এনসেফ্যালাইটিস কাণ্ড

চার্জশিটে থাকছেই না তথ্য গোপনের অভিযোগ

এনসেফ্যালাইটিস পরিস্থিতি নিয়ে তথ্য গোপনের অভিযোগ ছিল তাঁদের বিরুদ্ধে। সে কারণেই সাসপেন্ড হয়েছিলেন উত্তরবঙ্গের চার স্বাস্থ্যকর্তা। কিন্তু এখন তাঁদের বিরুদ্ধে চার্জশিট তৈরির সময় সে অভিযোগই চেপে যাচ্ছে স্বাস্থ্য ভবন। বদলে গুরুত্ব পাচ্ছে গুরুতর পরিস্থিতিতে রোগ মোকাবিলায় উপযুক্ত পরিকাঠামো তৈরি না করার অভিযোগ।

Advertisement

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০১:৩০
Share:

এনসেফ্যালাইটিস পরিস্থিতি নিয়ে তথ্য গোপনের অভিযোগ ছিল তাঁদের বিরুদ্ধে। সে কারণেই সাসপেন্ড হয়েছিলেন উত্তরবঙ্গের চার স্বাস্থ্যকর্তা। কিন্তু এখন তাঁদের বিরুদ্ধে চার্জশিট তৈরির সময় সে অভিযোগই চেপে যাচ্ছে স্বাস্থ্য ভবন। বদলে গুরুত্ব পাচ্ছে গুরুতর পরিস্থিতিতে রোগ মোকাবিলায় উপযুক্ত পরিকাঠামো তৈরি না করার অভিযোগ। স্বাস্থ্যভবনের একাংশের ধারণা, প্রথমে তথ্য গোপনের অভিযোগ আনলেও এখন দেখা যাচ্ছে জানুয়ারি থেকে নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে রিপোর্ট পাঠিয়েছিল উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ। ফলে ওই স্বাস্থ্যকর্তাদের বিরুদ্ধে তথ্য গোপনের অভিযোগ আর ধোপে টিকছে না।

Advertisement

মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নবান্নে জানিয়েছিলেন, তথ্য গোপনের অভিযোগে সাসপেন্ড করা হচ্ছে ৪ কর্তাকে। আগামী সপ্তাহে তাঁদের বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা পড়ার কথা। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে এনসেফ্যালাইটিস ও জেই নিয়ে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল থেকে পাওয়া রিপোর্ট দেখে স্বাস্থ্যভবনের কর্তারা বুঝেছেন, তথ্য পাঠানোয় কোনও গাফিলতি ছিল না।


সবিস্তার দেখতে ক্লিক করুন...

Advertisement

উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল জানুয়ারি থেকে স্বাস্থ্যভবনে যে সব সাপ্তাহিক রিপোর্ট পাঠিয়েছিল, তাতেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে, ‘অ্যাকিউট এনসেফ্যালাইটিক সিনড্রোম’ (এইএস)-এ আক্রান্তের হার বাড়ছে। তবে ৬ জুলাই পর্যন্ত জেইতে আক্রান্তের হার বা মৃতের সংখ্যা বাড়েনি। রিপোর্টে আরও দেখা গিয়েছে, ৭ জুলাইয়ের পর আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বেড়েছে। ৮ জুলাই থেকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল থেকে সাপ্তাহিকের বদলে দৈনিক রিপোর্ট এসেছে স্বাস্থ্য দফতরের ‘ইন্টিগ্রেটেড ডিজিজ সার্ভিলেন্স প্রোগ্রাম সেল’ (আইডিএসপি সেল)-এ।

এ তথ্য জানার পর স্বাস্থ্য দফতরের মধ্যেই কিছু প্রশ্ন উঠছে। প্রথমত, এই রিপোর্ট পেয়ে দফতরের শীর্ষকর্তাদের কাছে জরুরি ভিত্তিতে তা জানানোর দায়িত্ব ছিল সেল-এর কর্তাদের। কিন্তু তা তাঁরা করেননি। তা হলে কি সেল-এর কর্তাদের বিরুদ্ধেও তথ্য গোপনের অভিযোগ ওঠে না? দ্বিতীয়ত, ওই রিপোর্ট নিয়মিত উত্তরবঙ্গের সব জেলায় মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তা ও উপমুখ্য স্বাস্থ্যঅধিকর্তা-২ এর কাছে গিয়েছে। কিন্তু সাসপেন্ড হয়েছেন শুধু দার্জিলিং ও জলপাইগুড়ি জেলার দুই মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তা। তা হলে তো উত্তরঙ্গের বাকি জেলাগুলির স্বাস্থ্যকর্তাদেরও শাস্তির আওতায় আনতে হয়। কিন্তু সেটা স্বাস্থ্য দফতর চাইছে না।

উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ থেকে স্বাস্থ্যভবনের আইডিএসপি সেলে জানুয়ারি থেকে এনসেফ্যালাইটিস ও জেই সংক্রান্ত যে তথ্য পাঠানো হয়েছে সেই সব আনন্দবাজারের হাতে আসার পর স্বাস্থ্যসচিব মলয় দে-র কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, এর পরেও তথ্য গোপনের অভিযোগ বজায় থাকছে কী করে? মলয়বাবু উত্তর দেন, “কোনও তথ্য গোপনের অভিযোগ চার্জশিটে রাখা হচ্ছে না। অন্য বহু গাফিলতি ছিল। সব জানতে পারবেন।”

স্বাস্থ্য-অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথীর কথায়, “পরিস্থিতি সম্পর্কে কর্তাদের যতটা গুরুত্ব দেওয়ার কথা ছিল তা দেননি, ফোন করে পরিস্থিতির গুরুত্ব ব্যাখ্যা করেননি, উত্তরবঙ্গের প্রতিটি জেলার আলাদা রিপোর্ট পাঠাননি। বাদবাকি যে তথ্য পাঠানোর কথা বলা হচ্ছে সে সব তাঁরা আত্মপক্ষ সমর্থনের সময় পেশ করতে পারেন। আমরা দেখব।” স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়ের উক্তি, “উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ থেকে তথ্য পাঠানো হয়েছে না হয়নি, তা তর্কের বিষয়। অন্য অনেক অন্যায় করেছিলেন তাঁরা। উত্তরবঙ্গে গিয়ে দেখেছি, চিকিৎসা পরিষেবার পরিকাঠামোর শোচনীয় হাল করে রেখেছিলেন ওই কর্তারা।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন