চিকিৎসক নেই, ফার্মাসিস্টের ভরসায় চলছে গাংনাপুর স্বাস্থ্যকেন্দ্র

গাছ থেকে পড়ে গিয়ে মাথায় আঘাত লেগেছিল দয়াল দাসের। চিকিৎসার জন্য গাংনাপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এসেছিলেন তিনি। অসুস্থ মেয়েকে নিয়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এসেছিলেন পেশায় রাজমিস্ত্রি আনোয়ার হোসেনও। কিন্তু চিকিৎসকের দেখা পাননি কেউ। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের একজন ফার্মাসিস্টকে দেখিয়েই বাড়ি ফিরে যেতে হয়েছে তাঁদের। এক-দু’দিন নয়, চিকিৎসক না থাকায় নদিয়ার গাংনাপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে দীর্ঘ দিন ধরে রোগী দেখছেন ওই ফার্মাসিস্টই।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

রানাঘাট শেষ আপডেট: ০৫ জুলাই ২০১৪ ০২:৩১
Share:

গাছ থেকে পড়ে গিয়ে মাথায় আঘাত লেগেছিল দয়াল দাসের। চিকিৎসার জন্য গাংনাপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এসেছিলেন তিনি। অসুস্থ মেয়েকে নিয়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এসেছিলেন পেশায় রাজমিস্ত্রি আনোয়ার হোসেনও। কিন্তু চিকিৎসকের দেখা পাননি কেউ। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের একজন ফার্মাসিস্টকে দেখিয়েই বাড়ি ফিরে যেতে হয়েছে তাঁদের। এক-দু’দিন নয়, চিকিৎসক না থাকায় নদিয়ার গাংনাপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে দীর্ঘ দিন ধরে রোগী দেখছেন ওই ফার্মাসিস্টই।

Advertisement

অথচ, স্থানীয় দেবগ্রাম পঞ্চায়েত ছাড়াও আশপাশের আরও তিন-তিনটি গ্রাম পঞ্চায়েতের লক্ষাধিক মানুষের ভরসা গাংনাপুর স্বাস্থ্যকেন্দ্র। কাছাকাছি হাসপাতাল বলতে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে রানাঘাট মহকুমার হাসপাতাল বা প্রায় ১৭ কিলোমিটার দূরে চাকদহ স্টেট জেনারেল হাসপাতাল। আবার অনেক সময়ই রোগী নিয়ে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরে কল্যাণী জওহরলাল নেহেরু মেমোরিয়াল হাসপাতালে দৌড়তে হয়।

কাছে-পিঠে কোনও হাসপাতাল না থাকায় স্থানীয় বাসিন্দারা দান করেছিলেন ছ’বিঘা জমি। সেখানেই গড়ে উঠেছিল গাংনাপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র। শুরুর দিকে পরিকাঠামো এবং পরিষেবা বেশ উন্নত ছিল বলেই জানিয়েছেন স্থানীয়রা। কিন্তু গত কুড়ি বছরে ক্রমশ বেহাল হয়েছে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পরিস্থিতি। চিকিৎসকের দেখা মেলে না নিয়মিত। ভরসা বলতে এক ফামার্সিস্ট বিশ্বনাথ দাস। তাঁর উপর নির্ভর করেই চলছে স্বাস্থ্যকেন্দ্র। তিনিই এখন স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সব রোগী দেখছেন, রোগীদের পরীক্ষা করাতে বলছেন, ক্ষতস্থানে ব্যান্ডেজ লাগানোর জন্য নার্সদের নিদের্শ দিচ্ছেন। তাঁর কথায়, “ডাক্তার না থাকার বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছি। রোগীরা চিকিৎসার জন্য এসেও ফিরে যাবে এই ভেবে তাঁদের সেরে ওঠার জন্য যতটা সম্ভব পরিষেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি।”

Advertisement

প্রায় অর্ধ শতাব্দী আগে কিন্তু এখানেই ছিল চিকিৎসক, নার্স ও কর্মীদের জন্য আবাসন। সব সময় চিকিৎসক থাকতেন। ছোটখাটো অস্ত্রোপচারও হয়েছে। প্রসূতি ভর্তি রেখে চিকিৎসাও হত আগে। কিন্তু বছর কুড়ি ধরে আর সেই পরিষেবা পাওয়া যায় না। আসেন না চিকিৎসক, পাওয়া যায় না ওষুধপত্র। সংরক্ষণের অভাবে আবাসনগুলোও বসবাসের অযোগ্য হয়ে গিয়েছিল।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র বাঁচানোর তাগিদে এলাকার মানুষই গাংনাপুর হাসপাতাল উন্নয়ন কমিটি নামে একটি সংগঠন তৈরি করেন। সংগঠনের সহ-সভাপতি শচীন ঘোষাল বলেন, “হাসপাতালের হাল ফেরানোর জন্য তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী সূর্যকান্ত মিশ্রের কাছে দরবার করেছিলাম। আন্দোলনের চাপে এখানে দশ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল হবে বলে স্বাস্থ্য দফতর ১ কোটি ৮ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করেছিল।” জানা গিয়েছে সেই টাকায় একটি চিকিৎসক আবাসন এবং নার্সদের জন্য দু’টি নতুন আবাসন তৈরি করা হয়েছে। এছাড়াও চিকিৎসকদের জন্য বানানো পুরনো আবাসনটিও সংস্কার করা হয়। সংস্কার করা হয়েছে পুরুষ ও মহিলা রোগীদের থাকার ঘরগুলিও। শচীনবাবুর আক্ষেপ, “এসব কাজ বছর দেড়েক আগে শেষ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু চালু করা হয়নি। এমনকী যে একজন চিকিৎসক মাঝে-মধ্যে আসতেন, তিনিও আসা বন্ধ করে দিয়েছেন। স্বাস্থ্য দফতরের বিভিন্ন আধিকারিকদের জানিয়েও কোন কাজ হচ্ছে না।”

সমস্যার কথা স্বীকার করেছেন জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অধীপ ঘোষ। তিনি বলেন, ‘‘স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি ভাল ভাবে চালানোর জন্য স্বাস্থ্য দফতরের কাছে লিখিত প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। খুব তাড়াতাড়ি একজন চিকিৎসক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পাঠানো হবে।” সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য পবিত্র সমাদ্দার বলেন, “আমরা ক্ষমতায় থাকা কালে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের হাল ফেরানোর জন্য টাকা বরাদ্দ হয়েছিল। তৃণমূল ক্ষমতায় এসে হাতে বরাদ্দ টাকা পেয়েও কাজের কাজ কিছুই করেনি। মানুষ কোনও পরিষেবা পাচ্ছেন না।” স্বাস্থ্যকেন্দ্রের গুরুত্বের কথা স্বীকার করে নিয়ে স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক আবীররঞ্জন বিশ্বাসের আশ্বাস, “খুব তাড়াতাড়ি ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসক দেওয়ার চেষ্টা চলছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন