেদের জমি বলায় হাবের কাজ থমকে ছিল। তবে এ বার শহরের বাবুরবাগ এলাকায় ঘুড়ির মাঠে বিশ্ববিদ্যালয় ২.২০ একর জমি দিতে চলেছে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালকে। উপাচার্য স্মৃতিকুমার সরকার বলেন, “ওরা আমাদের কাছে ১.৫৪ একর জমি চেয়েছিলেন। আমরা তার চেয়ে বেশি জমি দিচ্ছি। ওই জমি মেডিক্যাল কলেজের লোকেরা ইতিমধ্যে পর্যবেক্ষণও করে গিয়েছেন। এখন দলিল তৈরির কাজটাই শুধু বাকি।”

কিন্তু প্রসূতি ও শিশুদের জন্য বিশেষ বিভাগ কেন? মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুপার তথা মেডিক্যাল কলেজের উপাধ্যক্ষ উৎপল দাঁ বলেন, “আমাদের হাসপাতালে প্রতিদিন প্রায় ৬৫-৭০ জন প্রসূতি সন্তানের জন্ম দেন। অনেক সদ্যোজাত শিশু জন্মের পরেই গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাদের প্রসূতি বিভাগ থেকে শিশু বিভাগে পাঠাতে অনেকটা সময় লেগে যায়। আবার অনেক ক্ষেত্রে শিশু বিভাগের চিকিৎসকদের সঙ্গে প্রসূতি বিভাগের চিকিৎসকদের সমন্বয়ের অভাবও দেখা দেয়। তাছাড়া আশপাশের মুর্শিদাবাদ, নদিয়া বীরভূম তো বটেই ঝাড়খণ্ড থেকে আসা রোগীদেরও চাপ থাকে। ফলে শিশুমৃত্যুর হার কমাতে একই ছাদের তলায় দুটি বিভাগকে রাখা প্রয়োজনীয় হয়ে উঠেছিল। তাই ওই হাবের পরিকল্পনা করা হয়।” সুপার জানান, হাসপাতালের শিশু বিভাগে ২১৫ টি শয্যা থাকলেও, সবসময়েই তার দ্বিগুন বা তিনগুন অসুস্থ শিশু এখানে ভর্তি থাকে।

Advertisement

বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওই মাদার অ্যান্ড চাইল্ড হাবের জন্য রাজ্য সরকার ইতিমধ্যে ২২ কোটিরও বেশি টাকা অনুমোদন করেছে। কিন্তু জমি না মেলায় এক টাকাও খরচ করতে পারেনি প্রশাসন বা মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ কেউই। গত ৯ জুলাই বর্ধমান সফরের সময় মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পেশ করা নথিতে জেলা প্রশাসনের তরফে একথা জানানোও হয়। ওই প্রকল্পে কাটোয়া, কালনা আসানসোল ও দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালের জন্যও কিছু উন্নয়নের কাজ হাতে নেওয়া হয়েছিল। কাটোয়ার জন্য প্রায় ২ কোটি টাকা অনুমোদিত হয়েছিল। তার মধ্যে ৯০ শতাংশ টাকা দিয়ে দেওয়াও হয়। কালনার ক্ষেত্রে বরাদ্দ ১ কোটি সাড়ে ৮৪ লক্ষ টাকার মধ্যে দেওয়া হয়েছিল প্রায় ৮০ লক্ষ টাকা। আসানসোলের জন্য বরাদ্দ টাকার সবটাই দিয়ে দেওয়া হয়। আর দুর্গাপুরের জন্য ধার্য ২ কোটি ৮৭ লক্ষ টাকার মধ্যে প্রায় ২ কোটি ৮৫ লক্ষ টাকা দিয়ে দেওয়া হয়। তার মধ্যে কোন খাতে কতটা খরচ হয়েছে তার খুঁটিনাটি হিসেব ওই নথিতে দেয় জেলা পরিষদ। একমাত্র বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে জমিজটের কারণেই অনুমোদিত টাকার কিছুই দেওয়া যায়নি।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রথমে বর্ধমান নার্সদের হস্টেলের উল্টোদিক ওই মাদার অ্যান্ড চাইল্ড হাব গড়ার কথা ছিল। বেশ কয়েকমাস আগে ওই জমিতে জেলার দুই মন্ত্রী মলয় ঘটক ও স্বপন দেবনাথ হাবের জন্য নির্মিত ভবনের শিলান্যাসও করেন। কিন্তু তারপরেই বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় জানিয়ে দেয়, ওই জমিটি তাদের। সেখানে তারা সুবর্ণজয়ন্তী ভবন তৈরি করবে। জমি নিয়ে টানাপড়েন শুরু হয়। জেতে বিশ্ববিদ্যালয়। সুবর্ণজয়ন্তী ভবনের কাজ শুরুও করে দেয় তারা। ফলে অনিশ্চিত হয়ে পড়ে হাবের কাজ। তারপর একাধিক বৈঠক, চিঠি চালাচালির পরে বিশ্ববিদ্যালয় বাবুরবাগ এলাকার ঘুড়ির মাঠের ওই জমিটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।

তবে খোদ উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি দানের কথা ঘোষণা করলেও বিষয়টি নিয়ে এখনও তেমন আশাবাদী নন বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষা মঞ্জুশ্রী রায়। তাঁর দাবি, “মাদার অ্যান্ড চাইল্ড হাবের জমি নিয়ে এতটাই গোলমাল হয়েছে, এত চিঠিপত্রের আদানপ্রদান হয়েছে যে আমি এখনই ওই ব্যাপারে আশা দেখতে পাচ্ছিনা। বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি চিঠি দিয়েছিলাম। ওরা তার উত্তরে জানিয়েছে, একটি জমি দেওয়া যেতে পারে। আমি ওদের ওই জমির স্কেচম্যাপ-সহ জমির হস্তান্তরের কথা লিখতে বলেছি। ওই জমি পুরোপুরি পাওয়ার পরেই মাদার অ্যান্ড চাইল্ড হাব নির্মাণ শুরু করতে পারব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন