পাঁচ জন চিকিত্সকের মধ্যে তিনজনকে অন্যত্র ডেপুটেশনে পাঠিয়ে দিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর। নেই কোনও বিশেষজ্ঞ চিকিত্সক। ঘাটতি রয়েছে ফার্মাটিস্ট, নার্স ও চতুর্থশ্রেণির কর্মীরও। এমন অবস্থায় স্বাস্থ্য পরিষেবা শিকেয় উঠতে বসেছে হাওড়ার পাঁচলা ব্লকের কুলাই গ্রামীণ হাসপাতালে। জেলা স্বাস্থ্য দফতর এই ব্লককে ‘অতি সংবেদনশীল’ (হাই রিস্ক) হিসাবে চিহ্নিত করা সত্ত্বেও উপযুক্ত চিকিত্সা পরিষেবা না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ এলাকার মানুষ।
হাসপাতাল ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পাঁচলা ব্লকের শুভআড়া, বনহরিশপুর, জুজারশা, গঙ্গাধরপুর, পাঁচলা, চড়া পাঁচলা-সহ আট থেকে দশটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার মানুষের ভরসা এই গ্রামীণ হাসপাতাল। প্রতিদিন শুধু বহির্বিভাগেই তিন থেকে চারশো রোগীর ভিড় থাকে। ৩০ শয্যার এই হাসপাতালে রোগীর চাপও রয়েছে যথেষ্ট। ফলে অনেকেই বাধ্য হয়ে ছুটছেন গাববেড়িয়া স্টেট হাসপাতাল বা উলুবেড়িয়া মহকুমা হাসপাতালে।
এক সময় এই ব্লকে পোলিও আক্রান্তের সন্ধান মিলেছিল। তারপরই এই ব্লককে ‘অতি সংবেদনশীল’ (হাই রিস্ক) হিসাবে চিহ্নিত করে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। এখানে পালস পোলিও নিয়ে অন্য জায়গার তুলনায় স্বাস্থ্য দফতরের প্রচারও যথেষ্ট বেশি বলে স্বাস্থ্য কর্মীদের দাবি। এই অবস্থায় গ্রামীণ হাসপাতালে চাপ থাকলেও সেই তুলনায় কর্মী না থাকায় পরিষেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে বলে স্বাস্থ্যকর্মীদের অভিযোগ।
বিএমওএইচ গৌতম পাইক বলেন, “চিকিত্সক থেকে নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীদের অভাব থাকায় খুবই সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। বিষয়টি জেলা স্বাস্থ্য দফতরকেও জানানো হয়েছে। জেলা স্বাস্থ্য দফতর দ্রুত সমস্যা মেটানোর আশ্বাস দিয়েছে।”
জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক দেবাশিস রায়ের বক্তব্য, “সরকারি নির্দেশের প্রেক্ষিতেই ওই গ্রামীণ হাসপাতাল থেকে চিকিত্সক তুলে নিয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এতে ওই গ্রামীণ হাসপাতালে যে সমস্যা হচ্ছে তা রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরে জানিয়েছি। স্বাস্থ্য দফতর থেকে চিকিত্সক নিয়োগ করলে ওখানে পাঠানো হবে।”
হাসপাতাল সূত্রের খবর, ৭-৮ মাস আগে তিনজন মেডিক্যাল অফিসারকে হাওড়া জেলা হাসপাতাল, উলুবেড়িয়া মহকুমা হাসপাতাল ও বাউড়িয়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে ডেপুটেশনে পাঠিয়ে দেয় স্বাস্থ্য দফতর। বর্তমানে হাসপাতালে চিকিত্সক বলতে বিএমওএইচ-সহ তিনজন মাত্র চিকিত্সক। যদিও থাকার কথা ৬ জনের। এই অবস্থায় রোগীর চাপ থাকায় তিনজন চিকিত্সকের পক্ষে তা সামাল দেওয়া যাচ্ছে না। কেবল চিকিত্সকই নয়, অভাব রয়েছে নার্স ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীরও। হাসপাতালে ১০ জন নার্সের প্রয়োজন হলেও আছেন মাত্র ৭ জন। ফামাটিস্ট আছেন একজন। দরকার আরও একজনের। চতুর্থশ্রেণির কর্মী যে সংখ্যায় রয়েছে তা প্রয়োজনের অর্ধেক, ১১ জন। সব মিলিয়ে উপযুক্ত লোকবলের কারণেই স্বাস্থ্য পরিষেবায় ব্যাঘাত ঘটছে বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য।