এনসেফ্যালাইটিস

চিকিৎসায় ত্রুটি ছিল না, কোর্টে দাবি সরকারের

সাম্প্রতিক এনসেফ্যালাইটিস পরিস্থিতির কথা সময়মতো স্বাস্থ্য ভবনে না-জানানোয় তিন স্বাস্থ্যকর্তাকে সাসপেন্ড করেছিল রাজ্য সরকার। কিন্তু বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্টে পেশ করা হলফনামায় সেই সরকারই দাবি করল, কিছু কিছু তথ্য দেরিতে এসেছে ঠিকই। তবে তাতে চিকিৎসার গাফিলতি হয়নি। স্বাস্থ্যকর্তাদের গোচরে বিষয়টি আসতেই সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ অগস্ট ২০১৪ ০২:০১
Share:

সাম্প্রতিক এনসেফ্যালাইটিস পরিস্থিতির কথা সময়মতো স্বাস্থ্য ভবনে না-জানানোয় তিন স্বাস্থ্যকর্তাকে সাসপেন্ড করেছিল রাজ্য সরকার। কিন্তু বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্টে পেশ করা হলফনামায় সেই সরকারই দাবি করল, কিছু কিছু তথ্য দেরিতে এসেছে ঠিকই। তবে তাতে চিকিৎসার গাফিলতি হয়নি। স্বাস্থ্যকর্তাদের গোচরে বিষয়টি আসতেই সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

Advertisement

প্রশ্ন উঠছে, তথ্য দেরিতে জানানোয় যথাসময়ে ঠিকঠাক চিকিৎসা দিতে যদি কোনও সমস্যা না-ই হয়ে থাকে, তা হলে কর্তাদের সাসপেন্ড করার মতো বড় পদক্ষেপ করা হল কেন? এর সরাসরি জবাব আপাতত মিলছে না। তবে সিপিএম প্রভাবিত চিকিৎসক সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব হেল্থ সার্ভিস ডক্টরস (এএইচএসডি)-এর সাধারণ সম্পাদক সত্যজিৎ চক্রবর্তী বলেন, “আমরা তো গোড়া থেকেই বলে আসছি, এটা অবিবেচনাপ্রসূত ‘সাসপেনশন’। আদালতে সরকার নিজেই এ বার সেটা স্বীকার করল।”

এনসেফ্যালাইটিস পরিস্থিতির মোকাবিলায় কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, সেই বিষয়ে রাজ্য সরকারকে হলফনামা দাখিলের নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট। অ্যাকিউট এনসেফ্যালাইটিক সিনড্রোম (এইএস), জাপানি এনসেফ্যালাইটিস (জেই)-এ শতাধিক মানুষের মৃত্যুর ঘটনায় রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ তুলে জনস্বার্থের মামলা দায়ের করেছে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। গত ১১ অগস্ট ওই মামলার শুনানির পরে হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি মঞ্জুলা চেল্লুর এবং বিচারপতি অসীম বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ ১০ দিনের মধ্যে সরকারকে হলফনামা পেশ করার নির্দেশ দেয়। এ দিন সেই হলফনামা দাখিল করে রাজ্য।

Advertisement

গাফিলতির অভিযোগ খণ্ডন করার জন্য পরিসংখ্যান ছাড়াও পাল্টা অভিযোগের পথ নিয়েছে সরকার। তাদের অভিযোগ, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে রাজ্যের ভূমিকাকে খাটো করে দেখানোর জন্যই এই মামলা করা হয়েছে। মৃত্যুহারের তুলনামূলক হিসেব দেখলেই সেটা বোঝা যাবে। সরকারের বক্তব্য, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১৫ অগস্ট পর্যন্ত জাপানি এনসেফ্যালাইটিসে আক্রান্ত হন ২৪০ জন। তাঁদের মধ্যে ৪৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এই রোগে আক্রান্তদের মধ্যে ২৫ শতাংশের মৃত্যু হয়। রাজ্যে কিন্তু সেই হার ১৮.৮ শতাংশ। এর থেকে কোনও ভাবেই চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ প্রমাণিত হয় না বলে হলফনামায় দাবি করেছে সরকার।

কী ভাবে যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা হয়েছে, তার সবিস্তার ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে হলফনামায়। তাতে স্বাস্থ্যকর্তারা জানান, এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে রোগীদের পাঠানোর সময় পথের ধকলে কয়েক জনের অবস্থার অবনতি হয়েছিল। সেটা এড়াতে জেলা স্তরেই যথাযথ চিকিৎসার পরিকাঠামো গড়ে তোলা হয়েছে। রোগ নির্ণয়ের জন্য উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ২৪ ঘণ্টাই ল্যাবরেটরি খোলা রয়েছে এবং বাড়তি নার্সও নিয়োগ করা হয়েছে বলে হলফনামায় স্বাস্থ্যকর্তাদের দাবি।

সরকার এনসেফ্যালাইটিসে মৃতের সংখ্যা কমিয়ে দেখাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। হলফনামায় স্বাস্থ্যকর্তারা জানান, এই অভিযোগ ভিত্তিহীন। জাপানি এনসেফ্যালাইটিস এবং অ্যাকিউট এনসেফ্যালাইটিক সিনড্রোম-এর ব্যাপারে রাজ্যের তরফে নিয়মিতই কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে পূর্ণাঙ্গ তথ্য পাঠাতে হয়।

মামলার আবেদনকারী স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের আইনজীবী উদয়শঙ্কর চট্টোপাধ্যায় এ দিন বলেন, “রাজ্য সরকারের পেশ করা হলফনামা যে ঠিক নয়, তা যথাসময়ে আদালতে জানানো হবে। প্রয়োজনে পাল্টা হলফনামা দাখিল করা হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন