মানকর গ্রামীণ হাসপাতাল। নিজস্ব চিত্র।
গ্রামের জনসংখ্যাই কুড়ি হাজার। আশপাশের এলাকায় বাস নিদেনপক্ষে আরও ৫০ হাজার মানুষের। অথচ রোগ-ব্যাধিতে ভরসা একটাই গ্রামীণ হাসপাতাল। আবার ওই হাসপাতালেও প্রায় সময়েই যথাযথ পরিষেবা মেলে না বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের। বুদবুদের গলসি ১ পঞ্চায়েতের সমিতির মানকর গ্রামীণ হাসপাতালের হাল এমনই। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, একে তো প্রয়োজনের তুলনায় চিকিৎসক কম, তার উপর সামান্য শরীর খারাপেই অন্য হাসপাতালে রেফার করে দেওয়া হয়। অবিলম্বে হাসপাতালটির খোলনলচে বদলে স্বাস্থ্য পরিষেবার মান উন্নয়নের দাবি করেছেন তাঁরা।
গলসি ১ ব্লক ছাড়াও আউশগ্রাম ১ ও ২, এমনকি কাঁকসার বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষ চিকিৎসার জন্য ওই গ্রামীন হাসপাতালটির উপর নির্ভরশীল। অথচ বেশ কয়েক বছর ধরেই হাসপাতালে ন্যূনতম পরিষেবা পাওয়া যাচ্ছে না বলে বাসিন্দাদের দাবি। এলাকার মানুষ জানান, মানকর, বুদবুদের মতো এলাকার সঙ্গে জঙ্গল ঘেঁষা এলাকার মানুষেরাও চিকিৎসার জন্য এই হাসপাতালে আসেন। অথচ অস্ত্রোপচার তো দূর, সামান্য জ্বর-জ্বালার ওষুধও সবসময় মেলে না। বাসিন্দাদের অভিযোগ, আগে এই হাসপাতালে বিভিন্ন রকম অস্ত্রোপচার করা হত। এখন সব বন্ধ হয়ে গিয়েছে। হাসপাতালের এমন অবস্থা যে সামান্য জ্বর নিয়ে এলেও রোগীকে অন্যত্র স্থানান্তর করা হচ্ছে। ফলে অনেকেই আর হাসপাতাল মুখো হতে চাইছেন না। হাসপাতালে চিকিৎসক না থাকায় আউটডোরে রোগীর সংখ্যাও দিন দিন কমছে বলে বাসিন্দাদের দাবি। তাঁরা জানান, আগে আউটডোরে ছ’শোরও বেশি রোগী আসত। এখন চিকিৎসক না থাকায় সেই সংখ্যা অনেকটাই কমে গিয়েছে। মানকর হাসপাতাল সূত্রেও জানা গিয়েছে, এই হাসপাতালে সাতটি স্থায়ী চিকিৎসকের পদ থাকলেও বর্তমানে হাসপাতাল সুপারকে নিয়ে মাত্র দুজন স্থায়ী চিকিৎসক আছেন।
মানকরের বাসিন্দা সুকুমার পাল জানান, মানকর ও তার আশপাশের এলাকার অর্থনৈতিক দিক থেকে পিছিয়ে পড়া মানুষগুলোর জন্য এই হাসপাতালটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ তাঁদের পক্ষে বাইরে কোথাও গিয়ে চিকিৎসা করানো ব্যয়সাপেক্ষ। এ অবস্থায় যদি হাসপাতালের পরিকাঠামোগত উন্নয়ন করা যায় তাহলে খুবই উপকার হয়। হাসপাতালে থাকা অ্যাম্বুল্যান্সটিও ঠিক মতো ব্যবহার করা হয় না বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁরা জানান, দরকারের সময় অ্যাম্বুলেন্স পাওয়া যায় না। চিকিৎসার জন্য অন্যত্র স্থানান্তর করা হলে নিজেদের টাকাতেই গাড়ি ভাড়া করতে হয়। স্থানীয় বাসিন্দা আনন্দগোপাল গোস্বামীরও দাবি, এই হাসপাতালে আসা রোগীদের সামান্য উপসর্গ দেখেই ব্লক হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। তিনি বলেন, “হাসপাতালের পরিষেবার উন্নতি না হলে আস্তে আস্তে রোগী আসা বন্ধ হয়ে যাবে। সামান্য জ্বর হলেও কেউ এখানে আসবেন না।”
হাসপাতালের অব্যবস্থা নিয়ে বিজেপির তরফেও মাসখানেক আগে হাসপাতাল সুপারের হাতে একটি স্মারকলিপি দেওয়া হয়। বিজেপি নেতা নরেশ কোনার অভিযোগ করেন, হাসপাতালে চিকিৎসক থেকে অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবা, কিছুই ঠিকমতো পাওয়া যায় না। অবিলম্বে এই হাসপাতালটির হাল ফিরিয়ে আনার দাবিও জানান তাঁরা। তবে এত অভিযোগের উত্তরে মানকর গ্রামীন হাসপাতালের সুপার অসিত সিংহের একটাই আশ্বাস, হাসপাতালের বিভিন্ন সমস্যার কথা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।