গরম পড়তেই বেড়েছে মশার দাপট

তাপমাত্রা বাড়তেই ফের বাড়ছে মশার প্রকোপ। সন্ধ্যার পর থেকেই ঝাঁকে ঝাঁকে ঘিরে ধরছে মশার দল। মশার উপদ্রবে সল্টলেক থেকে দমদম পার্ক, কেষ্টপুর-বাগুইহাটি থেকে নিউ টাউনের বিস্তীর্ণ এলাকায় জেরবার বাসিন্দারা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ মার্চ ২০১৪ ০৮:২৪
Share:

তাপমাত্রা বাড়তেই ফের বাড়ছে মশার প্রকোপ। সন্ধ্যার পর থেকেই ঝাঁকে ঝাঁকে ঘিরে ধরছে মশার দল। মশার উপদ্রবে সল্টলেক থেকে দমদম পার্ক, কেষ্টপুর-বাগুইহাটি থেকে নিউ টাউনের বিস্তীর্ণ এলাকায় জেরবার বাসিন্দারা।

Advertisement

কোথাও খালের উপরে ভাঙা সেতু জোড়া দেওয়ার কাজ চলছে, কোথাও আবার অন্য একটি খাল রুদ্ধ হয়ে রয়েছে। ফলে তৈরি হয়েছে মশার আঁতুড়ঘর। শুধু এই কারণেই নয়, শহরের বিভিন্ন জায়গায় ঝোপজঙ্গল পরিষ্কার হয়নি। এমন একাধিক কারণে ফের মশার প্রকোপ বেড়েছে সল্টলেক, নিউ টাউন, গোলাঘাটা, লেকটাউন, দমদম পার্ক-সহ বিধাননগর কমিশনারেটের ৯টি থানা এলাকায়। এমনটাই অভিযোগ বাসিন্দাদের।

সল্টলেক, দক্ষিণ দমদম, হিডকো কর্তৃপক্ষ কিংবা রাজারহাট-গোপালপুর পুরসভার অবশ্য দাবি, তাঁরা বছরভর মশা তাড়াতে বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়েছেন। মশার প্রকোপ বৃদ্ধির সমস্যা কার্যত স্বীকার করে তাঁদের বক্তব্য, তাঁরা ইতিমধ্যেই কাজ শুরু করেছেন। প্রশাসনের দাবি অবশ্য স্বীকার করেছেন বাসিন্দারা। বছরভর স্রেফ মশার তেল ছড়ানো, কামান দাগা, ব্লিচিং ছড়ানোই নয়, বাড়ি বাড়ি গিয়ে সচেতনতার প্রসারের পাশাপাশি তথ্য সংগ্রহের কাজ করা হচ্ছে বলেই দাবি প্রশাসনের।

Advertisement

তবে গরম পড়তে না পড়তেই মশার প্রকোপ বেড়েছে বলে বাসিন্দাদের অভিযোগ। তার প্রমাণ মিলেছে অজস্র। সন্ধ্যায় স্থানীয় পার্কে কিছুটা সময় কাটান প্রবীণ নাগরিকেরা। ইদানীং সন্ধ্যার পরে সেখানে বসার উপায় থাকছে না। তাঁদেরই এক জন বিমল সাহা বলেন, “যেখানেই বসছি, ছেঁকে ধরছে মশা। নাকে-মুখে ঢুকে যাচ্ছে। কবে যে এদের হাত থেকে রেহাই পাব, কে জানে?”

লেকটাউন থানা এলাকার দক্ষিণদাড়ির এক বাসিন্দা অনিন্দ্য বসু বলেন, “বাড়ির ছেলেমেয়েরা সন্ধ্যাবেলা মশারি টাঙিয়ে পড়তে বসছে। গরম পড়লে মশার দাপট এতটাই বাড়ে যে রাতের খাবার খেতেও হয় মশারির ভিতরে বসে।” কেষ্টপুর এলাকার এক আবাসনের বাসিন্দা রীতা বক্সী বলেন, “এমন মশা কামড়াচ্ছে যে ছেলেকে খেলতে পার্কে পাঠাচ্ছি না। গরম পড়তে না পড়তেই মশার রাজত্ব ফিরে এসেছে।”

সল্টলেকের ৩ নম্বর সেক্টরে ইস্টার্ন ড্রেনেজ চ্যানেলের পাড়ে নৈশ প্রহরায় ব্যস্ত ছিলেন একাধিক পুলিশকর্মী। পায়ের কাছে দেখা গেল দু’দুটো ডিমের ক্রেট। সেগুলি জ্বালিয়ে ডিউটি দিচ্ছেন। কারণ ওই ক্রেট জ্বালালে মশা অন্তত কিছুটা দূরে সরে যায়। তাঁদের বক্তব্য, কিছু দিন হল মশার দাপট খুব বেড়েছে।

সন্ধ্যা হলেই মশার প্রকোপ বাড়ায় ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েছেন সল্টলেকের কেষ্টপুর খাল সংলগ্ন ব্লকগুলি কিংবা শহরের অপর প্রান্তে রুদ্ধ হয়ে থাকা ইস্টার্ন ড্রেনেজ চ্যানেলের পাড়ে ব্লকগুলির বাসিন্দারা। তাঁদের একাংশের বক্তব্য, গরম পড়তে কিছুটা সময় আরও দেরি আছে। এখনই মশার এমন উপদ্রব যে, সন্ধ্যার পর থেকে জানলা খোলা যাচ্ছে না।

বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, সর্বত্র ঝোপ-জঙ্গল সাফ করা হয় না। উপরন্তু মশা তাড়াতে যে ওষুধ স্প্রে করা হয়, তাতেও কাজ হচ্ছে না। আবার মশার তেল সর্বত্র না স্প্রে করার অভিযোগও বাসিন্দাদের তরফ থেকে শোনা গিয়েছে।

যদিও সল্টলেক পুরসভার চেয়ারপার্সন কৃষ্ণা চক্রবর্তী বলেন, “মশার প্রকোপ কিছুটা বেড়েছে। কেষ্টপুর খালে জলের প্রবাহ কিছু দিন বন্ধ থাকায় সমস্যা হয়েছিল। ফের জল ছাড়া হয়েছে। ইতিমধ্যেই মশা কিছুটা কমেছে। বছরভর মশা তাড়াতে পুর ও মহকুমা প্রশাসন কাজ করে চলেছে। ফের আমরা বৈঠকে বসে পরবর্তী পরিকল্পনা নিচ্ছি। তা ছাড়া খাল সৌন্দর্যায়নের কাজ হয়ে গেলে মশার প্রকোপ আরও কমে যাবে।” কলকাতা পুরসভার পতঙ্গ বিশেষজ্ঞদের নিয়ে সোমবার একটি বৈঠক হয় বিধাননগর পুরসভায়। কী ভাবে মশা নিয়ন্ত্রণ করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয় এ দিন। পুরসভা সূত্রে খবর, যত দ্রুত সম্ভব মশার আঁতুরঘরগুলো চিহ্নিত করার কাজ শুরু হবে।

দক্ষিণ দমদম পুরসভার বেশ কিছু এলাকা বিশেষ করে দক্ষিণদাড়ি, দমদম পার্ক খাল সংলগ্ন অঞ্চলে মশার দাপট বেশি। প্রতি বছর ডেঙ্গি ও চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হন মানুষ। পুরসভার চেয়ারম্যান পারিষদ (জঞ্জাল) প্রবীর পালের দাবি, গত বছর নর্দমায় নিয়মিত তেল ছড়ানো ও সচেতনতা ক্যাম্প করার পর থেকে মশা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে এসেছে। তিনি বলেন, “২০১২ সালে দক্ষিণদাড়ি এলাকাতেই অনেকে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছিলেন। দু’জন মারাও গিয়েছিলেন। গত বছর নিয়মিত মশার তেল ছড়ানোয় ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণ করা গিয়েছে। এই বছর ইতিমধ্যেই তেল ও ব্লিচিং দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে।” দক্ষিণ দমদম পুরসভার চেয়ারপার্সন অঞ্জনা রক্ষিতের দাবি, শীঘ্রই শুরু হবে বাগজোলা ও কেষ্টপুর ক্যানেল সংস্কারের কাজ। সংস্কার শুরু হলেই এলাকায় মশার দাপট কমবে। তিনি বলেন, “শুধু পুরসভার উদ্যোগই নয়, সচেতন হতে হবে সাধারণ নাগরিকদেরও। তাই আমরা মার্চ মাসেই সচেতনতা বাড়ানোর জন্য পুর-এলাকায় কয়েকটা ক্যাম্প করব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন